রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক সফর ঘিরে প্রশ্ন তুললেন জিল্লুর রহমান

নিউইয়র্কে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক সফর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেছেন, এই সফর ‘রাজনৈতিক সফর’ বা ‘পিকনিক’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন -এই সফরের উদ্দেশ্য কী? কার স্বার্থে এই সফর এবং কেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করা হচ্ছে?

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে জিল্লুর রহমান এসব কথা বলেন।

জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে একটি বহুল প্রত্যাশিত রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে -শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিদায় নিশ্চিত হয়েছে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।

অনেকেই এই পরিবর্তনের আশা করেছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানুষের অনেকের চাওয়া ছিল কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতান্ত্রিক উত্তরণ কিংবা জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। বরং দেশ এক নতুন ও অপ্রত্যাশিত পথে যাত্রা শুরু করেছে।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা হওয়া উচিত ছিল নিরপেক্ষভাবে দেশকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল এই সরকারের উপদেষ্টারা দেশের বাইরে সময় কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টাসহ কয়েকজন বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন এবং এটি এক প্রকার ‘রাজনৈতিক সফর’ বা ‘পিকনিক’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এই সফরে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তিনি বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। এতে প্রমাণ মেলে যে, দেশের মূল রাজনৈতিক দলগুলো তার নেতৃত্বে বা ছত্রচ্ছায়ায় একত্র হচ্ছে -যা তার জন্য বড় ‘অর্জন’, কিন্তু বিএনপির জন্য বড় ‘বিসর্জন’।

তিনি আরো বলেন, ‘দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল ও বিভ্রান্ত। নিজের অবস্থান থেকে ক্রমাগত আপস করতে করতে আজ তারা ছোট ছোট দলগুলোর সঙ্গে সমান প্ল্যাটফর্মে নেমে এসেছে। এই দুর্বলতা, নেতৃত্বহীনতা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব তাদের আরো পিছিয়ে দিচ্ছে।

একই সঙ্গে জামায়াত, এনসিপি ও অন্যান্য দলও নিজেদের শক্তি ও অবস্থান তৈরি করতে চাইছে -ফলে একটি ‘ভাগাভাগির রাজনীতি’ শুরু হয়েছে। সরকার এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে একটি সুবিধাজনক রাজনৈতিক বিন্যাস তৈরি করার চেষ্টা করছে, যেখানে সবাইকে কিছু দিয়ে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে দুর্বল করা যাবে।

জিল্লুর রহমান বলেন, দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের’ নামে যে বোঝাপড়া হচ্ছে তা মূলত গণতন্ত্রকে কলুষিত করছে। রাজনৈতিক শক্তিগুলো যখন নিজেদের আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতার ভাগে অংশ নিতে চায়, তখন জনগণের অধিকার, ভোট এবং প্রতিনিধিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। সরকারও নিজেদের ইমেজ তৈরিতে ব্যস্ত। বিভিন্ন ‘সার্ভে’র মাধ্যমে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে, যদিও অতীতেও আমরা দেখেছি, এই সার্ভেগুলোর ফলাফলের সঙ্গে বাস্তবের মিল ছিল না। শেখ হাসিনা আমলে যেভাবে সার্ভে করে তার জনপ্রিয়তা দেখানো হতো, আজও একই পন্থা অনুসরণ করা হচ্ছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে -দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, প্রশাসনের অনিয়ম ও জবাবদিহিহীনতা আগের মতোই রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখন একটি গভীর সংকট বিরাজ করছে। গণতন্ত্রের নামে একটি চুক্তিভিত্তিক ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীনির্ভর রাজনীতি গড়ে উঠেছে, যা সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করছে। এখন প্রয়োজন একটি স্বচ্ছ, নৈতিক এবং গণভিত্তিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যেখানে রাজনীতি হবে জনগণের জন্য, ক্ষমতার জন্য নয়।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারত এজেন্ডা বাস্তবায়নে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বারবার হস্তক্ষেপ করে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Nov 16, 2025
img
উপদেষ্টা রিজওয়ানার বাসার সামনে হঠাৎ ককটেল বিস্ফোরণ Nov 16, 2025
img
সাইফের ঘটনার পর এবার কোরিয়ান গায়িকার বাড়িতে হামলা Nov 16, 2025
img
শাকসুর তফসিল ঘোষণা, ভোট ১৭ ডিসেম্বর Nov 16, 2025
img
শেখ হাসিনা মানেই বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার আ. লীগ মানেই বাংলাদেশ : কাদের সিদ্দিকী Nov 16, 2025
রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পালমেইরাসের বিরুদ্ধে ১-০ এর জয় পেলো সান্তোস Nov 16, 2025
আমরা আইন কানুন বানানোর দায়িত্বে না Nov 16, 2025
img
পুরো সময়টায় সজাগ ছিলাম : সুস্মিতা সেন Nov 16, 2025
img
শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ছাত্রশক্তির মশাল মিছিল Nov 16, 2025
img

স্কাই ডাইভিং নিয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা

বিমান থেকে ঝাঁপ, খোলেনি প্যারাশুট! Nov 16, 2025
img
দিল্লিতে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর ১ সহযোগী গ্রেপ্তার Nov 16, 2025
img
রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপ্লবের বাড়িতে হামলা Nov 16, 2025
img
জনগণ নির্বাচনের ট্রেনে উঠে পড়েছে : শামীম Nov 16, 2025
img
কাবাডি বিশ্বকাপে একই গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ভারত ও বাংলাদেশ Nov 16, 2025
img
বাংলাদেশ-কাতার সশস্ত্র বাহিনীর প্রেষণ জনবল নিয়োগে চুক্তি স্বাক্ষর Nov 16, 2025
img
আইপিএলকে টেক্কা দিতে পিএসএল নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত পিসিবির Nov 16, 2025
img
শিল্পীদের নিরাপত্তা চাইলেন তাসনিয়া ফারিণ Nov 16, 2025
img
বাংলাদেশের সাথে লড়াই হবে, জানিয়ে রাখল ভারত Nov 16, 2025
img
কারওয়ান বাজার মেট্রো স্টেশনের নিচে ককটেল বিস্ফোরণ Nov 16, 2025
img
প্রথম সপ্তাহতেই ধাক্কা খেলো দুলকার সালমানের কান্তা Nov 16, 2025