পাকিস্তান বাংলাদেশে তাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০০ নতুন বৃত্তি দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে। এছাড়া সিকিউরিটি প্রিন্টিং ও ব্যাংকিং খাতে সব মূল্যমানের ব্যাংক নোট, প্রাইজবন্ড ও অন্যান্য নিরাপত্তা সামগ্রী মুদ্রণে ব্যবহৃত নিরাপত্তা কালির আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নিতে চায় দেশটি। ব্যাংক খাতে কারিগরি প্রশিক্ষণও দিতে চায় তারা।
আজ সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন (জেইসি) সভায় এসব বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইআরডি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম সভায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের পক্ষে দেশটির ফেডারেল অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী আহাদ খান চীমা প্রতিনিধিত্ব করবেন। অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে এ সভায় যোগ দেবেন বাংলাদেশের ১৬ জন।
জুলাই বিপ্লবের পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক আরো গভীর হয়। কয়েক দফায় দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেন।
জেইসি সভায় পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার লক্ষ্যে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। সম্পর্ক বাড়াতে দুই দেশের আগ্রহের ভিত্তিতে এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে পাকিস্তানের প্রস্তাবগুলোই প্রাধান্য পাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইআরডির এক কর্মকর্তা দেশের এক গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের উন্নয়নে পাকিস্তান আগ্রহ দেখিয়েছে। দেশটি বাংলাদেশের জন্য ৫০০ নতুন বৃত্তি প্রদানের জন্য প্রস্তাব করেছে। এছাড়া বাংলাদেশে তাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়ে মূল জেইসি সভার আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক সম্মতি রয়েছে।
সব মূল্যমানের ব্যাংক নোট, প্রাইজবন্ড, জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমআইসিআর ও ট্র্যাডিশনাল চেক, সিগারেট স্ট্যাম্প ও ব্যান্ডরোলসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সামগ্রী দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশে লিমিটেড (এসপিসিবিএল) মুদ্রণ করে।
এসব নিরাপত্তা সামগ্রী মুদ্রণে ব্যবহৃত নিরাপত্তা কাগজের সিংহভাগ ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তাছাড়া সব মূল্যমানের ব্যাংক নোট, প্রাইজবন্ড ও অন্যান্য নিরাপত্তা সামগ্রী মুদ্রণে ব্যবহৃত নিরাপত্তা কালির শতভাগ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ইউরোপ থেকে আমদানি করা হয়। এই দরপত্রে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে পাকিস্তান। তাছাড়া ব্যাংকিং খাতে পাকিস্তানের প্রস্তাবিত কারিগরি প্রশিক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে বাংলাদেশ। ইআরডির এক সভায় মতামত দেওয়া হয়Ñআন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে পাকিস্তান উন্মুক্ত টেন্ডারে অংশ নিতে পারে।
ইআরডির ওই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনার যে মডেল ব্যবহার করে, তার সফলতায় মুগ্ধ পাকিস্তান। ফলে তারা বাংলাদেশের এ মডেল গ্রহণ করতে চায়। এছাড়া যৌথ উদ্যোগে ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট, গবেষণাসহ স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পারিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে পাকিস্তান আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।
সম্প্রতি ইআরডির এক সভায় স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়ে যৌথ উদ্যোগে কার্যক্রম নেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়। পাকিস্তান বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য মডেল গ্রহণে আগ্রহী। এ বিষয়ে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগও সম্মতি দিয়েছে।
জেইসি সভায় আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে ইআরডি। এর মধ্যে বাংলাদেশের গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের লক্ষ্যে পাকিস্তান তাদের কিছু উন্নত জাতের গরুর সিমেন (বীর্জ) রপ্তানির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে সহযোগিতার লক্ষ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে পাকিস্তান আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো আইসিটি বিভাগের সম্মতি মেলেনি। তাছাড়া পাকিস্তান বাংলাদেশের ডিজিটাল নাগরিক আইডেন্টিটি ও পাসপোর্ট ডিজিটালাইজেশনেও সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
মেরিটাইম সহযোগিতার বিষয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে চায় পাকিস্তান। আজ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এবং পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং করপোরেশনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, বাংলাদেশ এখন থেকে করাচি বন্দর ব্যবহার করতে পারবে।
চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিলের (জেবিসি) সভা হয়। সভায় পাকিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফপিসিসিআই) এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে আলোচনা হয়। তাছাড়া পাকিস্তান জেবিসি কাউন্সিলের দ্বিতীয় সভা চলতি বছরের সুবিধাজনক সময় আয়োজনের বিষয়ে তখন সিদ্ধান্ত হয়।
পাকিস্তান হালাল অথরিটি (পিএইচএ) এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা রয়েছে আজ।
বাংলাদেশের চিনিশিল্পকে এগিয়ে নিতেও আগ্রহী পাকিস্তান। তারা এ বিষয়ে কারগরি সহায়তা দিতে চায়। বাংলাদেশও এ সহযোগিতা নিতে আগ্রহী।
এবি/টিকে