যশোর: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন বলেছেন, দুর্নীতি শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানে নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। দুদক চাই, জনগণের সহযোগিতায় প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের আইনের মুখোমুখি করতে।
রোববার (২৬ অক্টোবর) সকাল থেকে যশোর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।
গণশুনানিতে জেলার ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৭৫টি দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান।
দুর্নীতির অভিযোগ শুনতে অনুষ্ঠিত দুদক’র এই গণশুনানিতে যশোর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শতাধিক ভুক্তভোগী উপস্থিত হয়ে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিয়া আলী আকবর আজিজী ও যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহান। গণশুনানির মডারেটর ছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম।
গণশুনানিতে স্বাস্থ্য, খাদ্য, সড়ক ও জনপথ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), বিআরটিএসহ অন্তত ২০টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগসহ ৭৫টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়।
অভিযোগকারীরা বলেন, যশোর জেনারেল হাসপাতালে ওষুধ চুরি, নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, ঠিকাদারি কাজে অনিয়ম, সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, বিআরটিএ কার্যালয়ে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না। আর এসব দুর্নীতি চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
গণশুনানিতে একাধিক ভুক্তভোগী লিখিতভাবে অভিযোগ উপস্থাপন করেন এবং সরাসরি দুদক চেয়ারম্যানের কাছে বক্তব্য রাখেন। এ সময় অনেকেই বলেন, স্থানীয়ভাবে অভিযোগ করেও তারা প্রতিকার পাননি, তাই দুদকের এই গণশুনানি তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে মনে করছেন।
অভিযুক্ত দপ্তরগুলোর প্রতিনিধিরা পাল্টা বক্তব্যে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। কেউ কেউ অভিযোগ খণ্ডনে বিভিন্ন নথি ও কাগজপত্র উপস্থাপন করেন।
দুদক কমিশনার মিয়া আলী আকবর আজিজী বলেন, ‘দুদকের কাজ ভয় দেখানো নয়, বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নেওয়া। এই গণশুনানি সেই প্রক্রিয়ারই অংশ।’ তিনি অভিযোগকারীদের ধৈর্যসহকারে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণ উপস্থাপনের আহ্বান জানান।
গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ নাগরিকরা।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গণশুনানিতে উত্থাপিত সব অভিযোগ লিখিতভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব অভিযোগের সত্যতা মিলবে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুদকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যশোরে এমন গণশুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের উদ্যোগ নিয়মিত হলে স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতি অনেকটা কমে আসবে।
টিজে/টিএ