সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, ‘মত দিলেই আপনি রাজাকার, দেশদ্রোহী, শত্রু। কথা বললেই হামলা, সমাবেশ ডাকলে ১৪৪ ধারা। কাদের সিদ্দিকীর ওপর হামলা সেটাই আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল। এভাবে কি গণতন্ত্র টিকে থাকে? নাকি এটা ভয়ের শাসন?’
তিনি বলেন, “গতকাল রাতের ঘটনার রেশ আজকেও দেখলাম।
সেটা হচ্ছে কাদের সিদ্দিকীকে ঘিরে গভীর রাতে তার বাড়িতে হামলা হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। তারপর বাসাইলে মুক্তিযোদ্ধাদের একটা সমাবেশ ছিল সেই সমাবেশের বিপরীতে আরেকটা সংগঠন ওই ‘জুলাই’ নাম দিয়ে তারা একটা সমাবেশ ডেকেছে। প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
এটাই কি গণতন্ত্র আর এভাবে কি গণতন্ত্র টিকে থাকে?’
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’-তে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, ‘কাদের সিদ্দিকীর নানা বক্তব্য নিয়ে আমি সমালোচনা করেছি। গতকালকে যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন তখন তিনি একটা বক্তব্য দিয়েছিলেন যে আমরা শেখ হাসিনাকে চাই না, বঙ্গবন্ধুকে চাই। এই বক্তব্যেরও আমি সমালোচনা করেছি।
এটা একটা কৌশল। শেখ হাসিনাকে চাই না। তিনি যদি হাসিনাকে না চাইতেন তাহলে ইলেকশনের আগ দিয়ে গণভবনে তার বাসায় গেলেন কিভাবে? এসব নিয়ে সমালোচনা করেছি।
সমালোচনা করি বলেই কি কারো বাড়িতে হামলা করব, সমাবেশে হামলা করব, সমাবেশ করতে দেব না, তাকে কথা বলতে দেব না। এটা কি ঠিক? আমরা কি পরিবর্তিত গণতন্ত্র এটাই চেয়েছিলাম যে ভিন্ন মতের কাউকে আশ্রয় দেব না, প্রশ্রয় দেব না? কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মনোভাব সম্পন্ন হইতে পারে? উনি কি আওয়ামী লীগের কোনো মন্ত্রী ছিলেন? এমপি ছিলেন?’
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, সেখানে বিরোধী মানেই রাজাকার, দেশদ্রোহী কিংবা বিএনপির দোসর এই ভাষায় মানুষকে দমন করা হচ্ছে।
এভাবে তারা একটা ভিন্নধারার রাজনীতি চালু করেছে, যেটা এখনো চলছে। অথচ আমরা চেয়েছিলাম এই রাজনীতির অবসান, চেয়েছিলাম একটি সুন্দর ও সম্মানজনক গণতান্ত্রিক পরিবেশ।’
মোস্তফা ফিরোজ আরো বলেন, “কাদের সিদ্দিকী একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ‘কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ’ নামে একটি ছোট দল চালান। তাকে এবং তার দলকে নিয়েও সহিংসতা হচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়, তার দলটি হয়তো তার মৃত্যুর পর টিকবে না, হয়তো তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ছাড়া দলের শক্তি খুব কম। কিন্তু তাই বলে তাকে বা তার কর্মীদের ওপর হামলা করবেন? তার বাড়িতে ভাঙচুর করবেন? একজন প্রবীণ মানুষ যখন বলে, ‘আমার বাড়ি ভেঙে যদি দেশের শান্তি আসে, তাহলে ভাঙুক,’ তখন সেটা কোনো বাহাদুরি না ওটা একজন মানুষকে অসম্মানের চূড়ান্ত পর্যায়ে ঠেলে দেওয়ার পর তার হৃদয়ের কথা।”
তিনি বলেন, “আমরা আজ এমন এক রাজনীতির মধ্যে ঢুকে পড়েছি, যেখানে মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার নেই, সহানুভূতি নেই। রাজনৈতিক বিরোধীদের যেন মানুষই মনে করা হচ্ছে না। আপনারা কাউকে সহ্য করতে পারবেন না, কেউ ভিন্ন কথা বললেই তাকে শেষ করে দিতে চান এভাবে কি গণতন্ত্র চলে? এভাবে তো কেবল আরেকটা ভুয়া নির্বাচন, আরেকটা ‘ডামি’ রাজনীতি তৈরি হবে।”
পিএ/টিএ