দুই স্প্যানিশ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের এল ক্লাসিকো শেষে কিছু একটা ঘটবে সেটা যেন অনুমেয়–ই ছিল। উত্তেজনার মঞ্চটা আগেই তৈরি করে দিয়েছিলেন স্প্যানিশ বিস্ময়বালক লামিনে ইয়ামাল। বার্সেলোনার এই তারকা রিয়ালকে ‘চোর’ ও ‘ছিঁচকাঁদুনে’ বলে তাতিয়ে দিয়েছিলেন। জয় নিশ্চিতের পর রিয়ালের দানি কারভাহাল ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়র হাতের ইশারায় জবাব দিলেন– ‘বড্ড বেশি কথা বলেছ, এখন কথা বলো!’
বার্সেলোনার কাছে গত মৌসুমে ৪টি এল ক্লাসিকোর সবকটিতেই হেরেছিল রিয়াল। কেবল তাই নয়, হজম করেছিল ১৬টি গোল। সেই জোরেই কি না ইয়ামাল এবারও তেমন কিছুই ঘটবে বলে ইঙ্গিত দিলেন। তবে এল ক্লাসিকো যে নির্দিষ্ট মৌসুমের ফল দেখে বিচার করা ঠিক নয়। অনেক বছর ধরে এর রীতি ও ঐতিহ্য অন্তত তাই বলে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গতকাল (রোববার) দুই দলই হাড্ডাহাড্ডি লড়েছে। তবে ২-১ ব্যবধানের জয়ে শেষ হাসিটা স্বাগতিক লস ব্লাঙ্কোসরাই হাসলো।
ম্যাচজুড়ে উত্তেজনা তো ছিল–ই, তবে সেটি বিশেষ মাত্রা পায় যোগ করা সময়ের দশম মিনিটে পেদ্রি’র লাল কার্ড দেখাকে কেন্দ্র করে। রিয়ালের ফরাসি মিডফিল্ডার অঁরেলিয়ে চুয়ামেনিকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। যা এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের ক্যারিয়ারে প্রথম লাল কার্ড। ওই সময়ে দুই দলের ডাগআউটে থাকা ফুটবলার ও কোচিং স্টাফের মাঝেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একে অপরের দিকে বাক্য বিনিময় ও তেড়ে যাওয়ার ভাব দেখায়। বেঞ্চে থেকেই হলুদ কার্ড দেখেন বার্সা ডিফেন্ডার আলেহান্দ্রো বাল্দে, আর সতর্ক করে দেওয়া হয় রিয়ালের ব্যাকআপ গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিনকে।
কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পর খেলা শুরু হয়। খানিক বাদেই শেষ বাঁশি বাজান রেফারি। উদযাপনে ফেটে পড়ে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু ও স্বাগতিক রিয়ালের পুরো স্কোয়াড। মাঠে থাকা রিয়ালের থিবো কোর্তোয়াও কিছু বলছিলেন ইয়ামালকে লক্ষ্য করে, তাতে ডাগআউট থেকে যোগ দেন জুড বেলিংহ্যামও। এর আগে খেলা শেষে দেখা হয় দুই স্প্যানিশ সতীর্থ ইয়ামাল ও কারভাহালের। তবে হাত মিলিয়ে ফেরার সময় কারভাহাল হাতের ইশারায় ইয়ামালকে ‘কথা কম বলা’র ইঙ্গিত দেন। তাতে ক্ষেপে যান বার্সা ফরোয়ার্ড, তার তেড়ে যাওয়ার পথে বাধা দেন রিয়ালের কামাভিঙ্গা। এরপর একে একে যোগ দেন আরও কয়েকজন। বার্সার ডাচ মিডফিল্ডার ফ্রেংকি ডি ইয়ংকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে বসেন থিবো কোর্তোয়া।
হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ছিলেন ইয়ামাল, তখন কিছুটা দূরে থাকা ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে তার ফের বেধে যায়। আবারও তেড়ে যাওয়া শুরু, সেখানে সতীর্থ–কোচিং স্টাফরা এসে টানাটানি ও প্রতিপক্ষের গায়ে ধাক্কাধাক্কি চলে কিছুক্ষণ। এল ক্লাসিকোর উত্তেজনা পৌঁছে যায় আরও উচ্চ মাত্রায়। ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে থাকা রাফিনিয়ার সঙ্গেও কথা চালাচালি হয় ভিনিসিয়ুসের। উদযাপনের সময় এমবাপে-বেলিংহ্যামদের উসকানির যোগান দেওয়া উদযাপন ছিল বার্সার ডাগআউট লক্ষ্য করে। এ ছাড়া মাঠে চলমান হাতাহাতি ছাড়াতে যোগ দিতে হয়েছিল স্বয়ং রিয়াল কোচ জাবি আলোনসোকে।
দিন শেষে ২-১ ব্যবধানের জয়ে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান আরও মজবুত করলো লস ব্লাঙ্কোসরা। তাদের সঙ্গে ব্লু গ্রানাদের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়াল ৫ পয়েন্টে। ১০ ম্যাচে রিয়ালের পয়েন্ট ২৭। সমান ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে বার্সেলোনা দুইয়ে রয়েছে।
আরপি/টিকে