টানা দুই দিন ধরে দামের পতনের পর স্বর্ণের বাজারে আবারও উত্থান দেখা গেছে। নতুন করে তৈরি হওয়া ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ফিরিয়ে আনায় দাম বেড়েছে এক শতাংশেরও বেশি। একইসঙ্গে সবাই অপেক্ষা করছে শুক্রবার প্রকাশিত হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতির তথ্যের জন্য।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের সেশনে প্রায় দুই সপ্তাহের সর্বনিম্নে নামার পর বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্সে স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৩২ দশমিক ৭৬ ডলারে।
আর ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণ ফিউচার বেড়েছে ২ শতাংশ, দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ১৪৫ দশমকি ৬০ ডলারে।
এর আগে সোমবার (২০ অক্টোবর) স্বর্ণের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৮১ দশমিক ২১ ডলারে উঠেছিল। কিন্তু এর পরের দুই সেশনে পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন ঘটে। জ্যানার মেটালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিনিয়র মেটাল স্ট্র্যাটেজিস্ট পিটার গ্রান্ট বলেন, ‘চলতি বছর স্বর্ণের দাম বাড়ার যে মূল কারণগুলো ছিল-সেগুলো এখনো বিদ্যমান। সাম্প্রতিক পতনের পর অনেকেই সুযোগ বুঝে কিনছেন, তার ওপর বাণিজ্য ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ায় দাম আবারও বেড়েছে।
ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রমাগত স্বর্ণ কেনার কারণে চলতি বছর এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ৫৭ শতাংশ।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার তেল কোম্পানি লুকোয়েল ও রোসনেফ্টের ওপর ইউক্রেন-সম্পর্কিত নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। এটি তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। অন্যদিকে, চীনের বিরল-পৃথিবী রফতানি সীমিত করার সিদ্ধান্তের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র চীনে সফটওয়্যার-ভিত্তিক রফতানি সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
এখন বাজারের দৃষ্টি শুক্রবার প্রকাশিত হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) প্রতিবেদনের দিকে। ধারণা করা হচ্ছে, সেপ্টেম্বরে মূল মূল্যস্ফীতি থাকবে ৩.১ শতাংশে। এ প্রতিবেদনটি ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী বৈঠকের আগে মুদ্রানীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাজারে এরমধ্যেই ধারণা তৈরি হয়েছে, ফেড আগামী সপ্তাহে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমাবে, এবং ডিসেম্বরেও আরও একটি হার কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত কম সুদের হারের পরিবেশে স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকে, কারণ এটি অ-ফলনশীল সম্পদ।
এদিকে, জেপি মরগান পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৬ সালের শেষ প্রান্তিকে স্বর্ণের দাম গড়ে প্রতি আউন্স ৫ হাজার ৫৫ ডলারে পৌঁছাতে পারে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, আগামী বছর প্রতি প্রান্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীদের সম্মিলিত চাহিদা গড়ে ৫৬৬ টন হতে পারে।
অন্য ধাতুগুলোর দামের দিকেও কিছুটা উত্থান দেখা গেছে। স্পট রুপার দাম বেড়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ, দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্স ৪৯ দশমিক ০৭ ডলারে। প্লাটিনামের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ, বেচাকেনা হচ্ছে ১ হাজার ৬২৯ দশমিক ৪৪ ডলারে। আর প্যালাডিয়ামের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ, দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৫৩ দশমিক ৯০ ডলারে।
আরপি/এসএন