সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভারত ক্রমশ অধৈর্য হয়ে পড়ছে। ভারতের একটা ডকট্রিন রয়েছে, যেটিকে সবাই নেহেরু ডকট্রিন হিসেবে জানেন। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি জমানোর বিষয়ে একবার জওহরলাল নেহেরুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন- বাংলাদেশের যে জন্মটা, এটা হয়েছে একটা বাই এক্সিডেন্ট। এটা হওয়ার কথা না, এটা ভারতের অংশ ছিল।
আগামীতে আবারও ভারতের অংশ হবে। ফলে বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে আসছে, তাদের তো আসার দরকার নেই। আর কিছুদিন পরে যখন ওটা ভারতের অংশ হয়ে যাবে, তখন তো তারা ওই দেশেই থাকতে পারবে ওদের মতো করে। কাজেই এখানে এই মাইগ্রেশনটা আসলে দরকার নেই।’
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া ভিডিওবার্তায় রনি বলেন, ‘নেহেরুর এই মন মানসিকতার ওপর ভিত্তি করে যে একটা ডকট্রিন তৈরি হয়েছিল, সেটিকে বলা হয় নেহেরু ডকট্রিন। ফলে কৌশলগত কারণে বাংলাদেশকে নিয়ে যেমন তারা খুব চিন্তিত, আর এই কