ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়ার গল্প

আলেক্সান্দ্রো ভিক্টোরিয়া। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যতম সফল শাসকদের একজন। বলা হয়, ব্রিটিশ লোকদের জন্য সবচেয়ে দীর্ঘ সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধময় সময় ছিল রানী ভিক্টোরিয়ার যুগ।

রাজা তৃতীয় জর্জ এর চার পুত্র। জর্জের চতুর্থ পুত্র প্রিন্স এডওয়ার্ডের কন্যা হলেন ভিক্টোরিয়া।

১৮১৯ সালে ২৪ মে কিংস্টন প্যালেসে জন্মগ্রহণ করেন আলেক্সান্দ্রো ভিক্টোরিয়া। ১৮২০ সালে তার দাদা রাজা তৃতীয় জর্জ মারা যান। এর ঠিক ৬ দিন পর মারা যান বাবা প্রিন্স এডওয়ার্ড।

অতঃপর গ্রেট বৃটেনের রাজা হন রাজা জর্জের আরেক পুত্র উইলিয়াম চতুর্থ। কিছুদিন পর তিনিও মারা যান। একে একে রাজা জর্জের চার পুত্রের সবাই মারা যান। ভিক্টোরিয়া ছাড়া তাদের কারো কোন সন্তান ছিল না।

তাই ১৮৩৭ সালে গ্রেট বৃটেনের রানী হিসেবে শাসনভার গ্রহণ করেন ভিক্টোরিয়া। তিনি ১৮৩২-১৯০১ পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শাসণ করেছেন।

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের পর তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ব্রিটেনের শাসক ছিলেন।

তিনিই প্রথম রানী যিনি ব্রিটিশ রাজ পরিবারের বাসভবন “বাকিংহাম প্যালেস”-এ বসবাস করেছিলেন।

ঊনিশ শতকে ব্রিটেনে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ঘটে। এর প্রভাবে ব্রিটেন বিশ্বব্যাপী তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। রানী ভিক্টোরিয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে নেতৃত্ব দেন। তাই তাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ এবং অহংকারের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তার সময়ে চীন ও ব্রিটেনের মধ্যে প্রথম আফিমের যুদ্ধ (১৮৩৯-১৮৪২) অনুষ্ঠিত হয়। এ যুদ্ধে পরাজিত হলে চীন ব্রিটেনের কাছে হংকং দ্বীপ লিজ দিতে বাধ্য হয়।

১৮৫৭ সালে ভারতে ঐতিহাসিক সিপাহী বিদ্রোহ হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ সরকারের হাতে চলে যায়। ১৮৭৭ সালে রানী ভিক্টোরিয়া ব্রিটিশ ভারতের সম্রাজ্ঞীর দায়িত্ব নেন।

তার সময়ে ১৮৫৩ সালে উপমহাদেশে রেল যোগাযোগ চালু করেন লর্ড ডালহৌসি। এছাড়া ১৮৫৭ সালে কাগজের মুদ্রা এবং ১৮৬১ সালে পুলিশ সার্ভিস চালু করেন লর্ড ক্যানিং।

রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রানী ভিক্টোরিয়া অত্যন্ত রক্ষণশীল ছিলেন। একবার রাজদরবারে এক নারী কর্মচারীকে দেখে গর্ভবর্তী মনে হয়েছিল। রানী সন্দেহ করলেন যে, ওই নারীর কারও সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তাই তিনি তার কুমারীত্ব পরীক্ষা করতে বললেন। পরীক্ষা করে দেখা গেল নারীর পেটে টিউমার। এক পর্যায়ে ওই নারী মারা যায়। এ ঘটনায় রানী ভিক্টোরিয়ার জনপ্রিয়তা অনেক কমে গিয়েছিল।

লর্ড মেলবোর্ন ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার সাথে রানীর গভীর বন্ধুত্ব হয়। লর্ড মেলবোর্ন নিজেও একজন রক্ষণশীল। তাই রানী অধিকাংশ সময় তার পরামর্শেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতেন।

স্বামী প্রিন্স আলবার্টের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত ছিলেন রানী ভিক্টোরিয়া। ১৮৬১ সালে মাত্র ৪১ বছর বয়সে আলবার্ট মারা গেলে তিনি ভীষণ মর্মাহত হন। শোকাতুর রানী জনসম্মুখে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জনগণের কাছ থেকে গোপনতায় তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়।

তবে তার শাসনের শেষ দিকে বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ব্যাপক সম্প্রসারিত হলে তিনি জনপ্রিয়তা ফিরে পান। অত্যন্ত রক্ষণশীল হলেও তার সাহসী মনোভাবের কারণে তিনি ব্রিটিশ জনগণের হৃদয়ে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিলেন।

১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি রানী ভিক্টোরিয়া মারা গেলে ভিক্টোরিয়ান যুগের সমাপ্তি ঘটে। তার সময়ে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সামরিক ক্ষেত্রে গ্রেট ব্রিটেন অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে।

তাই ভিক্টোরিয়ান যুগের অবসান হলে লোকে বুঝতে পারলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য কখনও অস্ত যায় না।

 

ইন্টারনেট অবলম্বনে লিখেছেন এনামুল হক।

 

Share this news on: