আবু ত্বহার পক্ষে সাফাই দিয়ে তোপের মুখে কাসিমী

সম্প্রতি আলোচিত ধর্মীয় বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন নাহার। নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তিনি দাবি করেন, ত্বহা আদনান বর্তমানে জারিন জাবিন নামে এক এয়ার হোস্টেজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এই নারী নাকি ত্বহার কলেজ জীবনের পুরনো প্রেমিকা।

সাবিকুন নাহারের এমন স্ট্যাটাসের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবু ত্বহা আদনানকে নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা।

যদিও তিনি দাবি করেন, কোনো পরনারীর সঙ্গে তার হারাম সম্পর্ক নেই। এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, কাবার রবের শপথ! আমি যিনাকার নই! মুহাম্মদের রবের কসম! আমি ব্যভিচারী নই! যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম, তারা আমাকে যত অপবাদ দিয়েছে তা থেকে আমি মুক্ত! কোনো পরনারীর সাথে আমার কোনো প্রকার হারাম সম্পর্ক নেই।

তবে এই ‘বিতর্কে’ জড়িয়ে পড়েছেন লেখক আইনুল হক কাসিমী। আদনানের পক্ষে সাফাই গেয়ে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন তিনি।
আইনুল হকের ভাষ্য, ত্বহা আদনানের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন নাহারের অভিযোগ সত্য হলেও এটা জনসম্মুখে প্রকাশ করা ঠিক হয়নি। পারিবারিকভাবে এটা সমাধান করতে পারতেন। তিনি মনে করেন, সতীন মেনে না নেওয়ার জেদ ও হিংসা থেকেই সাবিকুন নাহার শুধু ত্বহাকে ডুবিয়েছেন। তার বিশাল দাওয়াহ সার্কেল ডুবিয়ে দিয়েছেন।

ইসলামি ভাবধারার লেখক আইনুল হকের এমন ‘একপেশে’ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন নেটিজেনরা। তারা মনে করছেন, পরকীয়ার মতো জঘন্য কাজে জড়ালেও ত্বহা আদনানের কোনো সমালোচনা করেননি আইনুল হক কাসিমী। উলটো সাবিকুন নাহারকে ‘আত্মত্যাগ’ করে ত্বহার চোখকে শীতল করার কথা বলেছেন।

আহ, উস্তাযা! আহ! ভাই আবু ত্বহা আদনানকে অন্ততপক্ষে কয়েক লাখ তরুণ-তরুণী ফলো করেন। হিসেব নিলে দেখা যাবে, অন্তত কয়েক শত কিংবা কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী দ্বীনে এসেছেন বা দ্বীনের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন আবু ত্বহা আদনান ভাইয়ের মোটিভেশনাল বয়ান শুনে।

কী টিকটক, কী ইউটিউব, কী ফেসবুক, কী ইন্সট্রাগ্রাম- সবখানেই হাজার হাজার রিলস, শর্ট ভিডিও ছড়িয়ে আছে ভাই আবু ত্বহা আদনানের মোটিভেশনাল বয়ানে। আজ সেই লাখ লাখ ফ্যান ও ফলোয়ার হতাশ। ভাইয়ের জীবনসঙ্গিনীর আনিত অভিযোগ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। অনেকেই আবার আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।

উস্তাযার আনিত অভিযোগ যদি সত্যও হয়, তবুও এটা পাব্লিক্যালি টেনে আনার কোনো দরকার ছিল না। পারিবারিকভাবেই কিংবা ঘনিষ্ঠ মানুষদের মাধ্যমে সমাধান করতে পারতেন তিনি। কিন্তু সেটা না করে তিনি ভাইকে উলঙ্গ করে দিয়েছেন!
আজ বাম পাড়ার লোকেরাও ভাইকে নিয়ে ট্রল করছে! মেইনস্ট্রিম মিডিয়াও রসিয়ে রসিয়ে প্রতিবেদন ছাপাচ্ছে। দাঈদের গোটা কমিউনিটিকে কলুষিত করা হচ্ছে! বাম, রাম ও হলুদ মিডিয়া তো কে আলেম আর কে জেনারেল, এসব তফাৎ করে না! অন্ততপক্ষে দ্বীনের বৃহত্তম স্বার্থকে সামনে রেখে, ভাইকে ফলো করে হাজারও-লাখও যুবত-যুবতী যারা দ্বীনে এসেছেন, তাদের দিক বিবেচনা করেও চাইলে উস্তাযা পারিবারিক এই ব্যাপারটা পাবলিকের সামনে নাও আনতে পারতেন।

