ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ ‘টেস্ট ক্রিকেট। টেস্ট ক্রিকেটে আঁটসাটঁ বা একিউরিট পজিসনে বলা করাই পেসারদের সফলতা। লাইন-লেংথ ঠিক রেখে বোলিং করে অনেকে পেসারই হয়েছেন কিংবদন্তী। তবে সব পেসারই যে আঁটসাটঁ বোলিং করতে পারেন তা কিন্তু নয়। হাতে গুনা কিছু পেসার এ কাজটি করতে পেরেছেন। ২০০৬ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেট অন্তত ১ হাজার বল করেছেন এমন সেরা ১০ পেসারের আঁটসাঁট বোলিংয়ের র্যাংকিং করেছে ক্রিকইনফো। যেখানে দেখা গেছে, টেস্টে ১০০০ আঁটোসাঁটো বোলিংয়ের শীর্ষে রয়েছেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আব্বাস।
ক্রিকইনফো জানিয়েছে, ২০১৭ সালে অভিষেক হওয়া আব্বাস এ পর্যন্ত ২০টি টেস্ট খেলেছেন। এরই মধ্যে তিনি তুলে নিয়েছেন ৮০ ইউকেট। প্রতিটি ইউকেট শিকারের জন্য আব্বাস মাত্র ২০.৬৭ রান খরচা করেছেন। ৩০ বছর বয়সী এই পেসারের বোলিং জোন এতই শক্তিশালী যে, মাঝারি গতির বল করেই তিনি ব্যাটসম্যানদের রীতিমত পরাস্থ করতে পারেন। আব্বাসের এই জাদুকরি পারফরমেন্সের একমাত্র কারণ একিউরিড স্পটে বল করা। যে কাজটি খুব কম পেসারই পারেন।
এদিকে গত ১৪ বছরে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সেরা দশের তালিকাও দিয়েছে ক্রিকইনফো। যেখানে আব্বাসের সঙ্গে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা, কাইল অ্যাবট, পাকিস্তানের মোহাম্মদ আসিফ, শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, ভারতের ভুবনেশ্বর কুমার, যশপ্রীত বুমরা ও জ্যাকসন বার্ড।
তবে দুঃখের বিষয় যে, এ তালিকায় বাংলাদেশি পেসারের নাম নেই। তবে ২০০৬ সালের পর টেস্টে ১ হাজার বল করেছেন এমন বোলারদের একটি জায়গায় আছে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের নাম। টেস্টে ১ হাজার বলের মধ্যে কে কেমন মুভমেন্ট পেয়েছেন, সেই তালিকায় গড়ে ০.৭৩ ডিগ্রি মুভমেন্ট নিয়ে মোস্তাফিজ দুই নম্বরে। এক নম্বরে রয়েছেন পল কলিংউড। যার গড় মুভমেন্ট ০.৮৮ ডিগ্রি।
এ তালিকায় দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশি কাটার মাস্টার খ্যাত বাঁহাতি পেসার সিম মুভ করিয়েছেন গড়ে ০.৭৩ ডিগ্রি। এ ক্ষেত্রে গ্লেন ম্যাকগ্রা, মাখায়া এনটিনির মত কিংবদন্তী পেসারদের পেছনে ফেলেছেন ‘দ্যা ফিজ’।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ টেস্ট ম্যাচ দেশের মাটিতে খেলা হয়েছে। আর বাংলাদেশের সব ইউকেট স্পিনারদের জন্য সহায়ক। এ ধরণের ইউকেটে মোস্তাফিজ যেভাবে সিম মুভমেন্ট করিয়েছেন, তা সত্যিই আশ্চর্যের।
তবে এ ক্ষেত্রেও আবার পাকিস্তানি মোহাম্মদ আব্বাস, শাহিন আফ্রিদি ও দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার রাবাদার পেছনেই পড়েছেন মোস্তাফিজ। অথচ এই আব্বাস, রাবাদা, শাহিন আফ্রিদির আগেই টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন কাটার মাস্টার। কিন্তু তাদের সঙ্গে টেস্টে বল মুভমেন্টের দৌড়ে মোস্তাফিজ বেশ পেছনে। যদিও মোস্তাফিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটা বেশ উজ্জল ছিল। কিন্তু দেশের বাইরে টেস্ট ম্যাচ না পাওয়ায় ও দেশের ইউকেট পেস সহায়ক না হওয়ায় আজ মোস্তাফিজ যেন জ্বলে উঠেও নিভে যাওয়ার পথে। এছাড়া পাকিস্তান বা আফ্রিকার মত বাংলাদেশ টেস্টে এত নিয়মিতও না। এটাও একটা বড় কারণ।
এসব ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমি নানা কারণেই টেস্টে নিয়মিত হতে পারিনি অথবা আমরাই টেস্টে অন্যদের মত ম্যাচ পায়নি। এছাড়া আমার বড় একটা সময় ধরে ইনজুরি গেছে। তবে এখন আমি ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছি। ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। আগামীতে টেস্টে বেশি মনোযোগ থাকবে আমার।
জানা গেছে, টেস্টে নিয়মিত হওয়ার জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ অটিস গিবসনের সঙ্গে টেকনিক নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন মোস্তাফিজ। কিন্তু করোনার কারণে সে প্রচেষ্টা থমকে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনা মহামারী কেটে গেলে গিবসন আবার ঢাকায় ফিরবেন। তখন হয়তো মোস্তাফিজ আবারও তার মিশন শুরু করবেন।
এ নিয়ে মোস্তাফিজ বলেন, গিবসনের সঙ্গে আমার অনুশীলনটা চালু থাকলে এতদিনে ভালো কিছু একটা হতে পারতো। কিন্তু সময়টা আমাদের পক্ষে নেই। আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে সবকিছু।
টাইমস/এসএন