ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ নিরপেক্ষ হয়েছে কিনা-এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বতন্ত্র প্যানেলের কেন্দ্রীয় সদস্য পদপ্রার্থী মো. সজীব হোসেন। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
স্বতন্ত্র প্যানেলের কেন্দ্রীয় সদস্য পদপ্রার্থী মো. সজীব হোসেন আরও বলেন, গতকাল শহিদুল্লাহ হল এর ভোট প্রদান করি কার্জন হলে। যেখানে তিনটি প্রধান পদে নিম্ন রুপে ভোট প্রদান করেন ভিপি পদ প্রার্থী আবিদ, জিএস পদ প্রার্থী সম্রাট, এজিএস পদ প্রার্থী আশিকুর রহমান জীম। যার মধ্যে জিএস সম্রাটের ভোট ০ দেখানো হয়। আমার প্রশ্ন আমি নিজ হাতে ভোট দিলাম আমার ভোট গেল কই?
ব্যালট পেপার যদি বাতিল হয় সেটা উপস্থাপন করতে হবে, কারণ বাতিল হওয়ার কথা নয় বলেও জানান তিনি। রাকিব হোসেন গাজী স্বাস্থ্য ও পরিবেশ পদপ্রার্থী ছিলেন।
তিনি বলেন, কেন্দ্রের ১ মিটারের ভেতরেও অনেকে ভোটার স্লিপ প্রদান করেছেন, যা আচরণ বিধির লঙ্ঘন ছিল। কিন্তু কমিশনের তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এগুলো কী পক্ষপাত দুষ্ট আচরণ নয়। যে নির্বাচন কমিশনের সবার সাথে একই আচরণ করার কথা থাকলেও, একক গোষ্ঠীর পক্ষে ভালো আচরণ আবার কারও সাথে খারাপ আচরণ করেছে যা গ্রহণযোগ্য নয়।
ঘোষিত ফলাফল- ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) সর্বমোট ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৬৮১ ভোট।
জিএস পদে এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী তানভীর বারী হামীম ৫ হাজার ২৮৩ ভোট পেয়েছেন। প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের আবু বাকের মজুমদার ২ হাজার ১৩১।
এজিএস পদে মহিউদ্দীন খান পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত জোটের ফাতেমা তাসনিম জুমা (১০৬৩১), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে একই প্যানেলের ইকবাল হায়দার (৭৮৩৩), কমন রুম-রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে একই প্যানেলের উম্মে সালমা (৯৯২০), আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে এই প্যানেলেরই জসীমউদ্দিন খান (৯৭০৬) (যিনি জুলাইয়ে চোখ হারান), এই প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদে আরমান হোসেন (৭২৫৫), ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে একই প্যানেলের আসিফ আব্দুল্লাহ (৯০৬১), এই প্যানেল থেকেই ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম (৯৩৪৪), স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে একই প্যানেলের আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ (৭০৩৮), মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে সাখাওয়াত জাকারিয়া (১১৭৪৭)বিজয়ী হয়েছেন।
এদিকে তিনটি সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তারা হলেন- সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ (৭৭৮২), গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জুলাই আন্দোলনের আলোচিত মুখ সানজিদা আহমেদ তন্বি (১১৭৭৮) এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে যুবাইর বিন নেছারী (৭৬০৮) জয় লাভ করেন।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে সদস্য হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন সাবিকুন্নাহার তামান্না (১০ হাজার ৪৮ ভোট), সর্বমিত্র (৮ হাজার ৯৮৮ ভোট), আনাস ইবনে মুনির (৫ হাজার ১৫ ভোট), ইমরান হোসেন (৬ হাজার ২৫৬), তাজিনুর রহমান (৫ হাজার ৬৯০), মেফতাহুল হোসেন আল মারুফ (৫ হাজার ১৫), বেলাল হোসাইন অপু খান (৪ হাজার ৮৬৫), রাইসুল ইসলাম (৪ হাজার ৫৩৫), মো. শাহিনুর রহমান (৪ হাজার ৩৯০), মোছা. আফসানা আক্তার (৫ হাজার ৭৪৭) ও রায়হান উদ্দীন (৫ হাজার ৮২ ভোট)। সদস্য পদে স্বতন্ত্র থেকে বিজয়ী হয়েছেন হেমা চাকমা (৪ হাজার ৯০৮ ভোট) এবং উম্মু উসউয়াতুন রাফিয়া (৪ হাজার ২০৯ ভোট)।
এরইমধ্যে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন আবিদুল এবং উমামা ফাতেমা। আব্দুল কাদেরও নির্বাচনের ব্যাপক সমালোচনা করে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন।
বিজয়ী সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে তিনিও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন। এছাড়া ছাত্রদলকে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ডাকসুর ভোটগ্রাহণ চলে। এবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে ডাকসু এবং হল সংসদে শিক্ষার্থীদের ভোটগ্রহণ চলে। এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। পাঁচ ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ ভোটের বিপরীতে ১৩ ছাত্র হলে এই সংখ্যা ২০ হাজার ৯১৫ জন।
ডাকসুতে ২৮টি পদের জন্য মোট ৪৭১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রতি হল সংসদে ১৩টি করে ১৮টি হলে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪টি। এসব পদে ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন ১ হাজার ৩৫ জন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার ভোটারদের ৪১টি ভোট দিতে হয়েছে।
এসএস/এসএন