বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকে ‘অমানবিক’ বলে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা বাচ্চা ছেলে, ২১ বছর বয়স। তাকে কী অমানবিকভাবে হত্যা করেছে। পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেছে। তাদের কঠিনতম শাস্তি হবে।
বুধবার নিজের যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সফর নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। বেলা সাড়ে তিনটায় গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তার দুই সফরের বিষয়ে কথা বলা শুরু করেন। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি কোনো অপরাধ করে, সে কোন দল, কী করে না করে, আমি কিন্তু সেটা দেখি না। আমার কাছে অপরাধী অপরাধীই। আমরা অপরাধী হিসেবেই দেখি।’
রোববার সন্ধ্যায় বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ডেকে নিয়ে যায় হলের কিছু ছাত্রলীগ নেতা। শিবির সন্দেহে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতনের এক পর্যায়ে গভীর রাতে হলেই তার মৃত্যু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ নৃসংসতা কেন? এই জঘন্য কাজ কেন? এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। যতরকমের উচ্চ শাস্তি আছে সেটা দেয়া হবে। কোনো সন্দেহ নেই। দল-টল বুঝি না। অপরাধের বিচার হবেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ঘটনার পরই ছাত্রলীগকে বলেছি অভিযুক্তদের বহিষ্কার করতে। তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। পুলিশকে বলেছি অপরাধীদের ধরতে। অনেকেই ধরা পড়েছে। ছাত্ররা নামার আগেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
আবরার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাধারণ পরিবারের ছেলে, এত ব্রিলিয়ান্ট একটা ছেলে। তার মায়ের কষ্ট আমি বুঝি। বাবার কষ্ট বুঝি। কারণ, আমিও হত্যার বিচার চেয়ে পাইনি। মা–বাবার হত্যার পর ৩৮ বছর আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে ছাত্রদল কে ছাত্রলীগ—এ বিবেচনা করব না।’
ওই ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই ১৩ জনসহ মোট ১৯ জনের নামে চকবাজার থানায় মামলা করেছেন আবরারের বাবা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে, সকালে জানার পরই পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু শুনলাম, পুলিশকে ফুটেজ নিয়ে আসতে দেয়া হবে না। তখন প্রশ্ন হলো, ব্যাপারটি কী? পুলিশের আইজিপিও বললেন, পুলিশকে ফুটেজ আনতে দিচ্ছে না। ঘিরে রেখেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফুটেজগুলো আনতে দেবে না কেন? তারা বলছে, ফুটেজগুলো পুলিশ নষ্ট করবে। পুলিশ গেছে আলামত সংগ্রহ করতে। ডেডবডির যাতে পোস্টমর্টেম হয়, সে ব্যবস্থা করা হল। ছাত্ররা নামার আগেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া। কোন রুম, কোথায়, কারা ছিল যেটাকে পারো সবকটাকে ধরে অ্যারেস্ট করো। যে কটাকে হাতে পেয়েছি সবগুলোকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ফুটেজটা হাতে পাওয়ার জন্য তিনটি ঘণ্টা সময় নষ্ট করল কেন?
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বুয়েট চাইলে নিষিদ্ধ করতে পারে। তাদের সিনেট আছে, এটা করতে পারে। তবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিতে হবে, এটা স্বৈরাচারদের কথা। আমি নিজে ছাত্ররাজনীতি করে উঠে এসেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বুয়েটে আমাদের একাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে, নিহত হয়েছে। কয়টার বিচার হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম সম্মেলনে যোগ দিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর আট দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্র যান। সেখান থেকে দেশে ফিরে আবার চার দিনের সফরে ভারত যান। ৩ থেকে ৬ অক্টোবর তিনি ভারত সফর করেন।
টাইমস/এসআই