নির্বাচনে ‘না ভোট’ ফের চালু হলেও সেটিকে বিকলাঙ্গ আকারে আনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল। তার মতে, আওয়ামী লীগের ভয়েই এবার ‘না ভোট’ সারা দেশে প্রযোজ্য করা হয়নি।
তিনি বলেন, ‘যদি সব আসনে ‘না ভোট’-এর সুযোগ থাকত, তাহলে অনেক জায়গায় দেখা যেত ‘না ভোট’ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতেই ‘না ভোট’ সীমিত রাখা হয়েছে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে মাসুদ কামাল এসব কথা বলেন।
মাসুদ কামাল বলেন, বর্তমানে দেশে নতুন যেসব আইন হচ্ছে, সেগুলো সবই অধ্যাদেশ আকারে প্রণীত হচ্ছে, কারণ এখন কোনো সংসদ নেই। পরবর্তী সংসদ বসলে তার প্রধান কাজ হবে এসব অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করা অথবা প্রত্যাখ্যান করা।
তিনি বলেন, নতুন করে সংশোধিত হয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)। যার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে। উপদেষ্টা পরিষদের কমিটি বা ক্যাবিনেট এটি অনুমোদন দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করলেই এটি অধ্যাদেশ হিসেবে কার্যকর হবে।
মাসুদ কামাল বলেন, নতুন আরপিওতে পুরনো বেশ কিছু ধারা রাখা হয়েছে, পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে কিছু নতুন বিধানও। এর মধ্যে অন্যতম হলো পোস্টাল ভোটিং—যার মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকরাও এবার ভোট দিতে পারবেন। এটা ইতিবাচক পরিবর্তন কারণ আগে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারতেন না। তবে প্রার্থীদের জামানত ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা এটা আমার পছন্দ হয়নি।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে মাসুদ কামাল বলেন, আগে কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হলে শুধু সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা যেত কিন্তু এখন নির্বাচন কমিশন চাইলে পুরো আসনের নির্বাচনই বাতিল করতে পারবে। এটা ইতিবাচক পরিবর্তন। ফেরারি আসামিদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখার বিধানকেও স্বাগত জানিয়েছেন মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, যদি কেউ পালিয়ে থাকে, সে নির্বাচন করতে পারবে না—এটা ভালো সিদ্ধান্ত। আপনি যদি জেলে থাকেন, জেল থেকেই নির্বাচন করতে পারবেন, কিন্তু পালিয়ে থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার থাকা উচিত নয়।
মাসুদ কামাল বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে জোটভিত্তিক নির্বাচনে প্রতীক ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে। আগে যেমন কেউ জোটের প্রার্থীর প্রতীক ব্যবহার করতে পারতেন, এবার তা আর পারবেন না। এখন প্রতিটি দলকে নিজের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। এবার কেউ বিএনপির সঙ্গে জোট করলেও ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না। নিজ দলের প্রতীকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এটা নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ এতে জোট রাজনীতির সুবিধা কমে যাবে এবং জোটের ঐক্যও দুর্বল হতে পারে।’
না ভোট প্রসঙ্গে মাসুদ কামাল বলেন, ‘না ভোট’ পুনরায় চালু করা হলেও তা বিকৃতভাবে আনা হয়েছে। আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যালট পেপারের নিচে ‘উপরের কাউকেই না’—এই ঘরটি ছিল। ভোটাররা যদি কাউকে পছন্দ না করতেন, সেখানে ভোট দিতেন। সেটাই আসল ‘না ভোট’। এখন সেটি বিকলাঙ্গ রূপে আনা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সারা দুনিয়াতে যেখানে ‘না ভোট’ আছে, সেখানেও এভাবে থাকে—যেন ভোটাররা প্রার্থীদের কাউকেই না চাওয়ার অধিকারটি ব্যবহার করতে পারেন। ভোটারের সেই অধিকারটাকেই এবার খর্ব করা হয়েছে।’
ইউটি/টিএ