এই শীতে ঘুরে আসুন চায়ের রাজধানীতে পর্ব-১

যত দূর চোখ যায় কেবল সবুজের হাতছানি। চা বাগানের সারি সারি টিলা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর ঘন সবুজ অরণ্যের অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকে আকৃষ্ট করে। তাই পর্যটকরা বার বার ছুটে যায় চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজারের চিরসবুজের শোভা আর বৃষ্টিস্নাত পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখতে।

৯২টি চা বাগানের সতেজ সবুজ পাতায় পূর্ণ হয়ে আছে মৌলভীবাজার জেলার নিসর্গশোভা। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে এবং চায়ের রাজধানী হিসেবে মৌলভীবাজার জেলার খ্যাতি সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই মৌলভীবাজারে বেড়াতে যাওয়ার এখনই সময়।

প্রকৃতির বৈরিতার মাঝেও এবারের শীতে চা বাগান ঘেরা মৌলভীবাজার যেন সেজেছে নতুন সাজে। যেদিকে চোখ যায় উঁচু নিচু পাহাড়, পাহাড়ের বুকজুড়ে চা বাগানের সারি, পাহাড়ি ঝর্ণা, চারদিকে প্রকৃতির নজরকাড়া সৌন্দর্য, হাজার প্রজাতির গাছ-গাছালি, দিগন্তজোড়া হাওর আর নীল জলরাশিতে ঢেউয়ের ছন্দে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

সারা দেশ থেকেই রেল ও সড়কপথে মৌলভীবাজার আসা যায়,রেল পথে আসলে প্রথমে শ্রীমঙ্গলে নেমে জেলার বিভিন্ন উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়। চা বাগান, রাবার বাগান, লেবু, পান, আনারস ও মূল্যবান কাঠসহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাসের কারণে জেলাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশ আকর্ষণীয়। তাই তো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে বছরের প্রতিটি দিন মুখরিত থাকে শ্রীমঙ্গল।

চলুন জেনে নেওয়া যাক মৌলভীবাজারের কিছু মনোমুগ্ধকর জায়গা সম্পর্কে-

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট(বিটিআরআই)

এই ইনস্টিটিউটের চারদিকে বিচিত্র সব রঙ-বেরঙের ফুলের সমাহার। এছাড়াও রয়েছে সারিবদ্ধ পাম, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি বৃক্ষরাজি। লেকের জলে দেখতে পাবেন ফুটন্ত লাল পদ্মফুল। আর এসবের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। এখানে আরও আছে একটি চা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র। পুরো এলাকাটি আপনি দেখে নিতে পারেন তবে প্রয়োজন কর্তৃপক্ষের অনুমতি। মনোমুগ্ধকর এ এলাকাটি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে এক কিলোমিটার দূরে হলেও রিকশায় মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটের পথ আর ভাড়া ১০ টাকা।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে কমলগঞ্জ উপজেলায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র ন্যাশনাল পার্ক লাউয়াছড়ার অবস্থান। ১৯২০ সালে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গাজুড়ে পরিকল্পিত চাষাবাদ করে লাগানো চারাগাছগুলো এখন ঘন প্রাকৃতিক বনের আকার ধারণ করেছে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই পার্কে দেখা মেলে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পশুপাখি। ধীরে ধীরে পার্কটি এখন দেশের শিক্ষা, গবেষণা ও ইকো ট্যুরিজম স্পট হয়ে উঠেছে। শ্রীমঙ্গল থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে অথবা বাসে করেও আপনি আসতে পারেন এ বনে। এখানে আসার পথে রাস্তার দুই ধারে দেখতে পাবেন সবুজ অরণ্য আর বিচিত্র সব পশুপাখি। তবে এসব প্রাণী দেখতে হলে বনের একটু গভীরে যেতে হবে আপনাকে।

