ভেঙে ফেলা ‘জাহাজবাড়ি’ স্থাপনায় নতুন নকশা অনুমোদন না দিতে রাজউককে সরকারের চিঠি  

হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ভেঙে ফেলা পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জাহাজবাড়ি স্থাপনায় নতুন নকশা অনুমোদন না দিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) চিঠি দিয়েছে সরকার।

গত ১০ এপ্রিল রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর চিঠিটি পাঠায় বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসন। ওই চিঠির একটি কপি বাংলাদেশ টাইমসের হাতে এসেছে।  

ওয়াকফ্ প্রশাসক (অতিরিক্ত সচিব) মো. শহীদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে,  ‘ঢাকা জেলার সাবেক লালবাগ হালে চকবাজার থানাধীন চক সার্কুলার রোডস্থ ২ ও ৩ নম্বর হোল্ডিং চকবাজার, ঢাকা এর সম্পত্তি ওয়াক্ফ সম্পত্তি। উক্ত ওয়াক্ফ সম্পত্তিতে অবস্থিত পুরাতন বিল্ডিং ভেঙে নতুন বিল্ডিং নির্মাণের জন্য অবৈধ কার্যক্রম হচ্ছে মর্মে ২ নং সূত্রোক্ত তদন্ত প্রতিবেদন হতে জানা যায় (ছায়ালিপি সংযুক্ত)। 

চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ‘জাহাজবাড়ি’ না ভাঙতে জিডি

এমতাবস্থায় উক্ত ওয়াক্ফ সম্পত্তিতে অবস্থিত পুরাতন বিল্ডিং ভেঙে নতুন বিল্ডিং নির্মাণের নিমিত্ত সরকারের অনুমতি ব্যতিত নকশা অনুমোদন না করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট আরবান স্টাডি গ্রুপের (ইউএসজি) করা এক রিট আবেদনের রায়ে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ২২শ ভবন না ভাঙতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

এমনকি এসব স্থাপনা/ভবনের মালিকরাও এতে কোনো ধরনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারবেন না বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু আাদালতের নির্দেশ অমান্য করে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জাহাজবাড়িটি ঈদুল ফিতরের (৫ জুন) রাতে বুলডোজার দিয়ে ভাঙা শুরু একটি প্রভাবশালী মহল।

ভবন ভাঙা বন্ধে পরদিন ৬ জুন চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন আরবান স্ট্যাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। পুরো ভবনটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

এর আগেও গত মার্চ মাসের শেষ দিকে প্রভাবশালী ওই মহলটি জাহাজবাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু তখনও আরবান স্ট্যাডি গ্রুপ থানায় জিডি করায় ভবনটি ভাঙা স্থগিত করা হয়।

এ ব্যাপারে আরবান স্ট্যাডি গ্রুপের নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, জাহাজবাড়িটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার (গ্রেড নম্বর ১) মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ঈদের দিন রাতে ওই ভবনটি পুরোটাই ভেঙে ফেলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভবন ভাঙা বন্ধে থানায় জিডিও করেছিলাম। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। প্রভাবশালী একটি মহল ভবনটি ভেঙে ফেলেছে। তবে কারা ভেঙেছে সেটা তো মিডিয়ায় চলে এসেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ওয়াকফ্ প্রশাসক (অতিরিক্ত সচিব) মো. শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, ‘চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী জাহাজবাড়ি শেখ লালু মিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৪০ সালের জুলাই মাসের ১৯ তারিখে মতিউল্লাহ ওরফে মতিজান ব্যাপারী ওয়াক্ফ স্টেট নামে ওয়াকফ্ প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি তালিকাভুক্ত করেন।’ 

‘যার নথি নম্বর ছিল ২২৫। আর ভূমিটি হচ্ছে চকবাজারের রোডের ৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের ০২৪১ অজুতাংশ বা ১০৬ ফুট জায়গা। এই স্থানের বর্তমান মোতাওয়াল্লি হচ্ছেন আব্দুল হক।’ 

তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী জাহাজবাড়ি ভাঙার বিষয়ে ওয়াক্ফ কার্যালয়ের ঢাকা অঞ্চল-১ পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কাসেম তদন্ত করে জানিয়েছেন যে, ভবনটি কে বা কারা ভেঙে ফেলেছে। কিন্তু এই বিষয়ে মোতাওয়াল্লি আবদুল হক আমাদের অবহিত করেননি। 

অতিরিক্ত সচিব শহীদুল ইসলাম বলেন, ওয়াকফ্ পরিদর্শকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১০ এপ্রিল রাজউককে চিঠি দিয়েছি। ওই স্থানে যাতে কোনো নতুন ভবন নির্মাণের প্ল্যান না দেয়া হয় সেজন্য রাজউক চেয়ারম্যানকে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

জাহাজবাড়ির জমির সর্বশেষ প্রকাশিত সিটি জরিপে জনৈক বদরুল হকের (আবদুল হকের বাবা) নামে রেকর্ডভুক্ত হওয়ায় ওই রেকর্ড সংশোধনে মামলা করার জন্য ঢাকা অঞ্চল-১ পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কাসেমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওয়াক্ফ প্রশাসক। 

এ বিষয়ে জানতে জাহাজবাড়ির বর্তমান মোতাওয়াল্লি আব্দুল হকের ইমো আইডিতে কল করা হয়। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে কোনো কথা না বলে তিনি মোবাইলটি তার কর্মচারীকে ধরিয়ে দেন।

পরে তার কর্মচারী এ প্রতিবেদককে জানান, ‘তিনি বাইরে আছেন।’

 

টাইমস/টিআর/জেডটি

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আবু ত্বহার পক্ষে সাফাই দিয়ে তোপের মুখে কাসিমী Oct 14, 2025
img
বাজারে সরবরাহ নিশ্চিতে ১৫ হাজার টন আখের চিনি কিনবে সরকার Oct 14, 2025
img
শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি রেখে দেশকে ভালো করা সম্ভব নয় : দুদক চেয়ারম্যান Oct 14, 2025
img
পদ্মা সেতুর জাজিরা অংশে সড়ক অবরোধ Oct 14, 2025
বিগ বস ১৯-এর মঞ্চে অরিজিৎ-সালমান সম্পর্কের নতুন অধ্যায় Oct 14, 2025
'জয় পরাজয় মেনে নেয়ার মানসিকতা রয়েছে' শিবিরের ভিপি প্রার্থী জাহিদ Oct 14, 2025
img
দশম বারের চেষ্টায় সফলভাবে উড্ডয়ন মাস্কের স্পেসএক্স Oct 14, 2025
img
ফেসবুক-টিকটক থেকে টাকা কামানো আর ভিক্ষা করার মাঝে তফাৎ নেই : শাহেদ আলী Oct 14, 2025
img
জকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বৈঠক বুধবার Oct 14, 2025
img
নির্বাচনটা মোটা দাগে এই সরকারকে দিয়ে হওয়া উচিত : জাহেদ উর রহমান Oct 14, 2025
img
নির্বাচনটা মোটা দাগে এই সরকারকে দিয়ে হওয়া উচিত : জাহেদ উর রহমান Oct 14, 2025
img
ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে, এটা প্রতারণা: রিজভী Oct 14, 2025
img
রোমে ২ হাজার বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা পরিদর্শনে ড. ইউনূস Oct 14, 2025
img
বগুড়া-রাজশাহীতে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ Oct 14, 2025
img
শিক্ষকদের ন্যায্য সব দাবি মেনে নিন : ব্যারিস্টার ফুয়াদ Oct 14, 2025
img
গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণে এফএও মহাপরিচালকের সহায়তার আশ্বাস Oct 14, 2025
img
এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির পথে ইতালি! Oct 14, 2025
img
৪-৫ জন উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছে: ডা. তাহের Oct 14, 2025
img
রুক্মিণীর নতুন ছবি ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’-এ চিরঞ্জিতের আবেগঘন প্রশংসা Oct 14, 2025
img
অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের ‘সেনা আইনে’ বিচার দাবি এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন Oct 14, 2025