সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশেপাশে থাকা অনেকেই একসময় বলতেন, ‘আপা, আপনি আজীবন থাকেন।’ হয়তো এসব কথা শুনে শেখ হাসিনা খুশিও হতেন। ক্ষমতায় থাকা নেতারা এমন প্রশংসা শুনতে পছন্দ করেন এবং তা গুরুত্ব দিয়েও থাকেন।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টকশো প্রোগ্রামে তিনি এসব প্রসঙ্গে কথা বলেন। মোস্তফা ফিরোজ বলেন, মেহেদী হাসানের করা একটি প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস যে কথাগুলো বলেছেন, তা আসলে আরেকটি প্রশ্নেরও উত্তর। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য শুনলে মনে হয়, অন্তবর্তীকালীন সরকার কতদিন থাকবে, সেটি নিয়ে তখনকার মতো স্পষ্ট কোনো ধারণা কারোরই ছিল না। শেখ হাসিনা নিজেও বারবার বলতেন, ‘বিকল্প কে?’ অর্থাৎ তার নেতৃত্বের বিকল্প নেই, এমন একটি ধারণা তার দল ও অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি হয়েছিল। বিরোধী দলের একাংশও হয়তো মনে করতেন, শেখ হাসিনাকে আর সরানো সম্ভব নয়।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন নেপালে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটির ঘোষণা হয়ে গেল, বাংলাদেশে কেন ১৮ মাস লাগছে? ড. ইউনূসের উত্তর ছিল, ‘আমাদের তো কেউ মেয়াদ ঠিক করে দেয়নি। আমরা যখন দায়িত্ব নিই, তখন সামনে ছিল সংস্কার, বিচার ও সুশাসনের প্রশ্ন।’ দেরিতে নির্বাচনের এই পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোও দায় এড়াতে পারে না। শুরুতে তারা কখনও বলেনি, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মেনে নিচ্ছি, তবে তিন বা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে।
তখন অনেকেই মনে করছিলেন, সংস্কার হোক, অন্তত হাসিনার হাত থেকে বাঁচলাম, এটাই ছিল বড় স্বস্তির জায়গা। কিন্তু যখন দেখা গেল, এই সরকার একটি রেগুলার সরকারের মতো কাজ করছে, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি দেখা দেয়। তারা ভাবতে শুরু করে, এই সরকার তো বুঝি অনেকদিন থেকে যাবে। সেই সময় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে ভাগাভাগি, কামড়াকামড়ির রাজনীতি শুরু হয় আর বিরোধী দলগুলো একটা ফাঁদে পড়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, এই সরকার ছিল মূলত টেকনোক্র্যাট ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। তাদের সরাসরি জনগণের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের কোনো রাজনৈতিক সংযোগ ছিল না। তাদের পেছনে এমন কোনো শক্তি ছিল না, যা তাদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পারত। ড. ইউনূস সরকার নিজেও সম্ভবত বুঝতে পারেননি, এই ধরনের একটি সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যাবে না, উচিতও না। সরকার গঠনের পর আবেগে অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু বাস্তব পরিকল্পনা ছিল না। অথচ সময়মতো রাজনৈতিক দলগুলোরই উচিত ছিল স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া যে আপনারা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দেন।
তিনি বলেন, দুঃখজনকভাবে তখন রাজনীতির পরিণত শক্তিগুলোও চুপ ছিল। তারা যেন হাফ ছেড়ে বলেছিল, ‘শেখ হাসিনা তো গেছে আমরা এখন মুক্ত ফ্রি’। কিন্তু এই বিশ্রামই পরে বড় সমস্যার দিকে নিয়ে যায়।
এসএস/এসএন