সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

ভারী বর্ষণে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। এতে জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলার ১৯ ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এতে ওইসব এলাকার প্রায় ৩ লাখ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। এদিকে বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

দিনভর বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় শনিবার পানি ক্রমশ বেড়েছে। এ অবস্থায় সিলেট শহরের সঙ্গে গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ভারী বর্ষণের কারণে বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলার অন্তত ৭০টি গ্রামীণ রাস্তায় পানি উঠেছে। শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে যাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ আছে। প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

এছাড়া নতুন করে সিলেট সিটি করপোরেশনের উপশহর, তেরোরতন, মাছিমপুর ও ছড়ারপাড় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুরমা নদীর পানি উপচে নদীর তীরবর্তী আশপাশের এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে বলে এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানির গতি প্রবাহ ছিল ১০ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার। এ পয়েন্টে সুরমার পানি বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৮৪ মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। অর্থাৎ বিপদসীমার ১৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহমান ছিল। কুশিয়ারা অমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহমান ছিল। এ স্থানে পানির বর্তমান গতিপ্রবাহ ১৬ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার।

বন্যার খবরা খবর রাখতে জেলা প্রশাসন ছাড়াও ১৩টি উপজেলায় একটি করে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আসলাম উদ্দিন বলেন, এসব উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গোয়াইনঘাট উপজেলার লোকজন। এ উপজেলার ২৫ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি।

এছাড়া অন্য উপজেলাগুলোতেও চার/পাঁচটি ইউনিয়নের লোকজনকে বন্যা ছুঁয়ে ফেলেছে। ওইসব উপজেলাগুলোতে ৪১ টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বানবাসী মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে বিতরণও করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ করা আরো দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার রোববার এসে পৌঁছবে।

তিনি বলেন, বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সরিয়ে আনতে এরইমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এসব উপজেলায়। কিন্তু মাইকিং করানোর পরও লোকজন মালামাল রেখে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন না। বন্যার কারণে সিলেটের অন্তত ৭০টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, উপজেলায় মোট ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুর্গতদের মধ্যে আজ ১৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে লেঙুরা ইউপিতে ৪০০টি পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।

অপরদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেটে বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকার পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল বন্যার ভয়াবহতা সৃষ্টি করতে পারে।

সিলেটের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, জুলাই মাসেই ৩৪৩ মিলিমিটার হয়েছে। এর আগে জুনে ৮০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১১৪ মিলিমিটার এবং বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হলেও তা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: