৩ সাংবাদিককে হেনস্তা আইনজীবীর, কারাগারে পাঠাতে চাইলেন বিচারক

সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আদালতপাড়ায় জামায়াতপন্থী কয়েকজন আইনজীবীর হেনস্তার শিকার হয়েছেন তিন সাংবাদিক। পরবর্তীতে ওই তিন সাংবাদিককে কাঠগড়ায় ডেকে নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস কারাগারে পাঠানোর কথা বলেন। কিছুক্ষণ পর ক্ষমা চাওয়ার শর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটি (সিআরইউ) প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

বুধবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গনে এ ঘটনা ঘটে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আজ দিন ধার্য ছিল। তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরা আদালতে হাজির হন। আদালতে হাজির হন ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানাও। পরে আদালত থেকে আসামি বুশরা বের হন৷ তখন আসামির ভিডিও ফুটেজ নিতে যান দেশের একটি গণমাধ্যমের নিজস্ব প্রতিবেদক মাসুদ রানা, একুশে টেলিভিশনের রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম। 

তবে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য (জামায়াত পন্থী প্যানেল) আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ ও হাতিরঝিল থানার জামায়াতের রোকন ও আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিমসহ অনেকেই ভিডিও করতে বাধা দেন। সাংবাদিকরা পেশাগত কারণে ভিডিও করার কথা জানালে তারা আরো চড়াও হন। এসময় তারা সাংবাদিকদের বিচারকের কাছে ধরে নিয়ে যেতে উদ্ধৃত হন। তবে সাংবাদিকেরা জানান, আসামির ছবি বা ভিডিও নিতে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন নেই। 

এই কথা বলায় উপস্থিত আইনজীবীরা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালতের সামনে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেন। এক পর্যায়ে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। এসময় এই মামলার বাদী নুর উদ্দিন রানাকে দেখে হুমকি দিতে থাকেন তিনি। বাদীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি সাংবাদিকদের ডেকে এনেছেন। এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস তার আদালতে এই তিন সাংবাদিককে এজলাসে ডেকে নেন। এসময় আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ কৌশলে পালিয়ে যান। 

তখন বিচারক তিন সাংবাদিককে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করান। এসময় বিচারক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের পরিচয় দেন। সাংবাদিকদের পরিচয় জানার পর বিচারক বলেন, আপনারা কোর্টের সামনে হাঙ্গামা করেছেন। এখন ১১ টা ৩৮ বাজে, আপনারাদের কারাগারে পাঠানো হবে। আর কোন কথা হবে না। আপনাদের সকলের মোবাইল নিয়ে নেওয়া হোক। এর মিনিট দুয়েক পর বিচারক বলেন, আপনারা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে ছেড়ে দিবো। নাহলে কারাগারে যেতে হবে। কোন ছাড় নেই। পরে এই তিন সাংবাদিককে ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেন আদালত। 

সাংবাদিক মাসুদ রানা বলেন, ‘সংবাদ সংগ্রহে গেছিলাম। কিন্তু কয়েকজন আইনজীবী ভিডিও করতে বাধা দিয়ে মব সৃষ্টি করেন। পরে বিচারক অতিউৎসাহী হয়ে আমাদের তিনজনকে কাঠগড়ায় ডাকেন। আমাদের পরিচয় জেনে বিচারক বলেন, আপনারা বসেন। সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হবে।’ 

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম জানান, ‘আমরা আসামির ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাদের আইনজীবীরা চড়াও হন। একজনের মোবাইল কেড়ে দেন। ভিডিও ধারণ করায় বিচারকের কাছে জোর করে তারা আমাদের নিতে চেয়েছেন। আমরা যেতে না চাওয়ায় তারা খুব খারাপ আচারণ করতে থাকেন। এসময় আরেক আদালতের বিচারক আমাদেরকে এজলাসে ডাকেন। এরপর কাঠগড়ায় যেতে বলেন। বিচারক কোন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন। কোন অপরাধ না করেই নিঃশর্তে ক্ষমা চাওয়া লেগেছে। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম বলেন, ‘একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। পরে বিচারক ডেকে সমাধান করে দিয়েছেন।’

আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’ এ বিষয়ে ঢাকার কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লিটন মাহমুদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর হামলার চেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল্লা পিয়াসের আদালতের বাইরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কোর্টে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় অথবা ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এমন কোন অপেশাদার আচরণ করেননি। সাংবাদিকরা শুধুমাত্র তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে জামায়াতের আইনজীবীদের দ্বারা হেনস্তার স্বীকার হন সাংবাদিকরা।

এসময় ওই সব আইনজীবীদের হট্টগোলে আদালতে পরিবেশ নষ্ট হয়। যার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। এসব বিবেচানায় না নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারক অতিউৎসাহী হয়ে হাসিবুল্লা পিয়াস উল্টো তিন সাংবাদিক'কে ডেকে নিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। একজন বিচারকের কাছে এমন আচরণ কাম্য নয়। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি ওই বিচারকের অপসারণসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। এ বিষয়ে আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জানাব।’

ইউটি/টিএ



Share this news on:

সর্বশেষ

img
কালামের সেঞ্চুরিতে আফগানিস্তানকে হারাল বাংলাদেশ Oct 28, 2025
img
বেগম খালেদা জিয়ার মতো তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে: পিন্টু Oct 28, 2025
img
ভেবেছিলাম ৩০-এর পর বিয়ে-সংসার করব: তামান্না ভাটিয়া Oct 28, 2025
img
সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযান, গ্রেপ্তার আরো ১৫৭০ Oct 28, 2025
img
সংস্কার পরিষদ পাস না করলে অটোপাস হওয়া হাস্যকর: সালাহউদ্দিন Oct 28, 2025
img
সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে নতুন নেতৃত্বের বিকল্প নেই : নুর Oct 28, 2025
img
এস আলমের ১৪২২ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত Oct 28, 2025
img
ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে ভাবছে বিসিবি Oct 28, 2025
img
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নতুন বাংলাদেশের পথ দেখাবে : প্রধান উপদেষ্টা Oct 28, 2025
img
আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের পর দেউলিয়া হয়ে গেছে : তথ্য উপদেষ্টা Oct 28, 2025
img
আমরা অতীত থেকে মুক্ত হতে চাই: প্রধান উপদেষ্টা Oct 28, 2025
img
এককভাবে সরকার গঠন করলে সেই দল সংসদে বেশিদিন টিকতে পারবে না: সারজিস Oct 28, 2025
img
জলবায়ু অর্থায়নে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করা জরুরি: রিজওয়ানা হাসান Oct 28, 2025
img
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেল ছাত্রদল কর্মীর Oct 28, 2025
img
নির্বাচন-গণভোট একসঙ্গে একই দিনে ছাড়া বিকল্প নেই: আমির খসরু Oct 28, 2025
img
জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দাঁড়ালে হিতে বিপরীত হবে : নাহিদ Oct 28, 2025
img
ব্যর্থ বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরে মুখ খুললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক Oct 28, 2025
img
ঐকমত্য কমিশনে যা আলোচনা হয়েছে, তা চূড়ান্ত সুপারিশে নেই: সালাহউদ্দিন আহমেদ Oct 28, 2025
img
বিএনপি-জামায়াতের ঐক‍্য যে ঠুনকো, তা ২৮ অক্টোবরে প্রমাণিত হয়েছে : মঞ্জু Oct 28, 2025
img
সফলতার জন্য স্যাক্রিফাইস জরুরি : রচনা ব্যানার্জি Oct 28, 2025