হবিগঞ্জের ‘বিথঙ্গল আখড়া’ : নয়া পর্যটনের হাতছানি

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীনতম ঐহিত্যবাহী ‘বিথঙ্গল আখড়া’। যা বর্ষা মৌসুমে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটি দেখতে হবিগঞ্জসহ সিলেট বিভাগের দূরদূরান্ত থেকে প্রতিনিয়তই লোকজন ছুটে আসছে। বর্ষা মৌসুমে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে নৌকায় চড়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে দর্শনার্থীরা পৌঁছে যায় বিথঙ্গল আখড়ায়। জরাজীর্ণ এ আখড়াটির ভবনগুলো সংস্কার করায় আবার তার পুরনো জৌলুস ফিরেছে। ফলে দর্শনার্থীরা আবার ভিড় জমাচ্ছেন বিথঙ্গল আখড়ায়।

জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হাওর পাড়ে বিথঙ্গল গ্রামে এ প্রাচীন আখড়াটি অবস্থিত। যা বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের জন্য অন্যতম তীর্থস্থান। এ আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা রামকৃষ্ণ গোস্বামী। যিনি উপমহাদেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান সফর শেষে ষোড়শ শতাব্দীতে আখড়াটি প্রতিষ্ঠা করেন। বিশাল এই আখড়ায় মোট কক্ষ রয়েছে ১২০টি। কক্ষগুলোতে ১২০ জন বৈষ্ণব থাকতেন। তবে বর্তমানে এখানে হাতে গুনা কয়েকজন বৈষ্ণব বসবাস করছেন।

জানা গেছে, এতদঞ্চলের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র এ আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোস্বামী হবিগঞ্জের রিচি পরগনার অধিবাসী ছিলেন। বাংলা ১০৫৯ সনে রামকৃষ্ণ গোস্বামী দেহত্যাগ করেন। আখড়ায় রামকৃষ্ণ গোস্বামীর সমাধিস্থলের ওপর একটি সুদৃশ্য মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়। মঠের সামনে একটি নাট মন্দির এবং পূর্ব পার্শ্ববর্তী একটি ভান্ডার ঘর এবং দক্ষিণে একটি ভোগ মন্দির রয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি পুরাতন ইমারত রয়েছে।

এদিকে বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল থাকায় বিথঙ্গল আখড়া এখন পর্যটকদের অনত্যম আকর্ষণ। প্রতিদিনই শহরতলীর কালারডুবা নৌকা ঘাট থেকে ডজনখানেক নৌকা ছেড়ে যাচ্ছে বিথঙ্গল আখড়ার উদ্যেশ্যে। আখড়ায় গিয়ে পর্যটকেরা প্রাচীন এ স্থাপনাটি ঘুরে দেখার পাশাপাশি বিশাল পুকুরে সাঁতার কেটে সময় পার করছেন। এছাড়াও আখড়ার মহন্তের কাছ থেকে অনেকেই আবার নানা রোগের সেবাও নিয়ে থাকেন।

পর্যটক তমাল দাস বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও এ আখড়াটি এখন পর্যটনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে গেছে। ঐতিহাসিক এ আখড়াটি দেখতে প্রতিদিন শতশত নারী পুরুষ ও শিশু-কিশোররা এখানে আসছে। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে।

কলেজ ছাত্র ফরহাদ আহমেদ জানান, ভাটি এলাকা দিয়ে অথৈ জলরাশি দেখতে দেখতে আখড়া যাওয়া হয়। পথিমধ্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। এছাড়াও আখড়ার প্রাচীন বিল্ডিংয়ের কারুকার্যগুলো পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।

সুব্রত কুমার বৈষ্ণব জানান, প্রাচীনতম এ আখড়াটিতে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ আসা যাওয়া করে। এখান থেকে নানান রোগের সেবাও নিয়ে থাকেন তারা। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে ভাটির এলাকার পর্যটনের অন্যতম স্থান এটি। তাই পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখানে নানান ব্যবস্থা রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিথঙ্গল আখড়ার সুকুমার দাস মন্ত্র গোস্বামী জানান, প্রায় ৫ শতাধিক বছরের পুরোনো এ নিদর্শনটি দেখতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজনের সমাগম ঘটে। এই আখড়াটি প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী অধ্যবধি পর্যন্ত চলে আসছে। এছাড়াও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতিটি পূজাও এখানে অনুষ্ঠিত হয়।

 

টাইমস/এসএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ড্রোন ও এআই অস্ত্র নির্মাণে যৌথভাবে কাজ করবে যুক্তরাজ্য-জার্মানি Jul 19, 2025
img
স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ২৫ কেজি দুধে স্নান করলেন হৃদয় মিয়া Jul 19, 2025
img
হাই অল্টিটিউড ম্যাচে কতটা প্রস্তুত জামালরা? Jul 19, 2025
img
সমর্থক গ্রেফতারে শীর্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড Jul 19, 2025
img
সরকারই উসকানি দিয়ে এনসিপিকে গোপালগঞ্জ পাঠিয়েছে : এলডিপি মহাসচিব Jul 19, 2025
img
বাংলাদেশ সরকারের কাজের প্রশংসা করলেন স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট Jul 19, 2025
img
কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের লোক ছাত্রদের দল গঠনের বুদ্ধি দিয়েছে : অলি আহমদ Jul 19, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ চায় না বিএনপি Jul 19, 2025
হলফনামায় শেখ হাসিনার মি'থ্যা তথ্য, ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই ইসির Jul 19, 2025
img
মুজিববাদের কবর দিতে গোপালগঞ্জ যাওয়ার দরকার নেই : এ্যানি Jul 19, 2025
বাংলাদেশে স্টারলিংক কার্যক্রমে সরকারকে ‘নজিরবিহীন’ বললো স্পেসএক্স Jul 19, 2025
‘হিরোস উইদাউট কেপস’ ডকুমেন্টারি: জুলাই আন্দোলনের প্রামাণ্য চিত্র Jul 19, 2025
img
জামালপুরে যুব মহিলা লীগ নেত্রী গ্রেফতার Jul 19, 2025
img
বাংলাদেশে স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে চালু, রিসেলার বিএসসিএল Jul 19, 2025
img
দলীয় উন্নয়নেই মনোযোগ, আজও দ্বিতীয় সারির দল পাঠাবেন বাটলার Jul 19, 2025
img
পাকিস্তানের ইরানি দূত এখন এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড Jul 19, 2025
img
এসি মিলানে মডরিচ, ফিরে গেলেন ছোটবেলার প্রেমে Jul 19, 2025
img
সমাবেশের আগেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো জামায়াতকর্মীরা Jul 19, 2025
img
ক্ষমা নয়, কিসাসই চূড়ান্ত, ইয়েমেনি পরিবার অনড় নিমিশার মৃত্যুদণ্ডে Jul 19, 2025
img
দুবাইফেরত ৩ যাত্রীর কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকার পণ্য জব্দ Jul 19, 2025