রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে সবাইকে চমকে দিয়ে জয় পেয়েছেন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার। ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ব্যাপক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও আম্মারের এই জয় এখন পুরো ক্যাম্পাসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষে শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এতে দেখা যায়, আম্মার পেয়েছেন ১১ হাজার ৫৩৭ ভোট, যেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির সমর্থিত প্রার্থী ফজলে রাব্বি ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭২৯ ভোট। ব্যবধান প্রায় ৫ হাজার ৮০০ ভোটেরও বেশি।
আম্মারের এই জয় অনেকের কাছে রাকসু নির্বাচনের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, বাকি ২৩ পদের ২০টি পদে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। জিএস পদটি তারা হারিয়েছে আম্মারের কাছে এবং আরও দুটি পদ হারিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে সালাহউদ্দিন আম্মার এর আগেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ছিলেন ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’-এর সাবেক সমন্বয়ক, যিনি গত কয়েক বছরে নানা সামাজিক ও শিক্ষাবান্ধব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
রাকসুর এই নির্বাচনে আম্মারের জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি কেবল একটি পদই জেতেননি, বরং প্রমাণ করেছেন ছাত্ররাজনীতিতে স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম থেকেও পরিবর্তনের বার্তা দেয়া সম্ভব।
রাকসুর সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আম্মারের বিভিন্ন সময়ের আলোচিত কিছু দৃশ্য। সংগৃহীত ছবি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার তুলনামূলকভাবে তরুণ, কিন্তু ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যেই নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের কারণে আলোচিত। বয়সে কম হলেও আম্মারকে সহপাঠীরা চেনেন একজন আপাদমস্তক বিপ্লবী হিসেবে যার কথায়, আচরণে, রাগে কিংবা হাসিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রতিবাদের ভাষা।
আম্মার বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন মূলত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে। সেই সময় থেকেই তিনি লিয়াজু বা দলীয় তোষণ রাজনীতির বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে সরব ছিলেন। সিনিয়র রাজনৈতিক সহকর্মীরা তাকে অনেক সময় ‘অতি সোজাসাপ্টা’ বলে সমালোচনা করলেও, অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন এক প্রকার নির্ভীক কণ্ঠস্বর।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আন্দোলনে আম্মারের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। পোষ্যকোটা বাতিল আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, প্রশাসনিক অনিয়মবিরোধী প্রতিবাদ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাকে দেখা গেছে মাঠে।
অনেক সময় মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে তিনি শুরু করেছেন প্রতিবাদ, যা পরে রূপ নিয়েছে হাজারো শিক্ষার্থীর সমাবেশে। তার নেতৃত্বের ধরন অনেকটাই প্রতীকী রাস্তায়, মঞ্চে, এমনকি গান বা নাটকেও তিনি আন্দোলনের ভাষা তুলে ধরেছেন।
রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হিসেবে তার এই জয় তাই শুধু একটি নির্বাচনী ফল নয়, বরং অনেকের চোখে প্রথাগত ছাত্ররাজনীতির বাইরে থেকে উঠে আসা নতুন এক প্রজন্মের বার্তা।
কেএন/এসএন