দুর্নীতির মামলায় ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া আলোচিত ফার্ম সাদিক অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান ইমরান হোসেনকে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কাঠগড়ায় খোশগল্প করতে দেখা গেছে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাদের ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
বেলা ১২টার দিকে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতর দিয়ে তাদের ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ সাব্বির ফয়েজের আদালতে ওঠানো হয়। এসময় আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন মতিউর রহমান। পরে কাঠগড়ায় রাখা বেঞ্চে বসেন মতিউর ও ইমরান। তারা একে অপরকে দেখে খোশগল্পে মেতে উঠেন। প্রায় ১০ মিনিট তাদের হাসিমুখে কথা বলতে দেখা গেছে।
দুদকের করা একটি মামলায় ইমরানকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করেন দুদক। দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় মতিউর রহমানের জামিন চেয়ে শুনানি করেন তার আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান (লিটন ঢালী)। শুনানি শেষে ইমরানকে গ্রেপ্তার এবং মতিউর রহমানের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন বিচারক সাব্বির ফয়েজ। মতিউর রহমানের মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সংস্থাটির ঢাকা জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ মতিউরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় এক কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ২১৬ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়াও আসামি অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫ কোটি ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৯ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জন করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ও ২৬(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইমরান হোসেনের মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রজনন অনুপযোগী আমদানি নিষিদ্ধ গবাদিপশু পালনে অবৈধ প্রক্রিয়ায় কর্তৃপক্ষের ভুয়া অনুমোদনপত্র তৈরি করে ব্রাহামা জাতের ১৫টি গরু আমদানি করে। সরকারি সিদ্ধান্ত মতে এসব গরু বাজারে সুলভ দামে বাজারে বিক্রি করার কথা থাকলেও সব বিধিবিধান লঙ্ঘন করে এবং নিলাম কমিটির মাধ্যমে নিলাম না করে ব্রাহামা জাতের ১৫টি গরু রেকর্ডপত্রে জবাই দেখানো হয়। বাস্তবে তারা এসব গরু জবাই না করে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি দমন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এর আগে গত ৩ মার্চ ইমরানকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। ওইদিন সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম অর্গানাইজডের উপ-পরিদর্শক জোনাঈদ হোসেন মোহাম্মদপুর থানায় মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে কারাগারে আটক আছেন তিনি।
গত বছরের ২ জুলাই মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে পৃথক নোটিশ পাঠায় দুদক। এসব নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর ২৯ আগস্ট মতিউর, তার দুই স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েসহ পাঁচজনের সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি মামলা করে দুদক। আর ১৪ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কোরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনায় আসেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক যুবক। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। বলা হয়, তার বাবা এনবিআর সদস্য এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান।
এরপর আলোচনা চলে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কোথায় কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এসব নিয়ে। এসব আলোচনার মধ্যে একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে মতিউর পরিবারের বিপুল বিত্তবৈভবের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পরে গত বছরের ৪ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানের নামে দুদক। অনুসন্ধানে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৬৫ বিঘা জমি, আটটি ফ্ল্যাট, দুটি রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট এবং তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পায় দুদক। মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার হিসাব ও শেয়ারবাজারের বিও হিসাব ক্রোক করা হয়।
পরে ২৪ জুন মতিউর ও তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
ইউটি/টিএ