রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই : জাহেদ উর রহমান

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেছেন, নাহিদ ইসলামের সাম্প্রতিক এক স্ট্যাটাস ঘিরে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির মধ্যে যে উত্তেজনা শুরু হয়েছিল, তা এখন প্রকাশ্য রাজনৈতিক সংঘাতে রূপ নিচ্ছে। তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির পুরনো সম্পর্ক অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অনেক এক্স-শিবির নেতা প্রথমে এনসিপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং অনেকেই এখনো রয়েছেন বলে মনে করা হয়। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।

যদি বিএনপির সঙ্গে এনসিপির সমঝোতা ব্যর্থ হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আবারো জামায়াত-এনসিপি কাছাকাছি আসতে পারে।

নিজের ইউটিউব চ্যানেল জাহেদস টেইক-এ এসে এ বিষয়ে তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, একসময় জামায়াতের লোকজন এনসিপিকে মাঠে ‘সহায়তা’ করতেন। এনসিপি যে আন্দোলন করেছে, সেটিতে মাঠের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে জামায়াতের লোকজন ভূমিকা রেখেছে, এমন ধারণাও রয়েছে।

কিন্তু যখন জামায়াত সেই সহায়তা বন্ধ করে দেয়, তখন এনসিপি মাঠে লোক জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়, এমন নজিরও রয়েছে।

তিনি উল্লেখ করে বলেন, নাহিদ ইসলাম তার স্ট্যাটাসে জামায়াতে ইসলামীর কিছু সাংগঠনিক আচরণকে পরিকল্পিত বলেন। নাহিদ দাবি করেন, প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা লোয়ার হাউসের মতো একটি তুলনামূলক গৌণ বিষয় সামনে এনে জামায়াত মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু -অর্থাৎ ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি’ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে। নাহিদ মনে করেন, এটি ছিল একটি কৌশলগত চালে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের পক্ষ থেকে যে প্রতিক্রিয়া এসেছে, সেটি শুধু প্রতিক্রিয়া নয়; বরং আক্রমণাত্মক। দলের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরোয়ার বলেছেন, ‘তোমরা নতুন ছাত্রদের দল জন্ম নিয়েই বাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ো না।’

জাহেদ উর রহমান বলেন, এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। অনেকে বলছেন, এনসিপিকে জামায়াতের সন্তান হিসেবে চিহ্নিত করেই এই মন্তব্য করা হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয় যে জামায়াত মনে করে, এনসিপি তাদের ‘ছায়া থেকেই জন্ম নেওয়া’ একটি দল এবং এখন তারা সেই ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে চাইছে।

তিনি আরো বলেন, যখন এনসিপির লোকজনের প্রয়োজন ছিল, তখন জামায়াতে ইসলামী সাপোর্ট দিয়েছে। বাস্তবতা হলো, একসময় সবাই সবার প্রয়োজনে একসাথে চলেছে। কিন্তু এখন, সেই সমঝোতা ভেঙে যাওয়ার পর শুরু হয়েছে পরস্পরকে দোষারোপের পালা। একসময় এই দুই দলের মধ্যে এক ধরনের সহাবস্থান বা সিমবায়োটিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। একে অপরকে প্রয়োজন অনুযায়ী সমর্থন দিয়ে এসেছিল তারা। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। জামায়াত এখন এনসিপিকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করছে। শুধু তা-ই নয়, ভাষাগত আক্রমণ বা আগ্রাসনের যে ধারা শুরু হয়েছে, তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এনসিপিকে বুঝতে হবে, যদি তারা মধ্যপন্থী দল হিসেবে জামায়াতের নেতৃত্বাধীন কোনো ইসলামী জোটে যায়, তবে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় ও আদর্শ নিয়ে সংকটে পড়বে। এটা এনসিপির দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
প্রথমবারের মতো একসঙ্গে প্রার্থনা করলেন পোপ ও ব্রিটিশ রাজা Oct 24, 2025
img
জাতীয় সংলাপের জন্য প্রস্তুত গাজা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী Oct 24, 2025
img
সরকারের কোন উপদেষ্টাদেরই রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব নেই : প্রেস সচিব Oct 24, 2025
img
পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হলো টিএলপি Oct 24, 2025
img
রেমিট্যান্সে বয়ে চলেছে সুবাতাস, চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনে এলো ১৯২ কোটি ডলার Oct 24, 2025
img
গরু চুরির মামলায় কারাগারে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে বহিষ্কার Oct 24, 2025
img
যুক্তরাজ্যে আলোচিত মামলায় হারলো অ্যাপল Oct 24, 2025
img
দয়া করে পাগলামী যুদ্ধ নয়: নিকোলাস মাদুরো Oct 24, 2025
img
মিসরের মধ্যস্থতায় প্রতিপক্ষ ফাতাহ’র সঙ্গে বৈঠক করল গাজা নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী Oct 24, 2025
img
ওয়ান্দা নারার নতুন ত্রিভুজ প্রেমে নাম জড়াল বিশ্বকাপজয়ী এনজোর Oct 24, 2025
img
নির্বাচনের প্রাক্কালে আস্থার সংকট দেখা যাচ্ছে : জিল্লুর রহমান Oct 24, 2025
img
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ Oct 24, 2025
img
ভারত সিরিজের মাঝেই স্কোয়াডে ব্যাপক রদবদল অস্ট্রেলিয়ার Oct 24, 2025
img
কোনো রাজনৈতিক দল নয় আমার সমস্যা ভারতীয় আগ্রাসন : ইলিয়াস হোসাইন Oct 24, 2025
img
ভোটকেন্দ্রে আনসার সদস্যরা প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে: ডিজি আনসার Oct 24, 2025
img
শীতের আগমনে রাজধানীতে সবজির দামে স্বস্তি Oct 24, 2025
img
শুধু বেঁচে থাকার চেয়ে জীবন উদযাপন করাই শ্রেয়: পরীমণি Oct 24, 2025
img
দেব ভুল বলেছে: শুভশ্রী Oct 24, 2025
img
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টকে কটূক্তি করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও Oct 24, 2025
img
জামায়াত শুরু থেকেই জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে : রুমিন ফারহানা Oct 24, 2025