‘আপনি বেশি কথা বলেন, আদালত বিব্রত হয়’, আইনজীবী আমির হোসেনকে ট্রাইব্যুনাল

‘আপনি বেশি কথা বলেন। এমন এমন কথা বলেন যা আদালতের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়।’ ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পলাতক চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেনের উদ্দেশ্যে এমন কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (৩ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বেঞ্চে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি করাসহ দুজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।

ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। তিন নম্বর সাক্ষী হিসেবে আজ জবানবন্দি দেন শহীদ মো. নাদিম মিজানের স্ত্রী তাবাসসুম আক্তার নিহা। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহানের পরই তাকে জেরা করেন আমির হোসেন। জেরার একপর্যায়ে নিহার উদ্দেশ্যে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী বলেন, ‘আপনার স্বামীকে কে গুলি করেছিল, আপনি কি দেখেছেন।’

এমন প্রশ্নে আপত্তি জানিয়ে প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়, ‘একই প্রশ্ন আপনার আগের আইনজীবীও করেছেন। তখন আপনি ভেটো দিয়েছেন।’ ঠিক তখনই আমির হোসেনকে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এতে আপনার লাভ কী হবে। তার স্বামী মারা গেছে এটাই অ্যাভিডেন্স। এছাড়া আপনার আসামিদের নামও বলা হয়নি।’

জবাবে রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী বলেন, ‘মাই লর্ড! লাভের হিসাব অনেক দীর্ঘ। এ প্রশ্নে আমার আসামিদের লাভ হতেও পারে।’ এ সময় বিভিন্ন যুক্তি দেখান তিনি। একপর্যায়ে আমির হোসেনকে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আপনি বেশি কথা বলেন। এমন এমন কথা বলেন যা আদালতের জন্য বিব্রত হয়ে দাঁড়ায়। এর আগেও আপনি একটা কথার জন্য ১০টা কথা টেনেছেন। আপনার এসব প্রশ্নে লাভ কী? তিনি (সাক্ষী নিহা) একজন ভুক্তভোগী। তার সাক্ষ্যে আপনার আসামিরা তো মুক্তি পেয়ে যাবে না।’

ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, ‘আমরা যদি ভুল করি তাহলে আপনাদের যাওয়ার সুযোগ আছে। আমরা তো একটা ওপিনিয়ন (মতামত) দিতেই পারি। এটা হলো একটা হেয়ারসে (শোনা) সাক্ষী। আর উনার স্বামী মারা গেছেন। এজন্য সাক্ষ্যটা নেওয়া।’ ট্রাইব্যুনালের এমন কথায় সম্মতি জানিয়ে আমির হোসেন বলেন, ‘জ্বি মাই লর্ড।’ এরপর বাকি প্রশ্ন করে জেরা শেষ করেন তিনি।

এদিন বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন নাদিমের স্ত্রী। তার সঙ্গে ছিল তিন বছরের ছেলে আনাস বিন নাদিম। শপথ পড়ে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই স্বামী হত্যার পুরো বর্ণনা তুলে ধরেন নিহা। একইসঙ্গে বিচারও চান। পরে তাকে জেরা করেন পলাতক তিন আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন ও গ্রেপ্তার চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহান।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, সাইমুম রেজা তালুকদারসহ অন্যরা।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছেন রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। হাবিবুর ছাড়া পলাতক বাকি তিন আসামি হলেন- খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। গত ১০ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে রামপুরায় হোটেলে কাজ শেষে ঢাকায় থাকা ফুফুর বাসায় ফিরছিলেন আমির হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বনশ্রী-মেরাদিয়া সড়কের দুই পাশে পুলিশ-বিজিবির গাড়ি দেখে ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে পাশে থাকা একটি নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের ছাদে ওঠেন তিনি। 

ওই সময় পুলিশও তার পিছু পিছু যায়। একপর্যায়ে জীবন বাঁচাতে ওই নির্মাণাধীন ভবনটির ছাদের কার্নিশের রড ধরে ঝুলে থাকেন আমির। কিন্তু তাকে দেখে ফেলে পুলিশ। পরে তার ওপর ছয়টি গুলি ছোড়েন এক পুলিশ সদস্য। এতে তিন তলায় পড়ে গেলে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন উদ্ধার করেন। এরপর বনশ্রীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওইদিন রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন ভুক্তভোগী এই তরুণ।

এছাড়া, একই দিন রামপুরার বনশ্রী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নাদিম ও মায়া ইসলাম নিহত হন। একইসঙ্গে মায়া ইসলামের ছয় বছর বয়সী নাতি বাসিত খান মুসা গুলিবিদ্ধ হয়। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিলে এখনও কথা বলতে পারছে না এই শিশু।

এসএস/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পদত্যাগের পর যুবলীগ নেতার যুবদলে যোগদান Dec 19, 2025
img
উদীচী কার্যালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে Dec 19, 2025
img
ওসমান হাদি হত্যার বিচার দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ Dec 19, 2025
img
সিদ্ধান্ত পাল্টালেন সেই আলোচিত বিএনপি প্রার্থী Dec 19, 2025
img
হাদি মৃত্যু ইস্যুতে নিরপেক্ষ তদন্তের তাগিদ জাতিসংঘের Dec 19, 2025
img
যুক্তরাজ্য থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে জরুরি বার্তা দিলেন জামায়াত আমির Dec 19, 2025
img
গণতান্ত্রিক উত্তরণ রোধ করা যাবে না: সালাহউদ্দিন আহমদ Dec 19, 2025
img
তারেক রহমানের গণসংবর্ধনার স্থান পরিদর্শন Dec 19, 2025
img
বিশ্বের সঙ্গে একই দিনে দেশের পর্দায় দেখা যাবে 'অ্যাভাটার-৩' Dec 19, 2025
img
সুদান থেকে লাল-সবুজের পতাকায় মোড়ানো ৬ কফিন ঢাকার পথে Dec 19, 2025
img
৫ দফা দাবিতে চট্টগ্রামে এনসিপির মশাল মিছিল শনিবার Dec 19, 2025
img
ভারতীয় হাইকমিশন ভাঙচুর করতে চাই না : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Dec 19, 2025
img
হাদির জানাজায় অংশ নিতে ঢাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে পরিবহন ব্যবস্থা Dec 19, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে ব্রিটিশ হাইকমিশনের শোক প্রকাশ Dec 19, 2025
img
ঝিনাইদহে ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত Dec 19, 2025
img
খালেদা জিয়া এক মাসের মধ্যে আজ বেশ স্থিতিশীল : ডা. জাহিদ Dec 19, 2025
img
অ্যাভেঞ্জার্স ডুমসডে-তে ফিরছেন ক্যাপ্টেন আমেরিকা Dec 19, 2025
img
সরকারের নজিরবিহীন ব্যর্থতার কারণেই সন্ত্রাসী ঘটনার বিস্তার ঘটছে : সাইফুল হক Dec 19, 2025
img
রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে ওসমান হাদির মরদেহ Dec 19, 2025
img
বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবেন ভারতীয় কর্মকর্তারা: শশী থারুর Dec 19, 2025