সতীন মেনে না নেওয়ার জেদ ও হিংসা থেকেই উস্তাযা শুধু ভাইকেই ডুবালেন না, একটা বিশাল দাওয়াহ সার্কেল ডুবিয়ে দিলেন! বাম ও রাম পাড়ার লোকদের জন্য হাসির খোরাক জোগাড় করে দিলেন আরকি! অথচ তিনি নিজেও ভাইয়ের জীবনে কীভাবে এসেছেন, তা নিয়ে নানাজনের নানা কথা শোনা যায়। তিনি নিজেও ভাইয়ের প্রথমার জীবনে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন বলা যায়। প্রথমা যেভাবে উনাকে চুপচাপ মেনে নিয়েছেন, তিনিও চাইলে চুপচাপ সুলাসাকে মেনে নিতে পারতেন।
চাইলে তিনি উদ্যোগী হয়ে ভাইয়ের গোনাহর পথটাকে বন্ধ করে এক্সকে সুলাসা বানিয়ে ভাইয়ের চক্ষুটা শীতল করে দিতে পারতেন। শুধুমাত্র আল্লাহকে রাজি ও খুশি করার জন্য। বুকে পাথর চাপা দিয়ে হলেও দ্বীনের জন্য এই সেক্রিফাইসটুকু করতে পারতেন। যেমনটা ভাইয়ের প্রথমা করেছেন।

আমরা জানতে পারতাম, ভাই সুলাসা করেছেন। কীভাবে কাকে করলেন, সেটা আমাদের না জানলেও চলত। এতে করে ভাইয়েরও মানহানি হতো না। দ্বীনেরও ক্ষতি হতো না। যেমনটা প্রথমাকে রেখেও উনাকে মাসনা করায় ভাইয়ের প্রতি কারও কোনো খারাপ ধারণা আসেনি। এবারেও আসতো না। কিন্তু... উস্তাযা এসবকিছু মোটেই পাত্তা দেননি।

বেচারি উস্তাযা তো; তাই নিজেই সংশোধনে লেগে গিয়ে কিছুই পারেননি। সব দিয়েছেন তছনছ করে! ভাইকে ডুবিয়ে তিনি নিজে কি ভেসে থাকবেন? মোটেও না! যেসব দ্বীনি সিস্টার উস্তাযাকে ফলো করতেন, তাদের বড় একটা অংশও উস্তাযাকে মাইনাস করবেন, এটাই বাস্তবতা। দ্বীনের খিদমত বলেন আর তিজারত বলেন; সব লাটে উঠবে! অচিরেই।

পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে আর বড় কোনো ফিতনা নেই- এটা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালামের সতর্কবাণী। উম্মাহর বহু আলেম, বুজুর্গ, মুজাহিদ এই ফিতনায় ফেঁসে গেছেন। সবই ইতিহাসে আছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়দের নানান ভাবে পরীক্ষা করেন। এতে কেউ উত্তীর্ণ হয়, কেউ ফেল মারে। এই পরীক্ষার অন্যতম একটা আইটেম হলো ফিতনাতুন নিসা। বেশি নয়; মাত্র দুটি ঘটনা শেয়ার করছি। সংক্ষেপে-

ইমাম ইবনুল জাওযি রহ. বলেন, বাগদাদে একজন আল্লাহওয়ালা মুআজ্জিন ছিলেন। নাম তার সালিহ। একাধারে ৪০ বছর তিনি আজান দেন। একদিন মসজিদের ছাদে উঠে আজান দিতে গিয়ে পাশের বাড়ির সুন্দরী যুবতীকে দেখে প্রেমে পড়ে যান। পরে মসজিদের ছাদ থেকে ওই বাড়ির ছাদ হয়ে ঘরে প্রবেশ করে ফেলেন। মেয়েটি ছিল খ্রিষ্টান। তাকে পেতে হলে খ্রিষ্টান হতে হবে- এই শর্ত মেনে নিয়ে মুআজ্জিন মুরতাদ হয়ে যায়! কিন্তু বিয়ের দিনই সিঁড়ি থেকে পা ফসকে পড়ে গিয়ে মারা যায়! (যাম্মুল হাওয়া : ৪৬০)

