বিগত কয়েক বছরে দেশীয় সিনেমায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বাণিজ্যিক ধারার ফ্যামিলি ড্রামা ঘরানার সিনেমায় ভালো গল্প হলে যে দর্শকেরা খুব ভালোভাবে গ্রহণ করবে, সেটা আঁচ করতে পেরেছিলেন নির্মাতা তানিম নূর। তাই অ্যাকশনের ভিড়ে না হেঁটে একটু অন্য পথেই পা বাড়িয়েছিলেন ‘উৎসব’ সিনেমা নির্মাণের মধ্য দিয়ে।
ব্যবসাসফল এই সিনেমার উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু কাহিনির মধ্যে এর ক্লাইম্যাক্স ছিলো সবচেয়ে আবেগপ্রবণ ও আলোচিত। আর তা নিয়ে দর্শক-নেটিজেনদের মাঝে আলোচনাও হয় বিস্তর, বিশেষ করে সিনেমার খাইষ্টা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে নিজের মেয়ের সঙ্গে প্রথম পরিচয়— যে দৃশ্য কাঁদিয়েছে হাজারো দর্শককে।
এক পর্যায়ে দর্শক-নেটিজেনের মন্তব্যেই ধরা পড়ে এ দৃশ্যের গভীরতা। সিনেমার কাহিনি ও তাদের মন্তব্য অনুসারে, খাইষ্টা জাহাঙ্গীর বেলাশেষে জানতে পারে তার একটি সন্তান আছে।
ছেলেবেলায় মা-বাবা হারানো, জেসমিনের চলে যাওয়া— সব মিলিয়ে যে পাথর বসেছিল তার বুকে, মেয়েকে দেখে সেটা ভেঙে যায়। তাই তো জাহাঙ্গীর বলে ওঠেন, ‘মা রে, আমি যদি জমিদার হইতাম, আমার জমিদারি এক খোঁচা দিয়া লিখে দিতাম। আমি যদি রিক্সাওয়ালা হইতাম, সারা ঢাকা শহর তোমারে লইয়া ঘুইরা বেড়াইতাম।’ বলা বাহুল্য, জাহাঙ্গীরের এই সংলাপ হাজারো বাবার অদৃশ্য আবেগকে ছুঁয়ে যায়।
খাইষ্টা জাহাঙ্গীরের বড়বেলার চরিত্রে জাহিদ হাসান ছিলেন অসাধারণ। আর তার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মডেল ও অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল। তবে অভিনয়ের নৈপুণ্যে স্বাভাবিকভাবেই বেশি আলোচনায় ছিলেন জাহিদ হাসান।
সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে আলোচিত, আবেগি এই দৃশ্য নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়েন জাহিদ হাসান। অভিনেতাকে প্রশ্ন ছোঁড়া হয়, “আপনি উৎসবে এত ডায়নামিক একটা অভিনয় করেছেন— একদিকে আপনি খাইষ্টার মতো আচরণ করেছেন, এবং শেষের দিকে আপনার যে সংলাপ- যা দেখে চোখ ভেঁজেনি, এমন দর্শক হয়তো নেই; ‘মা, যদি জমিদার হইতাম, আমার সবকিছু তোমাকে দিয়ে দিতাম।’ আপনি কোন আবেগ নিয়ে কথাটি বলেছিলেন?”
এ সময় জাহিদ হাসানের উত্তর ছিল ব্যক্তিগত অনুভূতিতে ভরপুর। তার কথায়, ‘প্রত্যেকটা বাবার ভেতরেই একটা আবেগ থাকে। ওই দৃশ্য করতে গিয়ে আমার নিজের মেয়ের কথাই মনে পড়েছিল। ছোট ছোট কিছু অভিজ্ঞতা আছে, যা অনেকেই রিলেট করতে পারবে, আবার কেউ পারবে না। আমি চেষ্টা করেছি খাইষ্টা জাহাঙ্গীরকে এমনভাবে তুলে ধরতে, যাতে বোঝা যায়, ভেতরে ভেতরে সে সবাইকেই ভালোবাসতো।’
অভিনেতা আরও বলেন, ‘ভাইগ্না যখন আমাকে গিফট দেয়, আমি সেটাকে জড়িয়ে ধরতে চাই, কিন্তু জীবনে কাউকে তো কাছে পাইনি। এই ইনসিকিওরিটি থেকেই একধরনের রাগ তৈরি হয়। শেষ সিকোয়েন্সে খাইষ্টার কাছে ছিল শুধু কমিউনিটি সেন্টার। আর ওইদিন মেয়ে এসে সবকিছু জানল। যদি এই সংলাপটা তুমি বলতেও, আমরাও কেঁদে ফেলতাম।’
উল্লেখ্য, ‘উৎসব’ সিনেমাকে জাহিদ হাসানের জন্য অনেক দর্শক ‘ওয়ান ম্যান শো’ বলেও মন্তব্য করেছে। কারণ পুরো সিনেমার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন জাহিদ হাসান ওরফে খাইষ্টা জাহাঙ্গীর। এই সিনেমায় জাহিদ হাসান যদি খাইষ্টা জাহাঙ্গীর না হয়ে উঠতেন, তবে ‘উৎসব’ হতো একটি ব্যর্থ প্রকল্প- এমনটাও মনে করেন দর্শক।
এদিকে, স্বনামধন্য মডেল, নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌকে ভালোবেসে ১৯৯৭ সালে বিয়ে করেছিলেন জাহিদ হাসান। তাদের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান। তাদের মেয়ের নাম জোহায়রা জাহিদ পুষ্পিতা, ও ছেলে জারিফ জাহিদ সাইম।
এসএন