ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গার দুটি ইউনিয়ন আলগী ও হামিরদী পাশের নগরকান্দা-সালথা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনের সাথে জুড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে দুটি মহাসড়ক ও দুটি রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভাঙ্গার দুটি ইউনিয়ন ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনে ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লার সঙ্গে আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় এ সিদ্ধান্ত জানান।
এর আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী দুই-তিনজন নেতার সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন ভাঙ্গার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান। ইউএনও কয়েকজন নেতাকে তার কার্যালয়ে আসতে বলেন।
এক আন্দোলনকারী বলেন, আমরা প্রথমে ইউএনওর প্রস্তাবে রাজি হইনি। কেননা আমাদের ঘাড়ে একাধিক মামলা ঝুলছে। কাকে কোন মামলায় ঢুকিয়ে দেয় এ নিয়ে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। এ ছাড়া ভাঙচুরের আগেই দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে ১৪ সেপ্টেম্বর, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম. ম. সিদ্দিককে। তাকে এখনো মুক্তি দেওয়া হয়নি। আন্দোলনকারীরা উপজেলায় গেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে না- এ মর্মে তারা শঙ্কার কথা ইউএনওকে জানান। এর প্রেক্ষিতে ইউএনও আন্দোলনকারীদের শতভাগ নিশ্চয়তা দেন যে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে না।
এ আশ্বাসের পর ১৮-২০ জন আন্দোলনকারী সন্ধ্যার পর ইউএনওর কার্যালয়ে গিয়ে তার সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনার একপর্যায়ে যোগ দেন ভাঙ্গা থানার ওসি মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, ইউএনও আমাদের জানান, এ বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। হাইকোর্ট ১০ দিনের সময় দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে রুল জারি করেছেন। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর এ রুলের জবাব দেওয়ার কথা। ইউএনও তাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেহেতু বিষয়টি আদালতে চলে গেছে সে অবস্থায় আদালতের রায় পর্যন্ত মহাসড়ক-রেলপথ অবরোধ থেকে বিরত থাকতে হবে।
আন্দোলনকারীরা মামলার বিষয় তুলে ধরে ইউএনওর কাছে নিরীহ কাউকে হয়রানি না করার নিশ্চয়তা চান। পাশাপাশি তারা বলেন, যারা ভাঙচুর ও সহিংসতায় অংশ নিয়েছে ভিডিও ফুটেজ ধরে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। ইউএনও তাদের প্রস্তাবে সম্মত হন এবং এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সাথে আন্দোলনকারীদের দেখা করানোর প্রস্তাব দিলে আন্দোলনকারীরা সম্মত হন।
ইউএনও আন্দোলনকারীদের ফরিদপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসার জন্য গোল্ডেন লাইন পরিবহনের দুটি বাস বরাদ্দ দেন। সেই বাসে চড়ে শতাধিক আন্দোলনকারী আজ রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লার সাথে আলোচনা করেন। দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এ আলোচনা চলে। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুর জলিল ও এক সেনা কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনার পর এ সভার বিবরণ দিয়ে ভাঙ্গা উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক হামিরদী ইউনিয়নের মাঝিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা রবীন সোহেল বলেন, জেলা প্রশাসক আমাদের বলেছেন আপনাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দেইনি। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতকারী ঢুকে সহিংসতা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তবে এ সহিংসতায় যারা জড়িত নন তাদের কোনো হয়রানি করা হবে না। বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। রায় আমাদের পক্ষে আসবে বলে আশা করছি। রায় না হওয়া পর্যন্ত আপনারা আন্দোলন স্থগিত করুন এবং নির্বিঘ্নে জীবন-যাপন করুন।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা হাইকোর্টের শুনানি না হওয়া পর্যন্ত চলমান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করছি।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, ওই এলাকার জনগণের পালস আমি ধরতে পেরেছি। আমরা সেভাবেই নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছি। আন্দোলনকারীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে।
তিনি বলেন, তবে এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) যারা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, ভাঙ্গা থানা ও ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গেজেটে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করার আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট এ রুলে জবাব দেওয়ার জন্য ১০ দিন সময় বেঁধে দেন।
আগামী সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহবুবুর রহমানসহ পাঁচজন হাইকোর্টে এ আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
এবি/এসএন