ইমাম ইবনুল জাওযি বলেন, বাইজেন্টাইনদের ভূমিতে জিহাদরত ছিল এক যুবক। সেই বাহিনীতে তার মতো সাহসী মুজাহিদ এবং কুরআন ও সুন্নাহর বিজ্ঞ আলেম আর কেউ ছিল না। সে রাত্রিবেলা তাহাজ্জুদ পড়ত, দিনেরবেলা রোজা রাখত। একবার এক কেল্লার পাশ দিয়ে যাবার সময় কেল্লার ভেতরের এক সুন্দরী যুবতীকে দেখে সে প্রেমে পড়ে যায়। বাহিনী ছেড়ে সে কেল্লার দিকে যায়। সকলে মনে করে, সে হয়তো পেশাব করতে গেছে। কেল্লার ভেতরে গিয়ে খ্রিষ্টান হয়ে সে মেয়েটাকে বিয়ে করে! এরপরে তার অবস্থা এমন হয় যে, আল্লাহর কুরআন পর্যন্ত সে ভুলে যায়! (আল-মুনতাজাম ফি তারিখিল উমাম : ১২/৩০২)

নোট- এই দেশে এমনও অনেক মহীয়সী বোন আছেন, যার স্বামী ফিতনাতুন নিসায় পড়ে ফেঁসে গেছেন। এমতাবস্থায় ওই বোন স্বামীকে পরকীয়ার গোনাহ থেকে বাঁচানোর জন্য এবং বুকে পাথর চাপা দিয়ে হলেও স্বামীর চক্ষু শীতল করবার জন্য নিজে উদ্যোগী হয়ে ওই মেয়েকে স্বামীর মাসনা বানিয়ে দিয়েছেন। তবুও কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দেননি। স্বামীর ইমেজ ভূলুণ্ঠিত হতে দেননি। এতে করে হয়েছে কী; বেচারা স্বামীর হৃদয় প্রথমা স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে গেছে।

আপনিও চাইলে এমন করতে পারতেন, হে উস্তাযা! এটা মোটেও কঠিন কিছু ছিল না। শুধুমাত্র বুকে পাথর চাপা দিয়ে একটু সেক্রিফাইস করার দরকার ছিল। কিন্তু আপনি তা পারলেন না। অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেললেন। আহ, উস্তাযা! আহ!

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img

ধর্ম অবমাননা

নর্থ সাউথের অপূর্ব ৫ দিনের রিমান্ডে Oct 14, 2025
img
ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরো ৫ জনের, হাসপাতালে ৮৪১ Oct 14, 2025
img
চঞ্চল, সাবিলা ও রাজ একসঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের গল্পে Oct 14, 2025
img
রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত ডব্লিউএফপির Oct 14, 2025
img
জালিয়াতির অভিযোগে ইউএনও বিমল চাকমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের Oct 14, 2025
img
মার্কিন শুল্কে বিপাকে ভারত, ইউরোপে নতুন বাজারের সন্ধান Oct 14, 2025
img
মিরপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দিয়েছে বিজিবি Oct 14, 2025
img
এবার থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া শান্তিচুক্তি অনুষ্ঠানে থাকবেন ট্রাম্প Oct 14, 2025
img
হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ Oct 14, 2025
img
ভাইরাল ভিডিও থেকে সফল অভিনেত্রী, দানানিনের সাফল্যের গল্প Oct 14, 2025
img
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে থাকছেন না লিটন! Oct 14, 2025
img
সব জেলায় পৃথক বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গঠনের নির্দেশ Oct 14, 2025
img
একই ছবি পোস্ট করে নেটদুনিয়ায় চমক ছড়ালেন মাহি ও রাকিব Oct 14, 2025
img
শমিত-হামজা থাকলেও একাদশে নেই জামাল ভূঁইয়া Oct 14, 2025
img
শাপলাই পাবে এনসিপি: হাসনাত আবদুল্লাহ Oct 14, 2025
img
এই মাতৃভূমিতে আমার জন্ম, এখানে কবর হবে সেফ এক্সিটের দরকার নাই : ধর্ম উপদেষ্টা Oct 14, 2025
img
ঠাকুরগাঁওয়ে জিতেছি, হেরেছি, কিন্তু কখনও কাউকে ছেড়ে যাইনি: মির্জা ফখরুল Oct 14, 2025
img
দেশের গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণে সহায়তার আশ্বাস এফএও মহাপরিচালকের Oct 14, 2025
img
ষড়যন্ত্রকারী উপদেষ্টাদের নাম ও কণ্ঠ রেকর্ড আছে : আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের Oct 14, 2025
img
গোপনে শেফালির ভিডিও করেছে অক্ষয়ের ছেলে Oct 14, 2025