মৌলিক সংস্কার ছাড়া মানুষের মুক্তি আসবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
তিনি বলেছেন, ‘গত ৫৪ বছরে দেশের মানুষ নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাসীন সরকার নিজেদের ও গোষ্ঠীর স্বার্থে আখের গুছিয়েছে। এমনকি মানুষের ভোটের অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে সমাজব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার করতে হবে।’
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সিপিবির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির দশম সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গনে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ মো. জামাল। সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক আসমা খানম, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আহমেদ হোসেন, সিপিবি নেতা অসিত রঞ্জন পাল, দেবদাস সিংহ, মো. ইসহাক, শাহীন খান, কৃষক সমিতির সভাপতি এম এ রকিব, বাংলাদেশ জাসদ নেতা অধ্যাপক জাফর মো. আকসির, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিলাল বণিক, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, উদীচী জেলা সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস রহমান প্রমুখ।
সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এখন যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, তা একপেশে, বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার চিন্তা করে সংস্কারের প্রস্তাব করা হচ্ছে। বাহাত্তরের সংবিধানের অসম্পূর্ণতা আছে। এগুলো দূর করতে হবে। এ জন্য আমরা ১৯৭২ সাল থেকে লড়াই করছি।
বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ঠিক রেখে এই অসম্পূর্ণতা দূর করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা শক্তিশালী স্থানীয় সরকার চাই। স্থানীয় উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হবে স্থানীয় সরকার। আর আইন প্রণয়ন, জাতীয় বাজেটসহ জাতীয় দায়িত্ব পালন করবে জাতীয় সংসদ। এ জন্য দক্ষ ও কর্তৃত্বসম্পন্ন স্থানীয় সরকার ও কার্যকর জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এখন যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা বলা হচ্ছে, তা আমাদের দেশের জন্য অপ্রয়োজনীয়। এটা দিয়ে মানুষের মুক্তি আসবে না। সাধারণ মানুষের টাকায় হাতি পোষার মতো হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গত এক বছরে এই সরকার মানুষকে শান্তি দিতে পারেনি। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের দিন কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। দেশে বেকারত্ব, দারিদ্র্য বাড়ছে। এ আস্থা থেকে মুক্তি পেতে পুরো ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে হবে। এ জন্য বাম-গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাতে হবে।’ এ জন্য সচেতন দেশবাসীকে বামপন্থী শক্তির পতাকা তলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে হাসান তারিক বলেন, দেশের যাবতীয় সম্পদ দেশি-বিদেশি লুটেরা লুট করছে। দেশের বন্দর, প্রাকৃতিক সম্পদ, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমুদ্র এলাকা এ সরকার আমেরিকা ও বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এসব বিষয়ে জনগণকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। তিনি অতি দ্রুত নির্বাচন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান জানান।
উদ্বোধনী সমাবেশের পর এক বর্ণাঢ্য র্যালি শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। এরপর স্থানীয় পার্টি কার্যালয়ে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়।
এমআর/এসএন