নানা রোগের মহাওষুধ লবঙ্গ

লবঙ্গ, আমাদের কাছে মসলা হিসেবে সুপরিচিত। তবে ইতিহাস ও ভেষজ হিসেবে এর ব্যবহার অতি সুবিদিত নয়। অতি প্রাচীনকাল থেকেই লবঙ্গের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। লবঙ্গে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। লবঙ্গের প্রধান রাসায়নিক উপাদানগুলো হলো- ইউজেনল ও ক্যারিওফাইলিন।

লবঙ্গের ইংরেজি নাম Clove। এর বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium aromaticum। আগের নাম ছিল Eugenia caryophyllus। পরিবার Myrtaceae। এর ঘনিষ্ঠ প্রজাতি হচ্ছে কালোজাম ও গোলাপজাম।

USDA-এর রেফারেন্স অনুসারে ১০০ গ্রাম লবঙ্গে ৬৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৩ গ্রাম টোটাললিপিড, ২ গ্রাম সুগার, ২৭৪ কিলো-ক্যালোরি শক্তি ও ৩৩ গ্রাম ডায়েটারিফাইবার থাকে।

খনিজের মধ্যে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক কমবেশি সবই আছে। আর ভিটামিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বি-৬, বি-১২, সি, এ, ই, ডি, কে, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ফোলেট রয়েছে। 

‘আয়ুর্বেদিক রিসার্চ সেন্টার অফ মিনেসোটা' তাদের প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, খাওয়ার আগে বা পরে মাত্র দু'টি লবঙ্গের যথাযথ ব্যবহার বহু রকমের রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে।

চলুন জেনে নিই প্রতিদিন সকালে ও রাতে ২–৩টি করে লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা-

দাঁতের ব্যথা কমায়
লবঙ্গ দাঁতের ব্যথা দূর করে। মাড়ির ক্ষয় নিরাময় করে। লবঙ্গতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু বিক্রিয়া করে যে নিমেষে দাঁতের যন্ত্রণা কমে যায়। প্রায় সব টুথপেস্টের কমন উপকরণ এই লবঙ্গ।

বমি বমি ভাব দূর করে
ট্রেনে বা বাসে যাওয়ার সময় যদি মাথা ঘুরতে থাকে ও বমি এসে যায়, তাহলে মুখে একটি লবঙ্গ রেখে সেই রস চুষলে বমি ভাব ও মাথা ঘোরা কমে যাবে। গর্ভবতী মায়েরা সকালের বমিবমি ভাব দূর করতে লবঙ্গ চুষতে পারেন। লবঙ্গের সুগন্ধ বমিবমি ভাব দূর করে।

সর্দি-কাশি ও ঠাণ্ডা লাগা কমায়
সর্দি-কাশির মহৌষধ হিসেবে লবঙ্গ বহু বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ চিবিয়ে রস গিলে খেলে বা লবঙ্গ মুখে রেখে চুষলে সর্দি, কফ, ঠাণ্ডা লাগা, অ্যাজমা, গলা ফুলে ওঠা, রক্ত পিত্ত আর শ্বাস কষ্টে সুফল পাওয়া যায়।

সাইনাস ইনফেকশনের প্রকোপ কমায়
সাইনোসাইটিস রোগে লবঙ্গ খুব উপকারি। সাইনোসাইটিসের রোগীদের চিকিৎসায় লবঙ্গ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লবঙ্গে বিদ্যমান ইগুয়েনাল নামে একটি উপাদান আছে, যা সাইনাসের কষ্ট কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

মাথা ব্যথা ও মাথা যন্ত্রণা কমায়
ধোঁয়া, রোদ ও ঠাণ্ডার জন্য শ্লেষ্মা বেড়ে নানা ধরনের মাথা ব্যথা বা মাথার রোগ দেখা দিতে পারে। মাথা ব্যথা কমাতে লবঙ্গের উপকারিতা অপরিসীম।

পেট ফাঁপা ও পেটের অসুখ উপশম করে
পেট ফাঁপা রোগ নিরাময়ে লবঙ্গ ব্যবহার হয়। লবঙ্গ এনজাইম বৃদ্ধি করে বদ হজম, অগ্নি মান্দ্য (খিদে না হওয়া), পেটের গ্যাস ও বায়ু, পেট ব্যথা, অজীর্ণ, এমনকি কলেরা বা আন্ত্রিক রোগের উপকার করে।

কামোদ্দীপক ও যৌন রোগে উপকারি
লবঙ্গ কামোদ্দীপক। এর সুবাস অবসাদ দূর করে, শরীর ও মনের ক্লান্তি ঝরিয়ে দেয়। যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে।

ব্রণের চিকিৎসায়
লবঙ্গ ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ব্রণের দাগ দূর করতে লবঙ্গের পেস্ট ব্রণের ওপরে দিয়ে রাখুন। লবঙ্গ খেলেও ব্রণ হবে না।

রক্ত পরিশোধন করে
লবঙ্গ শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদানগুলো সরিয়ে রক্তকে পরিশোধন করতে ভূমিকা রাখে। রক্তকে পরিষ্কার করে।

খাবারে রুচি বৃদ্ধি করে
বিভিন্ন রোগ বিশেষ করে পেটের রোগে এবং জ্বরে ভোগার পরে খাবারে অরুচি দেখা দেয়। ভাত-রুটি, মাছ-মাংস, মিষ্টান্ন বা যে কোন উপাদেয় খাবারে পর্যন্ত রুচি হয় না সেক্ষেত্রে লবঙ্গ চূর্ণ সকালে খালি পেটে দুপুরে খাবারের পরে খেলে খাবারে রুচি ফিরে আসবে।

ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরি হতে পারে না। গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, লবঙ্গের রস শরীরের ভিতরে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, এবং রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

মুখের রোগ সারিয়ে তুলে ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
মাড়ির সমস্যা, যেমন- জিনজিভাইটিস ও পেরিওডনটাইটিস হলে লবঙ্গ ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। লবঙ্গের মুকুল (মাথার অংশ) ওরালপ্যাথোজেনের বৃদ্ধিরোধ করে আপনার মুখটি কেসকল রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।

ত্বক সুরক্ষায়
ত্বকের ফোলা ভাব কমাতে লবঙ্গ তেল দারুণ কাজে আসে। দিনে দুবার অল্প পরিমাণে লবঙ্গ তেল ত্বকে মাখতে পারেন। বেশি মাখলে ত্বক পুড়ে যেতে পারে।

লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
লবঙ্গে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের মধ্যে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শুধু লিভার নয়, শরীরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
লবঙ্গ ব্রেস্টক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: