সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ের পর চট্টগ্রাম বন্দরে এবার বড় ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে আসছে ডেনমার্ক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মার্কস লাইন শিপিং। অন্তত ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী লালদিয়ার চরে অত্যাধুনিক টার্মিনাল নির্মাণ করবে প্রতিষ্ঠানটি। সব জটিলতা কাটিয়ে চলতি বছরেই চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ডেনমার্ক।
বিশ্ব সমুদ্র পরিবহন বাণিজ্যে জাহাজ পরিচালনার পাশাপাশি কনটেইনার ভাড়ার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান দখল করে আছে ডেনমার্ক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মার্কস লাইন। আবার বাংলাদেশে সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে মার্কস লাইনের হিস্যা অন্তত ৪০ শতাংশ। সেই প্রতিষ্ঠানটি এখন আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগের আগ্রহ নিয়ে।
পতেঙ্গা উপকূলের লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ করতে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা আলোচনা এখন চুক্তি পর্যায়ে পৌঁছেছে। দুই দেশের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেশিন) কমোডর আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ট্রান্সজিশন অ্যাডভাইজাররা কাজ করছেন, আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছি। আশা করছি চলতি বছরেই চুক্তি স্বাক্ষরের কাজ শেষ হবে।’
মূলত মার্কস লাইনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এপি-মোলার পৃথিবীর ৬০টির বেশি বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনা করে আসছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির জন্য প্রথম পর্যায়ে লালদিয়ার চরের দুইটি অংশে ৩২ এবং ৭ দশমিক এক পাঁচ একর জায়গা বরাদ্দ করে রেখেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। অবশ্য অত্যাধুনিক ক্রেনের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য মার্কস লাইন এপিএম টার্মিনালের চাহিদা রয়েছে অন্তত ৫০ একর জায়গা।
একইসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষও ওই এলাকায় ১৫ হাজার কনটেইনার ধারণ ক্ষমতার ২২ একর জায়গার ওপর নতুন একটি ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি এখানে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। বিশ্বব্যাপী যেভাবে তারা টার্মিনাল পরিচালনা করে, এখানেও একইভাবে উন্নত যন্ত্রপাতি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। এতে বিদ্যমান হ্যান্ডলিং ব্যবস্থার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে।’
বন্দরের বর্হিনোঙ্গরের আলফা অ্যাঙ্কারেজের খুব কাছেই এ টার্মিনাল হতে যাচ্ছে। এছাড়া বন্দরের জেটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে দু'টি বিপজ্জনক বাঁক এড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এমনকি নাব্য সংকটের জটিলতা না থাকায় ভিড়তে পারবে যে কোনো গভীরতার জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য মো. জাফর আলম বলেন, ‘যে জায়গায় টার্মিনালটি হচ্ছে, তার নাব্য অনেক গভীর। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে প্রবেশের সময় যে দুটি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে, সেগুলোও এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। ফলে এটি চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য একটি কার্যকরী ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল হবে।’
দেড় বছর আগে অপারেশনে যাওয়া সৌদি আরব ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রেডসি গেটওয়ের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের পাশেই গড়ে উঠবে ডেনমার্কের মার্কস লাইনের এই টার্মিনাল। প্রস্তাবনা অনুযায়ী নতুন এ টার্মিনালে বার্ষিক অন্তত ৯ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কেএন/টিকে