‘শোলাকিয়া ময়দান’! এই নামটি শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে ঈদের জামাতের এক অভুতপূর্ব ছবি। প্রায় পৌনে তিনশ বছর ধরে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু এবছর সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে ‘করোনাভাইরাস’।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এবার শোলাকিয়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। শোলাকিয়া ময়দান ছিল একেবারে অচেনা। হাতে গোনা কয়েকজন মুসল্লির অংশ গ্রহণে ঈদের জামাত হলেও পুরো ময়দান জুড়ে ছিল এক নিস্তব্ধতা। যা এর আগে কেউ কখনো দেখেনি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছর ঈদের জামাতের প্রস্তুতি হিসেবে শোলাকিয়া ময়দানে আগে থেকেই জমজমাট ভাব বিরাজ করত। ঈদগাহ প্রস্তুত করতে প্রশাসনের কর্মযজ্ঞ চলতো মাসব্যাপী। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এবছর এ ময়দান ফাঁকা।
আগে এ ময়দানে ঈদের জামাতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলামনরা কয়েকদিন পূর্বে থেকে শোলাকিয়ায় অবস্থান করতেন। ঈদের জামাতে অংশ নেয়ার পর তারা বাড়ি ফিরতেন। এবছর সব চিত্র পাল্টে গেছে। এবছর এক ব্যতিক্রমী শোলাকিয়া আবিষ্কার করা হল।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে এবারই প্রথম শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত হয়নি। ঈদ ঘিরে ঈদগাহ ময়দান ও আশপাশে ছিল না সংস্কার আর শোভাবর্ধনের চাকচিক্য। বরং নিরানন্দ আর মলিনতা নিয়েই এই প্রথম ঈদুল ফিতর পার করল শোলাকিয়া ময়দান।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, এই প্রথমবারের মতো শোলাকিয়া ময়দানে ঈদের দিনে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। লোক সমাগম এড়াতে শোলাকিয়া ময়দানের সবকটি গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এমনকি শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের মসজিদটিও তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯২ বছর আগে শোলাকিয়ায় প্রথম ঈদের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরও দুশো বছর আগে থেকে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে দেশ-বিদেশের তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মুসল্লি একসঙ্গে শোলাকিয়ার বিশাল প্রান্তরে নামাজ আদায় করেন।
বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম প্রতাপশালী বীর ঈশা খাঁর ১৬তম বংশধর দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহটি ওয়াকফ্ করেন। তারও দুশো বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে উল্লেখ আছে ওই ওয়াকফ দলিলে। ১৮২৮ সালে ঈদুল ফিতরের বড় জামাতে এ মাঠে প্রথম ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত।
টাইমস/এসএন