বৈষম্যহীন ন্যায়বিচার দাবি ‘আয়নাঘর’ থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের

আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ভুক্তভোগীরা বৈষম্যহীন ন্যায়বিচার দাবি করেছেন। পাশাপাশি তারা দাবি করেছেন, বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

বুধবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তার হাজিরার পর প্রাঙ্গণে এসব প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। ভুক্তভোগীরা বলেন, অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তারা আইন অনুযায়ী জেল ‘ডিভিশন’ (বিশেষ সুবিধা) পেতে পারেন। তবে ‘সাব জেল’ নামে কোনো বৈষম্য করা যাবে না।

ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে বক্তব্য রাখেন গুমের ভুক্তভোগী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম আরমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল চৌধুরী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান প্রমুখ।

আয়নাঘরে দীর্ঘ ৮ বছর গুমের শিকার থাকা আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, ‘অভিযুক্ত এসব সেনা কর্মকর্তা র্যাবের সঙ্গে জড়িত হয়ে এসব অপরাধে লিপ্ত হয়েছেন। তাদের সংখ্যা সামগ্রিকভাবে এক শতাংশও নয়। তাই তাদের অপকর্মের জন্য পুরো সেনাবাহিনীকে দায়ী করে নিন্দা করা সমীচীন নয়; এর দায়ভার পুরো বাহিনীকে দেওয়া যায় না।’

মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান বা বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান হবেন, তাদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিতে চাই, অন্যায়, জুলুম ও মানুষের অধিকার লঙ্ঘন করে কেউ পার পাবে না। সব অপরাধীকে বিচার পেতে হবে। তবু আমি দৃঢ়ভাবে চাই, তারা যেন সুবিচার পায়; তাদের বক্তব্য আদালত শুনুক এবং সুবিচার নিশ্চিত করা হোক, এটাই আমার দাবি।’

মীর আহমেদ বিন কাশেম আরমান বলেন, ‘সেনানিবাসের ভেতরে ঘোষিত সাবজেলের কোড সঠিকভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষত তারা কোনোভাবেই কর্মরত সেনাসদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে কি না, এটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় আমরা যারা ভুক্তভোগী ও সাক্ষী আছি, আমাদের জীবন ওপরাজু ঝুঁকিতে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসামিরা গ্রেপ্তার অবস্থায় ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানকালে বিচারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে তা অত্যন্ত আতঙ্কজনক বিষয় হবে। তাই জেল কোড ঠিকভাবে অনুসরণ করা উচিত।’

জনগণের রক্ষক সেনাবাহিনীকে আর কোনোদিন জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা না হয়, এমন প্রত্যাশা করে আরমান বলেন, ‘একজন ভুক্তভোগী হিসেবে আমার প্রত্যাশা, দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যদের দ্বারা যেন ভাড়াটে খুনির কাজ আর করা না হয়। আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী সেনাবাহিনী যেন আর কোনোদিন কোনো শক্তির পুতুল না হয়ে যায়, এটিই এই বিচারের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

হাসিনুর রহমান বলেন, ‘আসামিদের ক্ষেত্রে বৈষম্য করা ঠিক হবে না। অন্য আসামিদের মতোই তাদেরও জেলবন্দি রাখা উচিত। যেমনটা রাখা হয়েছে গ্রেপ্তার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে। প্রয়োজনে তাদের ডিভিশন দেয়া যেতে পারে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘তারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি যারা বিদেশে আছে, তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরে এনে হাজির করা হোক, এটাই আমার দাবি।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান বলেন, ‘আজ আমরা এই দিনটা দেখতে পারছি, এটা আপনারা করেছেন, দেশের মানুষের চাপের ফল।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখনো অনেক অপরাধী মুক্ত আছে। আমাদের মামলাগুলো সবার বিরুদ্ধে। (অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের) যেন প্রিজনভ্যানে এনে, এসি রুমে রেখে বা অফিসার্স মেসের খাবার খাওয়িয়ে বিশেষ সুবিধা না দিয়ে-যেভাবে আমাদের যখন রাখা হয়েছে, সেভাবেই তাদের রাখা হোক। কারণ তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।’

টিজে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টাঙ্গাইলে কাভার্ডভ্যানের পেছনে মালবাহী ট্রাকের ধাক্কা, প্রাণ গেল ২ জনের Dec 10, 2025
img
নিন্দুকদের কথা পাত্তা দেন না তারেক রহমান, বিজয়ীর বেশেই দেশে ফিরবেন: আতিকুর রহমান রুমন Dec 10, 2025
img
ভুয়া র‍্যাবের ডাকাতির প্রস্তুতি, পল্টন থেকে গ্রেপ্তার ৬ Dec 10, 2025
ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো বাড়াবাড়ি: মমতা Dec 10, 2025
ন্যাটোতে আক্রমনের পরিকল্পনা নেই পুতিনের Dec 10, 2025
মোসাদ সদরদপ্তরে ইরানের হামলায় নিহত ৩৬ : মোহাম্মদ নাঈনি Dec 10, 2025
আগামীর নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষকে ভুল ভাবে প্রভাবিত করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে Dec 10, 2025
ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন বাংলাদেশের ধনীরা Dec 10, 2025
img
৩০০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা চেয়েছে ইসি Dec 10, 2025
র‍্যাঞ্চো, রাজু, ফারহানের গল্প ফিরে আসছে Dec 10, 2025
বাস্তব না হলেও সিনেমায় প্রেমের টানটান দৃশ্য Dec 10, 2025
বড় পর্দায় আসছে ভিকি–দীপিকার মহাকাব্যিক যুগলবন্দি Dec 10, 2025
২০২৬ বিশ্বকাপে নতুন নিয়ম ‘হাইড্রেশন ব্রেক’ Dec 10, 2025
বেগম রোকেয়া পদক পেলেন ফুটবলার ঋতুপর্ণা Dec 10, 2025
img
টাকার বিনিময়ে ‘বিগ বস’ জয়ী গৌরব! মুখ খুললেন অভিনেতা Dec 10, 2025
img
অসুস্থ হয়ে ফের মাঠের বাইরে উসমান দেম্বেলে Dec 10, 2025
img
প্রতারণার অভিযোগে রাগবি সভাপতিত্বের লড়াই থেকে সরলেন রাহুল বোস Dec 10, 2025
img
ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচের আগে রিয়াল মাদ্রিদ শিবিরে বড় দুঃসংবাদ Dec 10, 2025
img

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

স্পোটিং লিসবনকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দাপুটে জয় বায়ার্ন মিউনিখের Dec 10, 2025
img
ভাইকে তো পাব না, অন্তত বিচার যদি পাই: বিশ্বজিতের ভাই Dec 10, 2025