বাড়িতে মরদেহ রাখার খাটিয়া প্রস্তুত, কাটা হয়েছে বাঁশ, খোঁড়া হয়েছে কবর এখন কেবলই অপেক্ষার পালা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যারহাউজ পরিদর্শক খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের (৩৭) মরদেহের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা। রাত দশটায় শেরপুরের নকলা উপজেলার গৌড়দ্বার ইউনিয়নের পূর্ব লাভা গ্রামের বাড়িতে তার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, মরদেহটি এখনও বাড়িতে এসে পৌঁছায়নি। নাঈম স্থানীয় খন্দকার মোজাম্মেল হক ও দেলোয়ারা বেগম দম্পতির ছেলে এবং এক ছেলে সন্তানের জনক।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জান্নাতুল নাঈমের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়-স্বজনরা তার মরদেহের জন্য প্রতীক্ষা করছেন। মরদেহ দাফনের জন্য বাঁশ কেটে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং পারিবারিক কবরস্থানে কবর খোঁড়া হচ্ছে। নাঈমের স্ত্রী-সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তায় অনেকেই কান্নাকাটি করছেন। নাঈমের চাচাতো ভাই মো. সোহরাব হোসেন জানান, খন্দকার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে নাঈমের জন্য কবর খোঁড়া হয়েছে এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হবে। তিনি বলেন, "আমাদের ভাইটা যে এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, তা কখনো ভাবিনি। মাসখানেক আগেও সে এলাকায় এসেছিল।" স্থানীয় বাসিন্দা ফজল মিয়া নাঈমের মৃত্যুকে 'শহীদি মৃত্যু' হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, "সে অনেক ভালো মানুষ ছিল। গ্রামে এলে সবার সাথে মিশতো। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।"
নাঈমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, অগ্নিদুর্ঘটনার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গৌরবময় আত্মত্যাগের মিছিলে সর্বশেষ যুক্ত হলো খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের নাম। তিনি নাঈমের পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র মতে, খন্দকার জান্নাতুল নাঈম ১৯৮৮ সালের ২৪ আগস্ট শেরপুরের নকলা উপজেলার গৌড়দ্বার ইউনিয়নের পূর্ব লাভা খন্দকার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৪ সালে মোল্লার টেক উদয়ন বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ফুলপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগদান করেন। চাকরি জীবনে তিনি স্টেশন অফিসার হিসেবে মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার স্টেশনে দায়িত্ব পালন করেন। পদোন্নতি পেয়ে তিনি ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর হিসেবে চট্টগ্রাম ও সর্বশেষ টঙ্গী ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর সাহারা মার্কেটে কেমিক্যাল কারখানায় আগুন নেভানোর সময় তিনি দগ্ধ হন। তার শরীরের ৪২ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল দশটার দিকে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জান্নাতুল নাঈম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দুপুর আড়াইটায় ঢাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে তার জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
এদিকে, ফায়ার ফাইটার জান্নাতুল নাঈমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। তিনি জানাজায় উপস্থিত হয়ে জান্নাতুল নাঈমের স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেন এবং তাদের দায়িত্বভার সরকারের বলে আশ্বস্ত করেন।
এমকে/টিকে