চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ও বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন বলেছেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা (আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া) গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ফাইল অফিসে না রেখে বাসায় নিয়ে যান। এ কারণে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আটকে থাকে। তিনটি প্রকল্প এখনও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আছে। উপদেষ্টা যখন দেখেন, এটা একটা প্রজেক্ট (প্রকল্প) তখন উনি ফাইলটা মন্ত্রণালয়ে রাখেন না। ঘরে নিয়ে চলে যান।
তিনি বলেন, ‘দিস ইজ দ্য প্যাথেটিক সিনারিও দ্যাট উই আর ফেসিং নাউ আ ডেইজ।’ ফাইল আছে, সবই আছে। খুব চমৎকারভাবে ওনারা বাসায় নিয়ে যান। মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যায়। এটা আমার গত ১১ মাসের অভিজ্ঞতা।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শাহাদাত হোসেন বলেন, আমার ফাইল কই, ফাইল তো বাসায় নিয়ে গেছে। বাসা থেকে ওটা আর পরে সিগনেচার হয় না। ওটা আর হাতে আসে না। এই ইউকের (যুক্তরাজ্যের) প্রজেক্টটা আমি আর করতে পারিনি। জাপান এবং কোরিয়ার প্রজেক্টও। এগুলো যদি আমি অনেক দ্রুত পেতাম, তাহলে চট্টগ্রাম শহর অনেক সুন্দর করে দিতে পারতাম।
তিনি বলেন, আমি এখনও দৌড়াচ্ছি, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। আমি আর কোথায় যাব? এর ওপর আর কেউ আছে? উনি চট্টগ্রামের মানুষ। ওনাকে বলেছি, ওনার পিএসকে বারবার বলেছি, কাজটা করে দেন। আমার মেশিনারিজ (যন্ত্রপাতি) খুব দরকার। আমার এখানে আসলে মেশিনারিজ নেই। যেগুলো আছে, সেগুলো ১৫-২০ বছরের পুরনো। গত সরকার একটি ড্রেনেজ সিস্টেম করতে গিয়ে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার মতো খরচ করেছে। আর এর যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৩০০ কোটি টাকার দরকার, খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট। কিন্তু সেখানে গিয়ে ফেল করলাম (ব্যর্থ হলাম)।
শাহাদাত হোসেন বলেন, ৪০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সংগ্রহের প্রকল্প, সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হয়ে গেছে ২৯৮ কোটি টাকা। প্রায় ১০০ কোটি টাকা কেটে দিল। কেটে দিয়ে সেখানে বলে দিল, ১৬০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে ৫ শতাংশ সুদে।
সিটি করপোরেশন একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। শুধু ৬০ কোটি টাকা তারা সিটি করপোরেশনকে বরাদ্দ দেবে। বাকিটা সিটি করপোরেশন থেকে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা। আমি এটা সমাধান করতে চাই। কিন্তু এখানে যে উপদেষ্টাকে পাঠানো হলো -মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আমি ওনার সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি। ওনাকে অনুরোধ করলাম। সবশেষ তিনি বললেন, প্রথমে জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান হোক, তারপর আপনি সেটা পাবেন। আমার ৫০-৬০ শতাংশ জলাবদ্ধতার সমস্যা ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। এখনও আমি সেটা পাচ্ছি না। কাজেই কথা আমরা বলি, কিন্তু এখানে কথার পেছনে কথা থাকে।
চসিক মেয়র বলেন, আমাদের ফান্ডিংয়ে যা বরাদ্দ করা হয়েছে, আমার মনে হয় সেটা নেওয়া দরকার। কারণ সরকারের আনলিমিটেড রাজস্ব নেই। সরকার চাইলেই বেশি অর্থ কাউকে দিতে পারে না। আমরা সব মন্ত্রণালয়, ফাইন্যান্স মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মারামারি করি। লিটারেলি মারামারি করছি। আমরা চাইলে বাজেটটা পাই না। যেহেতু মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ, আপনাকে যদি ৫ শতাংশ দিয়ে থাকে, তাহলে আপনি প্লিজ এই ফান্ড নিবেন এবং চট্টগ্রামের মানুষকে বঞ্চিত না করে এই ফান্ড দিয়ে কাজ শুরু করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম এম নুরুল আবসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
পিএ/টিএ