রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ড. ইউনূসের যেভাবে হঠাৎ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আগমন ঘটেছে, তা দেশের মানুষের কাছে একরকম বিস্ময়কর ছিল। মানুষ তার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল, তার প্রতি মানুষের স্বাভাবিক করুণা ছিল। কিন্তু কেউ কল্পনাও করেনি, এমনকি ড. ইউনুস নিজেও নয়, যে তিনি একসময় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বসে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবেন বা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন।
গোলাম মাওলা প্রশ্ন তোলেন, ড. ইউনূসের কার্যকাল আসলে কতদিন? তিনি কি আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেটি পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন? নাকি ডিসেম্বরের মধ্যেই তার বিদায় ঘটবে? কারণ, সংবিধানে যদি সংশোধন হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসে, বা যদি আদালতের রায়ের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হয়, তাহলে হয়তো বর্তমান প্রধান বিচারপতিকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হতে পারে।
সেই ক্ষেত্রে ড. ইউনূসের বিদায় অবধারিত হবে। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি এতটাই অনিশ্চিত যে ‘ডিসেম্বর তো অনেক দেরি’, এর আগেই সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরেই ড. ইউনূস স্বেচ্ছায়, চাপের মুখে বা অন্য কোনোভাবে দায়িত্ব ছাড়তে পারেন।
গোলাম মাওলা আরো বলেন, নির্বাচন শেষে তাকে কি তার পুরোনো পেশায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে, নাকি তাকে রাষ্ট্রীয় কৃতজ্ঞতা হিসেবে ‘বিশেষ দূত’, ‘এনভয় এমিরেটাস’ বা প্রেসিডেন্টের মর্যাদায় কোনো সম্মানজনক পদে আসীন করা হবে?
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু এখন অনেক অসম্ভব জিনিসও বাস্তবে ঘটছে, তাই এটিও অস্বাভাবিক নয়। বর্তমান রাজনীতিতে বড় প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কি গণতান্ত্রিক একটি ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে? রনি বিশ্লেষণ করেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ এবং অন্যান্য ১৪ দলের সম্মিলিত ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫০%।
এখন এক ধরনের ভাবনা দেখা দিয়েছে, এই ৫০% মানুষকে একেবারে রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করে ফেলতে হবে। তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে, কিন্তু তারা আর ভোট দিতে পারবে না। যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারা যদি তওবা কমিশনে গিয়ে স্বীকার করেন যে তারা আর কখনো 'জয় বাংলা' বা 'জয় বঙ্গবন্ধু' বলবেন না, তাহলে হয়তো তাদেরকে আবার প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হবে। রনি বলেন, এসব কথা আপাতদৃষ্টিতে কল্পনাপ্রসূত মনে হলেও, বাংলাদেশে অসম্ভব অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে।
তাই এগুলোকেও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, ড. ইউনূসের হঠাৎ রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত হওয়া তার নিজের জীবনেও অপ্রত্যাশিত এক বাঁক। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, তার নেই যথাযথ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বা প্রশাসনিক দক্ষতা। ফলে বর্তমানে যেসব জটিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, সেগুলোতে তিনি বেশ চাপের মধ্যে আছেন। রনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে মূলত তিনটি দলের; আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির।
গোলাম মাওলা বলেন, বাংলাদেশের অবস্থা এখন এমন এক নৌকার মতো, যার মাঝি কোনোদিন নৌকা চালায়নি, যাত্রীরাও কেউ কখনো নৌকায় চড়েনি, এমনকি সাতারও জানে না। এখন সেই নৌকার তলদেশে ফুটো হয়ে গেছে, পানি ঢুকছে। মাঝি-যাত্রী সবাই দিশেহারা, অথচ সাগর পাড়ি দিতে হবে। এই হলো আজকের বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তব রূপ।
পিএ/টিএ