যুবদল থেকে যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা জি কে শামীম

যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা জি কে শামিমকে তার সাত দেহরক্ষীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীর নিকেতনে তার ব্যবসায়িক কার্যালয় অভিযান চালিয়ে শুক্রবার দুপুরে তাদের আটক করে র‍্যাবের একটি দল। তার বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক তোফায়েল মোস্তফা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এ সময় জি কে শামীমের অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, অস্ত্র ও মদ উদ্ধার করেছে র‍্যাব।

কে এই জি কে শামীম?

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে শামীম। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম মেজো। বড় ছেলে গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন।

প্রাইমারি স্কুল ও হাইস্কুল পাস করার পর তাদের গ্রামে দেখা যায়নি। ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় বড় হয়েছেন বলে তার এলাকার মানুষ জানিয়েছেন।

গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পর এজিবি কলোনি, হাসপাতাল জোন এবং মধ্য বাসাবোতেই পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন শামীম। ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মাধ্যমেই তার রজনীতি শুরু। পরবর্তী সময়ে মির্জা আব্বাসের ভাই মির্জা কালু ও মির্জা খোকনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় এবং তাদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। ঢাকা মহানগর যুবদলের সহসম্পাদকের পদও বাগিয়ে নেন। বিএনপি আমলে গণপূর্ত ভবন ছিল তার দখলে।

রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় জি কে শামীম প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবেই পরিচিত। গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ ঠিকাদারি কাজই জি কে শামীম নিয়ন্ত্রণ করেন। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও গণপূর্তে এই শামীমই ছিলেন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি।

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে শামীম ছিলেন ঢাকা মহানগর যুবদলের সহসম্পাদক এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের খুবই ঘনিষ্ঠ। সেই জি কে শামীম এখন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

জি কে শামীম সম্পর্কে যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু বলেন, ‘যুবলীগে জি কে শামীমের কোনো পদ নেই। সে নিজেই নিজেকে সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বলে বেড়াতো। এ নিয়ে যুবলীগে কয়েকবার আলোচনাও হয়েছে।’

‘জিকে শামীম এক সময় যুবদলের সাবেক সহ সম্পাদক ছিল। এখন সে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বলে শুনেছি’- বলেন তিনি।

জি কে শামীমের সঙ্গে সবসময় ছায়ার মতো ছয়জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী। সবার হাতেই শটগান। গায়ে বিশেষ সিকিউরিটির পোশাক। তাদের একেকজনের উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। যাকে মাঝখানে রেখে তারা পাহারা দিচ্ছেন তিনি উচ্চতায় পাঁচ ফুটের কিছু বেশি। ছোটখাটো মানুষ হলেও জি কে শামীমের ক্ষমতার দাপট আকাশসমান। তিনি যখন চলেন তখন সঙ্গে চলে নিরাপত্তা বলয়।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কিংবা যুবলীগের পার্টি অফিস, বিয়ে বাড়ি কিংবা বন্ধুর বাড়ি, যেখানেই তিনি যান, সঙ্গে  থাকে অস্ত্রধারী প্রটোকল বাহিনী। ভারী অস্ত্র নিয়ে ছয়জন নিরাপত্তারক্ষী আগে-পিছে পাহারা দিয়ে তাকে নিয়ে যান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন জি কে শামীম।

বাসাবো এলাকায় পাঁচটি বাড়ি এবং একাধিক প্লট রয়েছে শমীমের। বাসাবোর কদমতলায় ১৭ নম্বরের পাঁচতলা বাড়িটি জি কে শামীমের। এই বাড়িটি ম্যানেজার হিসেবে দেখাশোনা করেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ইসমাইল হোসেন সর্দার। শামীম কয়েক বছর বাসাবোর ওই বাড়িতে বসবাস করলেও এখন থাকছেন বনানীর ওল্ড ডিওএইচএসে নিজের ফ্ল্যাটে। এবং নিজের কার্যালয় বানিয়ে বসেন নিকেতন এলাকায় একটি ভবনে। বাসাবোতে আরো রয়েছে তিনটি ভবন এবং ডেমরা ও দক্ষিণগাঁও ছাড়াও সোনারগাঁ উপজেলা, বান্দরবান ও গাজীপুরে কয়েকশ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিএনপিতে কোনো নেতৃত্বের সংকট নেই : মনিরুল হক চৌধুরী Nov 21, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Nov 21, 2025
নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের পথে যাত্রা: প্রধান উপদেষ্টা Nov 21, 2025
img
বিশ্ব বাজারে ফের কমল স্বর্ণের দাম Nov 21, 2025
img
হাসিনা সরকার জনগণকে ভোটের সুযোগ না দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে : শামীম সাঈদী Nov 21, 2025
img
আমি ব্যতীত অন্য কেউ মনোনয়ন পেলে আমি তার পক্ষে ভোট চাইতাম : মান্নান Nov 21, 2025
img
সশস্ত্র বাহিনী জাতির আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে: তারেক রহমান Nov 21, 2025
img
ময়মনসিংহে ট্রেনে অগ্নিসংযোগ, যুবলীগ কর্মী গ্রেপ্তার Nov 21, 2025
img
বাংলাদেশে ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনায় সমবেদনা জাতিসংঘের Nov 21, 2025
img
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে এবার মুখ খুলেছে পাকিস্তান Nov 21, 2025
img
রাশিয়ার জাল ভিসা ও টিকিটে কোটি টাকা প্রতারণার চক্রের হোতা আটক Nov 21, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের মতামত ছাড়াই খসড়া ঘোষণাপত্রে সম্মত জি২০ দূতরা Nov 21, 2025
img
রাফিয়ার বাড়িতে আগুন, আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ গ্রেপ্তার ৪ Nov 21, 2025
img
বিএনপির সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে মুখ খুললেন জোনায়েদ সাকি Nov 21, 2025
img
চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরছেন ইয়ামাল, রাফিনিয়া ও গার্সিয়া Nov 21, 2025
img
ভারতকে হারানোর পর নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেন আকবর Nov 21, 2025
img
পুরুষদের কাঁদতে নেই ভাবা ভুল: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় Nov 21, 2025
img
নিয়ম মেনে বহুতল ভবন নির্মাণ কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে : জামায়াত আমির Nov 21, 2025
img
ভূমিকম্পে নরসিংদীতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫, আহত ৭০ Nov 21, 2025
img
একসাথে সহকারী অধ্যাপক হলেন ১৮৭০ শিক্ষক Nov 21, 2025