সাংবাদিকদের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)। একই সঙ্গে নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন এবং দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটির নেতারা।
শনিবার (০৪ অক্টোবর) সকালে গাজীপুরে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ দাবি জানায় তারা।
সভায় বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহে দুই দিন ছুটি ভোগ করে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও দুই দিন ছুটির ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সাংবাদিকদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন সাপ্তাহিক ছুটিও পান না। এতে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়ছে।
সভার এক প্রস্তাবে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও কার্যত তা হচ্ছে না। অথচ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে। তাই বর্তমান সরকারকে দ্রুত নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন এবং দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে সংবাদপত্র, অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিও ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য অভিন্ন ওয়েজবোর্ড করতে হবে।
অপর এক প্রস্তাবে বলা হয়, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে যেমন পুঁতে রাখা হয় স্থলমাইন, তেমনি সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধে নানা ধরনের স্থলমাইন ছড়িয়ে আছে। এই স্থলমাইন হচ্ছে বিভিন্ন নিপীড়নমূলক আইন। সাংবাদিকদের ধরতে অন্তত ২০টি আইন আছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এমন আইন রয়েছে ৩২টি। এমতাবস্থায় সাংবাদিকরা কিছু লিখতে গেলে, বলতে গেলে ৩২ বার ভাবেন। আইনের ফাঁদে পড়ার ভয়ে অনেকে সেলফ সেন্সরশিপ করতে বাধ্য হন।
ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের এক বছর পরও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী কালো আইন বাতিল না হওয়ায় কড়া সমালোচনা করে সভায় বলা হয়- সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার জন্য মামলা একটি বড় ঝুঁকি আর হয়রানির ক্ষেত্র। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী আইনগুলোকে চিহ্নিত করে বাতিল করতে হবে।
আরেক প্রস্তাবে বলা হয়, সরকার সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা নীতিমালার উদ্যোগ নিয়েছে। এই নীতিমালায় আইনি সুরক্ষার বিষয়টি এলেও চাকরি ক্ষেত্রে সুরক্ষার বিষয়টি এখানে সেভাবে আসেনি। অধিকাংশ পত্রিকা সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন দেয় না, যখন তখন চাকরিচ্যুতির সুবিধার্থে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিয়োগপত্র দেন না। ৬ মাস পর চাকরি স্থায়ী করার নিয়ম থাকলেও তা মানেন না। ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন দেন না ৯০ ভাগ গণমাধ্যমে। চাকরি চলে গেলে বা চাকরি ছেড়ে দিলে দেনা-পাওনা পরিশোধ করে না। এ বিষয়ে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। অধিকাংশ গণমাধ্যম ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের বেতন দেয় না। কিছু কিছু পত্রিকা ২ থেকে ৫ হাজার বেতন দেন। আবার কোনো কোনো টিভি জেলা প্রতিনিধির কাছ থেকে উল্টো টাকা চায়। এভাবে সাংবাদিকদের দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নীতিমালা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
এতে বলা হয়, পেশাগত দায়িত্বপালনকালে বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্টে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যামেরা, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, গাড়ি, মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। শারীরিক ক্ষতির জন্য দুর্ঘটনা বিমা থাকতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা মালিকপক্ষকেই নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্ট কাভারের জন্য প্রতিষ্ঠানকে অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। সংবাদকর্মীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং দুর্ঘটনা ভাতার ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্থায়ী সাংবাদিক কর্মীদের জন্য দুর্ঘটনা বিমা ও চিকিৎসা বিমার ব্যবস্থা, জীবন বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা করতে হবে। সংবাদ কর্মীদের আইনি সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠানে আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে। নারী সংবাদকর্মীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বিশেষ করে তাদের জন্য আলাদা রেস্টরুম রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে- সহসভাপতি মুহাম্মদ খায়রুল বাশার, একেএম মোহসীন, সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন ও এহতেশামুল হক শাওন, কোষাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, দপ্তর সম্পাদক মো. আবু বকর, প্রচার সম্পাদক মো. শাহজাহান সাজু ,নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মোদাব্বেরহোসেন, অর্পনা রায়,মুহাম্মদ আবু হানিফ, ম.হামিদুল হক মানিক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম ,চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সভাপতি আনিসুজ্জামান আনিস, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি গনেশ দাশ, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম হেলালী, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর সাধারণ সম্পাদক মাহফুজের রহমান রিপন, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুর সভাপতি এইচএম দেলোয়ার, সাধারণ সম্পাদক হেদায়েত উল্লাহ, সাংবাদিক ইউনিয়ন ফেনী সভাপতি সিদ্দিক আল মামুন, বরিশাল জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি আযাদ আলাউদ্দিন, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক, সাংবাদিক ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন মানিক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ইএ/টিকে