নোয়াখালীর ঐতিহাসিক বজরা শাহী মসজিদ

মোগল যুগে উপমহাদেশে বহু স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল। সে সময় মোগল সম্রাটগণ ও তাদের কর্মচারীরা বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মসজিদ, ইমারত নির্মাণ করে ইতিহাসে অম্লান হয়ে আছেন। সেই স্থাপনাগুলো তাদের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে আছে। তেমনি মোগল যুগের একটি স্থাপত্য নোয়াখালীর বজরা শাহী মসজিদ।

প্রায় ২৭৭ বছরের পুরোনো এই মসজিদটির অবস্থান নোয়াখালী জেলা হতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা গ্রামে। মোগল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের আমলে দিল্লির শাহী জামে মসজিদের অনুকরণে মসজিদটি নির্মাণ করেন জমিদার আমান উল্যাহ। ১৭৪১-৪২ সালে, হিজরি ১১৫৪ এবং ১১৩৯ বঙ্গাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। যা আজও মোগল স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে।

জানা যায়, জমিদার আমান উল্যাহ ১৭৪১-৪২ সালে ৩০ একরের ভূমিতে একটি বিশাল দীঘি খনন করেন। তারপর পুকুরের পশ্চিম প্রান্তে দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যার নাম বজরা শাহী মসজিদ।

মসজিদটিতে প্রবেশের আগে চোখে পড়বে একটি প্রবেশ তোরণ। মসজিদটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৬ ফুট, প্রস্থ প্রায় ৭৪ ফুট এবং মসজিদটির উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। মসজিদটিতে ৩টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির ভিত্তি মজবুত করার জন্য মাটির প্রায় ২০ ফুট নিচ থেকে ভিত তৈরি করা হয়েছে। তিনিটি গম্বুজই সুদৃশ্য মার্বেল পাথর সুসজ্জিত। মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য ৩ টি ধনুকাকৃতি দরজা এবং কেবলার দিকে ৩ টি কারুকার্য খচিত মিহরাব রয়েছে। মসজিদের প্রবেশ পথের তোরণের উপর আরও কয়েকটি গম্বুজ প্রত্যক্ষ করা যায়। মসজিদের দেয়ালে লাগানো শিলালিপি অনুযায়ী ১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের দিকে বজরার জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ এবং খান বাহাদুর মুজির উদ্দিন মসজিদটি পুরোপুরি সংস্কার করা করেন।

ঐতিহাসিক এই মসজিদে প্রথম ইমাম ছিলেন পবিত্র মক্কা শরীফের বাসিন্দা ও বিশিষ্ট বুজুর্গ আলেম হযরত মাওলানা শাহ আবু সিদ্দিকী। এখনো মাওলানা শাহ আবু সিদ্দিকীকের বংশধরগণ যোগ্যতা অনুসারে এই মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বর্তমানে প্রথম ইমাম সাহেবের সপ্তম পুরুষ ইমাম হাসান সিদ্দিকী উক্ত মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৯৮ সালে থেকে ঐতিহাসিক বজরা শাহী মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মুসল্লি এই মসজিদে নামাজ আদায় করার জন্য আসেন। এছাড়া মসজিদটিকে পরিদর্শন করতেও আসেন অনেক পর্যটক।

যাওয়ার উপায়: ঢাকা থেকে সড়কপথে বাসে যেতে হবে নোয়াখালির মাইজদী। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪৫০ টাকা। সেখান থেকে সোনাইমুড়ী গামী যেকোন লোকাল বাস সার্ভিস কিংবা সিএনজি অটোরিকশাযোগে বজরা হাসপাতালের সম্মুখে নেমে রিক্সা বা পায়ে হেঁটে ২০০ গজ পশ্চিমে গেলে বজরা শাহী মসজিদে পৌঁছা যাবে।

অথবা ঢাকা থেকে ট্রেনযোগেও যাওয়া যাবে। ট্রেনে করে নামতে হবে মাইজদী স্টেশনে। সেখান থেকে সোনাইমুড়ীগামী যেকোন লোকাল বাস সার্ভিস কিংবা সিএনজি অটোরিকশাযোগে বজরা শাহী মসজিদে যাওয়া যাবে।

থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা: থাকার জন্য নোয়াখালি শহরে রয়েছে আবাসিক হোটেল। একই সাথে খাবার সুবিধাও রয়েছে সেখানে। হোটেল পুবালি, হোটেল রয়েল, হোটেল রাফসান, হোটেল লিটন উল্লেখযোগ্য।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী Mar 28, 2024
img
ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৮৯.৯৩ শতাংশ ফেল Mar 28, 2024
img
একনেকে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন Mar 28, 2024
img
রাজসিক সংবর্ধনায় দায়িত্ব নিলেন বিএসএমএমইউ'র নতুন উপাচার্য Mar 28, 2024
img
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে হলুদের ঘরোয়া প্যাক Mar 28, 2024
img
শহরের চেয়ে গ্রামে বিয়ে-তালাক বেশি Mar 28, 2024
img
ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৫ Mar 28, 2024
img
বাংলাদেশে মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত থাকবে: ম্যাথিউ মিলার Mar 28, 2024
img
নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত Mar 28, 2024
img
নিষেধাজ্ঞার ৩ দিনের মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত Mar 27, 2024