সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নামটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তার একটি পরিচয়-তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ছোট ভাই। ভদ্রলোকের নাম ড. আবু নসর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, তিনি সরকারের একজন যুগ্ম সচিব।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে মাসুদ কামাল এসব কথা বলেন।
মাসুদ কামাল বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মানে উনি কার্যত মেয়রের দায়িত্ব পালন করবেন। আর এই মেয়রের পদমর্যাদা প্রতিমন্ত্রীর সমান। অর্থাৎ প্রতিমন্ত্রীর সমান মর্যাদার পদে এই সরকার একজন যুগ্ম সচিবকে বসিয়েছে। তিনি হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের আপন ছোট ভাই।
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে -এখানে কি কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব হয়েছে? প্রেস সচিব কি তার ভাইয়ের জন্য তদবির করেছেন? কিংবা তদবির না করলেও যেহেতু তিনি একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হয়তো ভেবেছে -তাকে প্রশাসক করলে প্রেস সচিবের আনুকূল্য পাওয়া যেতে পারে। আসলে কী হয়েছে, সেটা আমি বলতে পারব না। তবে এটা নিয়েই নানা প্রশ্ন উঠতে পারে -আপনাদের মনেও হয়তো একই প্রশ্ন ঘুরছে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম অবশ্য এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তিনি স্পষ্টই বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে তার ভাইকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কোনোভাবেই প্রভাব খাটাননি। তার ভাষায় -‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে আমার ভাইকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কোনো ধরনের লবিং করিনি। এই পদে তার নিয়োগ নিয়ে আমি এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব কিংবা সরকারের অন্য কোনো উপদেষ্টা বা সচিবকে একবারও ফোন করিনি। আমার ভাই সরকারের একজন যুগ্ম সচিব এবং বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। তার মূল দায়িত্বের পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে তাকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে প্রশাসকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আমি সরকারের ওপর কোনো প্রভাব খাটিয়েছি -এমন প্রশ্নই আসে না।’
মাসুদ কামাল বলেন, এখন প্রশ্ন হলো -বিশ্বাস হয় আপনাদের? আপনারা কি বিশ্বাস করেন যে ভাইয়ের পরিচয়টা এখানে কোনো ভূমিকা রাখেনি? এমনি এমনি একজন যুগ্ম সচিবকে প্রতিমন্ত্রীর সমান মর্যাদার দায়িত্বে বসানো হয়েছে? বাংলাদেশের মানুষ এখন আসলে একটু অবিশ্বাসী হয়ে গেছে। কেন জানেন? কারণ এই অবিশ্বাসটা হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর নানা কর্মকাণ্ড, নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে এই অবিশ্বাস গড়ে উঠেছে। তবু হ্যাঁ -প্রেস সচিবের কথা শুনে মনে হয়, তিনি অন্তত চান মানুষ বিশ্বাস করুক। এই নিয়োগ একেবারে নিয়মমাফিক, কোনো প্রভাব ছাড়াই হয়েছে।
মাসুদ কামাল আরো বলেন, বিভিন্ন টকশোতে আমার সঙ্গে উনার কয়েকবার দেখা হয়েছে। তবে এখন উনি আর কারো সঙ্গে বসেন না। মানে, এখন উনার নিয়ম -একাই বসবেন, একাই কথা বলবেন, কেউ প্রশ্ন করবে না। উনি এখন এমন জায়গায় উঠে গেছেন যে, আমাদের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে বসা হয় না। হয়তো টেলিভিশনগুলোরও তাই আগ্রহ কমে গেছে। কারণ, একা একজনের অনুষ্ঠান হয়তো টিআরপিও তেমন আনে না।
মাসুদ কামাল আরো বলেন, একবার যখন উনি বলেছিলেন গত ১৫ বছরে সাংবাদিকদের বিচার হবে। তখন নাকি আমাকে নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। আমি কখন সাংবাদিকতা করেছি সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন! তখন আমি বলেছিলাম -উনি এবং উনার আশপাশের সবাই, যারা প্রেস উইংয়ে কাজ করেন, তারা সবাই খুব বিপ্লবী মানুষ। শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে এই ১৫ বছরে তারা যত লেখালেখি করেছেন, যত টকশোতে কথা বলেছেন -সব মিলিয়ে যদি আমার অর্ধেকও হয় তাহলে আমি একবাক্যে মানতে রাজি, উনারা বিচার করতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় -উনার সঙ্গে দেখা হলে আমি কখনোই বিরক্ত হইনি। উনি ভদ্র, স্পষ্টভাষী, ভালো কথা বলেন। একবার উনি বলেছিলেন -উনার স্ত্রী নাকি উনাকে বলেছেন, ‘যা করো, কেউ যেন আমাকে চোরের স্বামী না বলে।’ এই কথা শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। সত্যি, সততার এমন কথা এখন আর শোনা যায় না। কিন্তু এরপর যা যা ঘটছে -তা শুনে সেই মুগ্ধতা টিকে না। আমি চাই প্রতিটি মানুষকে নিয়ে মুগ্ধ হতে, কিন্তু এমন ঘটনা শোনার পর মনটা ভারী হয়ে যায়।
পিএ/টিএ