আ. লীগ ও চীনা কমিউনিস্টের মধ্যে চুক্তি

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) দুই দলের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সফররত সিপিসি’র আন্তর্জাতিক বিভাগ সংক্রান্ত মন্ত্রী সং তাও এবং প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বৈঠকের পরে এই সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়।

বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ এবং সং তাও নিজ নিজ দলের পক্ষে এই স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতা উভয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী দিনগুলোতে দুই বন্ধু ভাবাপন্ন দেশ এবং দুটি দলের মধ্যে সম্পর্ক এবং সহযোগিতা আরো শক্তিশালী হবে।

সং তাও উল্লেখ করেন যে, তার দল এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একই ধরনের মতাদর্শে বিশ্বাসী।
নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে নিরাপদ এবং স্থায়ী প্রত্যাবাসনে চীনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

তিনি বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’ এর উত্তরে সং তাও তাঁর দেশের সহযোগিতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলেন, রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার জন্য চীন এ ব্যাপারে কাজ করছে এবং মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে।

চীনকে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নে চীন বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

চীন সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনের সহযোগিতা বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

সারাদেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে কৃষিতে চীনের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে নজরুল ইসলাম জানান, ‘চীন কৃষিখাতে অনেক উন্নত, কাজেই আমরা আমাদের কৃষিখাতের উন্নয়নে তাদের সহযোগিতা চাই, যেহেতু আমাদের জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে।’

শেখ হাসিনা মীরেরসরাইতে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য ৭শ’ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে মিয়ানমার থেকে গ্যাস আনার জন্য চীনকে প্রস্তাব করেন।

তিনি বলেন, ‘চীন তাদের এলাকা থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত গ্যাস পাইপ লাইন বসাচ্ছে এবং তারা চাইলে মীরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্তও মিয়ানমার থেকে এই গ্যাস আনতে পারে।’

সং তাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চমৎকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি এই অর্থবছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের অর্জন করতে যাওয়া ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিরও প্রশংসা করেন।

চীনের নেতা চীনের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীকে পৌঁছে দেন এবং তাঁদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানান।

তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে বিগত নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিপুল বিজয়ে এবং চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করায় তাঁকে শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় সং তাও-এর মাধ্যমে চীনের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকেও শুভেচ্ছা জানান।

বিসিআইএম (বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার) অর্থনৈতিক করিডোর সম্পর্কে তিনি বলেন, চীনসহ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধনকে আরো দৃঢ় করা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে এই উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৫২ ও ’৫৬ সালের চীন সফরের কথা স্মরণ করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ জমির, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
খালেদা জিয়া রাজনৈতিক অঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তী : কবীর ভূইয়া Dec 14, 2025
img
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবিচল সাহস দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় : রাষ্ট্রপতি Dec 14, 2025
img
প্রথম ডেটে সারারাত পিয়ানো বাজিয়েছিলেন বীর, নায়িকার মন্তব্য Dec 14, 2025
img
হাদির ওপর হামলা নির্বাচন বানচালের গভীর ষড়যন্ত্র : শেখ বাবলু Dec 14, 2025
img
হাদিকে গুলি করা দুর্বৃত্ত গোয়েন্দাদের নজরে! Dec 14, 2025
img
ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমের দুঃখ প্রকাশ Dec 14, 2025
img
চট্টগ্রামে সোমবার অনুষ্ঠিত হবে হৃদরোগ কনফারেন্স Dec 14, 2025
img
ঢাকা বিভাগের ইজতেমায় ক্রিকেটার মিরাজ Dec 14, 2025
img
অন্যের হাসিতেই জীবনের পরম সার্থকতা দেখেন গায়িকা Dec 14, 2025
img
পার্শ্ববর্তী দেশের উস্কানিতে আ.লীগের দালালরা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে : খোকন Dec 14, 2025
img
সরকার পতনের তিন মাস পর নেপালে ফের অলির জোয়ার Dec 14, 2025
img
খুলনায় অস্ত্র কারখানার সন্ধান, গ্রেপ্তার ৩ Dec 14, 2025
img
উত্তরায় জুলাই রেবেলস সংগঠনের এক সদস্যের ওপর হামলা Dec 14, 2025
img

দ্য ডিসেন্টের বিশ্লেষণ

হাদির ওপর হামলার ঘটনায় দ্বিতীয় সন্দেহভাজন শনাক্ত Dec 14, 2025
img
খালেদা জিয়ার সুস্থতা মানেই গণতন্ত্রের আশা : আজহারুল ইসলাম মান্নান Dec 14, 2025
img
বিদায়ী ম্যাচের আগে জন সিনার হৃদয়স্পর্শী বার্তা Dec 14, 2025
img
পঞ্চগড় সীমান্তজুড়ে বিশেষ সতর্কতা Dec 14, 2025
img
দেশব্যাপী বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৫০৬ Dec 14, 2025
img
আহত শান্তিরক্ষীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ Dec 14, 2025
img
সাফল্যের পেছনে ভাগ্য নয়, কর্মই আসল : কাজল Dec 14, 2025