সাবেক অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে 'স্ট্যাটাস' ভাইরাল: যা বললেন ব্যক্তিগত সহকারী

সম্প্রতি সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়েছে। স্ট্যাটাসটি লিখেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী। সেখানে ফজলুল বারী উল্লেখ করেছেন যে, মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর সরকারী বাসভবন ছেড়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী তার বনানীর বাসায় উঠতে গেলে তার ছেলে সাহেদ তাকে সেখানে উঠতে বাধা দেয়। পরে একজন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তার সহায়তায় তিনি তার নিজের বাসায় উঠতে সক্ষম হন।

স্ট্যাটাসটি প্রকাশের পর থেকে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা।

এই বিষয়টি নিয়ে এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুখ খুলেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রীর সাবেক সরকারি এপিএস তানভীর বাশার। সাংবাদিক ফজলুল বারীর স্ট্যাটাসটিকে তিনি নাটকীয় ঘটনা গল্প বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ টাইমস-এর পাঠকদের জন্য তানভীর বাশারের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল।

তানভীর বাশার তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‍‍‍‍“আমি গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত অনেকের থেকে একটি লেখার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্ন ও মন্তব্য পাচ্ছি। লেখাটি জনৈক ফজলুল বারী সাহেব সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত স্যার ও স্যারের বড় ছেলে সাহেদ ভাইকে নিয়ে লিখেছেন। আমি যেহেতু মুহিত স্যারের সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দীর্ঘদিন নিয়োজিত ছিলাম, স্বভাবতই আমার পরিচিত অনেকেই ব্যাপারটির সত্যতা জানতে চেয়েছেন। জনাব ফজলুল বারী উনার লেখার শেষদিকে যে নাটকীয় ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন, সেসময় আমি বিদেশে অবস্থান করায় এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করব না। আশা করি লেখক সাহেব ১২,০০০ কিলোমিটার দূরে বসে শুধুই তৃতীয় মাধ্যম হতে তথ্য পেয়ে এত নাটকীয় ঘটনা লিখার যোগ্যতা রাখেন।

আমি ২০১৩ সালে মুহিত স্যারের সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই সাহেদ ভাইকে চিনি। উনি যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক শেষ করে নিউইয়র্ক শহরে কর্মরত ছিলেন। মুহিত স্যার রাজনীতিতে যোগদান করার পর সাহেদ ভাই দেশে ফিরে আসেন বাবাকে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে। আমি সাহেদ ভাইয়ের সাথে দেশে-বিদেশে বহু জায়গায় সফর করেছি। উনি স্যারের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো দেখতেন। তখনি দেখেছি উনি কিভাবে বাবার যত্ন নিতেন। একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছেলে হিসাবে ওনার মাঝে কোনরকম অহংকার দেখিনি। সাহেদ ভাই কোনদিন দাপ্তরিক কোন কাজে হস্তক্ষেপও করেননি বরং আমরাই মাঝেমাঝে বিভিন্ন বিষয়ে ওনার সহযোগিতা নিতাম। উনি স্যারের সাথে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে থাকতেন। স্যারের বনানীর বাসা ১০ বছর খালি ছিল।

সাহেদ ভাই বনানীর বাসভবনে থাকতেন, এই তথ্য বারী সাহেব কোথা থেকে পেলেন আমি বুঝতে পারছি না। তিনি আরও বলেছেন, সাহেদ ভাই নাকি বেশ অর্থ করেছেন। যদি তাই হয় তবে উনি বনানীতে অনেক বাড়ি কিনতে পারতেন, বাবার বাসায় থাকার প্রয়োজন হত না বা স্যারের জন্য বাসা ভাড়া করার দরকার হতো না।

রাজনীতিবিদ বা সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে খুব সহজেই দুর্নীতির অভিযোগ তোলা যায়, মানুষ তা বিশ্বাসও করে কিন্তু কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়া এসব অভিযোগ করা অসভ্যতার পর্যায়ে পড়ে এটা হয়ত অস্ট্রেলিয়ার মতো সভ্য দেশে থেকেও বারী সাহেব এখনও শিখতে পারেননি। নিজে না জেনে এবং অনুমতি না নিয়ে কারও পারিবারিক বিষয় নিয়ে মিথ্যা লিখাও যে অন্যায় সেটা বোঝার ক্ষমতাও ওনার নেই। বনানীর বাড়ি নিয়ে আমি যতটুকু জানি দীর্ঘ ১০ বছর সেখানে কেউ অবস্থান না করায় মোটামুটি বসবাসের অনুপযুক্ত ছিল। সাহেদ ভাই চেয়েছিলেন সেটি কিছুটা বসবাসের উপযোগী করে তুলতে। এছাড়াও বয়সের কারণে স্যারের সিড়ি বেয়ে উঠা-নামা করতে সমস্যা হবার কারণে সাহেদ ভাই চেয়েছিলেন স্যার যেন নিচতলায় থাকেন। এ নিয়ে অবশ্য সাহেদ ভাইয়ের সাথে স্যারের মতভেদ ছিল কিন্তু সেটা কোনভাবেই ‘বাসায় ঢুকতে না দেবার’ মতো নয়। আর বাবা-ছেলের মধ্যে মতভেদ সব পরিবারেই হয়ে থাকে, কিন্তু সেটা নিয়ে কুরুচিকর গল্প ফাঁদা বিকৃত মানসিকতার লক্ষণ। আমি গতবছর ২ বার দেশে গিয়ে স্যারের বনানীর বাসায় দেখা করেছি এবং সেখানে বরাবরের মতোই আনন্দময় পারিবারিক পরিবেশ দেখেছি। স্যার তার দুই নাতনী ও লেখালেখি নিয়ে ভাল আছেন।

বাবা দিবসের লেখা হতে পারত সাহেদ ভাইয়ের উনার বাবার প্রতি ভালবাসা নিয়ে, কিন্তু বারী সাহেব সস্তা জনপ্রিয়তা পাবার উদ্দেশ্য নিয়ে যা লিখলেন তা আবর্জনায় স্থান পাবারও যোগ্য না, তিনি শুধু মুহিত স্যারের পরিবারকেই অপমান করেননি, যারা তার লেখা পড়ছে সবার সাথে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণা করেছেন।

পরিশেষে জানতে পারলাম বারী সাহেব অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থান করছেন। সময় করে একদিন উনার সাথে দেখা করে কাল্পনিক রোমাঞ্চকর উপন্যাস লিখার কলাকৌশল সম্পর্কে জানার ইচ্ছে আছে।”

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img

গোলাম মাওলা রনি

সরকার এখন কোনো অবস্থাতেই ঝুঁকিতে যাবে না Nov 13, 2025
img
চুয়াডাঙ্গায় সাবেক মেয়র টোটন গ্রেপ্তার Nov 13, 2025
img
মানিকগঞ্জে গ্রেপ্তার হলেন আ.লীগ নেত্রী জেসমিন Nov 13, 2025
img
ঐক্যবদ্ধ জাতির সামনে নৈরাজ্যের জায়গা নেই : চিফ প্রসিকিউটর Nov 13, 2025
img
যশোরে পার্কিং করা বাসে দুর্বৃত্তদের আগুন Nov 13, 2025
img
বিলাল-হানিয়া অভিনীত নাটকের প্রথম পর্ব দেখে দর্শকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া Nov 13, 2025
img
আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারার সংস্কৃতি আওয়ামী লীগের: রিজভী Nov 13, 2025
img
নারায়ণগঞ্জে ১২ ঘণ্টায় ২৭ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Nov 13, 2025
img
আগামীর যুদ্ধক্ষেত্র হবে মহাকাশ: ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ Nov 13, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ শুরু হবে দুপুর আড়াইটায় Nov 13, 2025
img
গুরুত্বপূর্ণ দুই অধ্যাদেশ সংশোধন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বিমান উপদেষ্টা Nov 13, 2025
img
হার্টের জটিলতায় হাসপাতালে ভর্তির পর কেমন আছেন অস্কার Nov 13, 2025
img
সোনা হারিয়ে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশের দুই আরচ্যার Nov 13, 2025
img
গোপালগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকে দুর্বৃত্তদের হামলা Nov 13, 2025
img

আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’

সচিবালয়ে চলছে স্বাভাবিক কাজ Nov 13, 2025
img
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ ঘিরে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কম Nov 13, 2025
img
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন Nov 13, 2025
img
চট্টগ্রামে মোড়ে মোড়ে অবস্থান বিএনপি-জামায়াতের Nov 13, 2025
img
মিরপুরে ২টি ককটেলসহ ১ যুবক গ্রেপ্তার Nov 13, 2025
img
হানি সিংয়ের গানে মালাইকার পারফরম্যান্স ঘিরে তীব্র বিতর্ক Nov 13, 2025