সম্প্রতি লন্ডনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের গাড়িতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ডিম নিক্ষেপ ও এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে আলোচনা করেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল।
আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, নাহিদ ইসলাম ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, মাহফুজ আলম গণ-অভ্যুত্থানের পরে অন্তর্ভুক্তি এবং দায় ও দরদের রাজনীতির কথা বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটেনি, মাহফুজ আলম যে রাজনীতির কথা বলেছেন সেই রাজনীতির পথে বাংলাদেশ হাঁটছে না। মানে কি? বাংলাদেশের যে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার আছে, সে সরকার হাঁটছে না।
এই সরকারের একসময় অংশ ছিলেন নাহিদ ইসলাম। তখন কি হাঁটতো? নাহিদ ইসলাম যতদিন সরকারের অংশ ছিলেন, ততদিন উনারা দায় ও দরদের রাজনীতির পথে এবং অন্তর্ভুক্তির রাজনীতির পক্ষে কি হাঁটতেন? অন্তর্ভুক্তি রাজনীতির পরিবর্তে আমরা তো দেখছি যে বিভক্তির রাজনীতি এখন চলছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ‘কথা’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এসব কথা বলেন তিনি।
মাসুদ কামাল বলেন, এতদিন সবাই মনে করতেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বুঝি অন্তর্বর্তী সরকারেরই আশীর্বাদপুষ্ট একটা দল এবং অনেকে একে কিংস পার্টিও বলতেন।
আমরা এখন দেখলাম, এই কিংস পার্টির প্রধান আহ্বায়ক মিস্টার নাহিদ ইসলাম একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন, স্ট্যাটাসটা প্রকারান্তরে সরকারের বিরুদ্ধে যায় এবং তিনি বলেছেন যে মিস্টার মাহফুজ আলম, যিনি এই নাহিদ ইসলামের গত জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধা এবং ড. ইউনূস যাকে পুরো আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে একটা খুবই হাই লেভেলের মঞ্চে সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। সেই মাহফুজ আলমের পক্ষে এবং যেটা সরকারের বিরুদ্ধে যায়, মাহফুজ আলমকে যথেচ্ছ ব্যবহার করে সরকার এবং উপদেষ্টারা এখন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন বলে নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, যে ঘটনার প্রেক্ষিতে এই পোস্টটা দিয়েছেন, সেই ঘটনাটা কি? মাহফুজ আলম লন্ডনে শুক্রবার দিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ৭টার দিকে সোয়াস ক্যাম্পাসের পেছনের রাস্তা দিয়ে হাই কমিশনের গাড়িতে বের হচ্ছিলেন এবং সেখানে উনি যে গাড়িতে ছিলেন, সেই গাড়িতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন জড়ো হয়ে ডিম নিক্ষেপ করেছেন। গাড়ির কাচে ডিমগুলো যে লেগেছে- এই ধরনের ভিডিও দেখেছি।
এই ভিডিওগুলো বিচিত্র ভিডিও। বিচিত্র এই কারণে বলছি, এই ভিডিওগুলো আওয়ামী লীগের লোকজন এসব ফেসবুকে অথবা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এক ধরনের উল্লাস প্রকাশ করেছেন। আবার বিপরীত দিকে যারা এই সরকারের যারা সমর্থক অথবা এনসিপির যারা সমর্থক, তারা পোস্ট করে আওয়ামী লীগের যে ফ্যাসিবাদী আচরণ, সেই আচরণের কিছু নিন্দা করেছেন। এটা হতেই থাকবে।
কারণ আওয়ামী লীগের এখন যুক্তি, মানে তাদের বক্তব্যটা হলো যে আমাদের তো তোমরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়েছো।
কোথায় বন্ধ করে দিয়েছো? দেশে। বিদেশে বসে আমরা করব এগুলো। তোমরা তো আমাদের কথা বলতে দাও না। এখন কথা বলতে না দেওয়ার যে কালচারটা সেটাই আমরা কেন অর্জন করলাম এবং কেন সেটা আমরা প্রয়োগ করলাম- সেটা নিয়ে আরেক বিতর্ক। যা-ই হোক, এগুলো চলতে থাকবে। কিন্তু আপনি একটা কিছু করবেন একটা বড় দলের বিরুদ্ধে। আপনি একটা অ্যাকশন নেবেন, আর তারা চুপচাপ বসে থাকবে ভদ্র ছেলের মতো, বাংলাদেশে তো সেই প্র্যাকটিসটা আমরা আগে দেখিনি। কাজেই যা হবার তা-ই হচ্ছে।
নাহিদ ইসলামের ফেসবুক স্ট্যাটাসে একটি অংশ উল্লেখ করে মাসুদ কামাল বলেন, তিনি লিখেছেন, মাহফুজ আলমের উপর হামলা মৌন সম্মতি যারা তৈরি করেছে তারাও ভুগবে। ফ্যাসিবাদ বিভাজনের রাজনীতি করে। উনি বলতে চাচ্ছেন, এই মাহফুজ আলমের উপর যে হামলাটা হয়েছে, এই হামলার মৌনসম্মতিটা যারা তৈরি করেছে এবং উনি বলেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারই কাজটা করেছে। তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের কথা বলা হচ্ছে এবং সরকারের কতিপয় উপদেষ্টার কথা বলা হচ্ছে। বলছে যে তারাও ভুগবে। মানে উপদেষ্টারা ভুগবে। কিন্তু তারপর বলছে, ফ্যাসিবাদ বিভাজনের রাজনীতি করে। মানে এই যে বিভাজনের রাজনীতি হিসেবে অভিহিত করেছে, বিভাজনের রাজনীতি কে করছে? ফ্যাসিবাদ করছে। তার মানে এই সরকারে যারা আছে, যারা মাহফুজ আলমের উপর হামলাটাকে মৌন সম্মতি দিয়েছেন, তারা আসলে প্রকারান্তরে ফ্যাসিবাদী। ফ্যাসিবাদের ডেফিনেশনটা কত সহজ হয়ে যাচ্ছে!
নাহিদ ইসলাম প্রকারান্তরে বললেন যে সরকারের মধ্যে যারা উপদেষ্টা হিসেবে আছেন, তাদের মধ্যে অনেকে আছেন ফ্যাসিবাদের দোসর অথবা নিজেরাই ফ্যাসিবাদী। তারপরে বলেছেন, মাহফুজ আলম গণ-অভ্যুত্থানের পরে অন্তর্ভুক্তি এবং দায় ও দরদের রাজনীতির কথা বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটেনি, মাহফুজ আলম যে রাজনীতির কথা বলেছেন সেই রাজনীতির পথে বাংলাদেশ হাঁটছে না। মানে কি? বাংলাদেশের যে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার আছে, সেই সরকার হাঁটছে না। এই সরকারের একসময় পার্ট কিন্তু নাহিদ ইসলাম সাহেব ছিলেন। তখন কি হাঁটত? নাহিদ ইসলাম সাহেব যতদিন সরকারের অংশ ছিলেন, ততদিন উনারা দায় ও দরদের রাজনীতির পথে এবং অন্তর্ভুক্তির রাজনীতির পক্ষে কি হাঁটতেন? অন্তর্ভুক্তি রাজনীতির পরিবর্তে আমরা তো দেখছি যে বিভক্তির রাজনীতি এখন চলছে।
পিএ/টিএ