বাইক্কা বিল

বাইক্কা বিল একটি অনন্য স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম এবং জলচর পাখির বিচরণভূমি। এর আয়তন ১০০ হেক্টর। বাংলাদেশের অন্যতম জলাশয় হাইল-হাওরে এর অবস্থান। ২০০৩ সালের ১ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় বাইক্কা বিলকে একটি স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। হাওরটি বর্ষায় ১৪ হাজার হেক্টর এলাকায় বিস্তৃত হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গিয়ে ১৩৩টি বিল ও বেশ ক’টি খালে খণ্ডিত হয়ে মোট ৪ হাজার হেক্টর এলাকায় সংকুচিত হয়ে পড়ে বিলটি। বাইক্কা বিলের প্রধান আকর্ষণ পাখি। বছরজুড়েই নানা প্রজাতির পাখির বিচরণে মুখরিত থাকে এ বিলটি। তবে শীত মৌসুমে প্রচুর পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য এখানে একটি পাখি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। নয়নাভিরাম এ জলাভূমিতে যখন শাপলা, পদ্মসহ নানা প্রজাতির জলজ ফুল ফোটে, সেই দৃশ্যের কোনো তুলনাই হয় না।

পশু-পাখি সেবাশ্রম

এক সময়ের সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা এখন নাম পরিবর্তন হয়ে হয়েছে বন্যপ্রাণী ফাউন্ডেশনের পশু-পাখি সেবাশ্রম। সিতেশ রঞ্জন দেবের এই সংগ্রহশালায় গেলে দেখতে পাবেন সাদা বাঘ, মেছো বাঘ, সোনালি বাঘ, মায়া হরিণ, অজগর সাপ, ভাল্লুক, বানর, লজ্জাবতী বানর, সজারু, সোনালি কচ্ছপ, বনমোরগ, ময়না, বন্য খরগোশ, সাইবেরিয়ান ডাক, পাহাড়ি বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী।

ভাড়াউড়া লেক

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জেমস ফিনলে কোম্পানির চা বাগান। ভাড়াউড়ায় আছে একটি লেক যেখানে বসে জলপদ্মের মেলা। চা বাগানের বুকে এই লেকটির আকর্ষণ কিন্তু কম নয়। এখানে আছে বানর আর হনুমানের বিচরণ। শীতে দল বেঁধে আসে অতিথি পাখি। পাহাড়ের কাছাকাছি গেলেই দেখতে পাবেন এক সাথে অনেক বানর। চার পাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখলে হঠাৎ দু’একটা বানর আপনাকে দেখে ভেংচি কাটছে দেখলে চমকে উঠবেন না আবার।

লেখক: কাওছার আহমেদ

গণমাধ্যমকর্মী, মৌলভীবাজার

 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দুর্নীতিবাজদের বর্জন করুন, জনগণের ভরসা হতে চাই : শাকিল উজ্জামান Nov 20, 2025
img
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলকে ধ্বংস করে দিয়েছে: দুলু Nov 20, 2025
img
দুবাইয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক এয়ার শো Nov 20, 2025
img
'মায়ের অবিচল শক্তিই আমাকে জীবনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে' Nov 20, 2025
img
লেভানদোভস্কিকে গোল করতে মানা করেছিল বার্সা! Nov 20, 2025
img
মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ নিয়ে পুলিশের জন্য দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা Nov 20, 2025
img
পেশির চোটে ২ সপ্তাহের জন্য ছিটকে গেলেন মিলিতাও Nov 20, 2025
img
৩ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাকরিচ্যুত Nov 20, 2025
img
অভিনয়ই ছিল ভালোবাসা! নয়ডায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন বাঙালি অভিনেত্রী Nov 20, 2025
img
বন্ধুত্বের বাস্তবতা নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী Nov 20, 2025
বাংলাদেশ সফরে দোভালকে আমন্ত্রণ ড. খলিলুরের Nov 20, 2025
নির্বাচনী বিধিমালা ও অন্যান্য বিষয়ে ইসি সানাউল্লাহর বক্তব্য Nov 20, 2025
জকসু নির্বাচনে জয় পেলে কী পরিবর্তন আনবে শিবিরের প্যানেল Nov 20, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Nov 20, 2025
কুমিল্লায় বিএনপির দুই গ্রুপের সমাবেশকে ঘিরে উত্তেজনা Nov 20, 2025
আজহারীর মনোনয়নের বিষয়টি গুজব! Nov 20, 2025
সাইবার বুলিং নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে পপি রাণীর প্রশ্ন Nov 20, 2025
বিএনপির নির্বাচনী পোস্টারে জিয়া ও তারেকের ছবি নিয়ে আপত্তি তুলেছে এনসিপি Nov 20, 2025
ভিসা নিয়ে নতুন যেসব সিদ্ধান্ত নিল কুয়েত Nov 20, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরানোর বিষয়ে চূড়ান্ত রায় আজ Nov 20, 2025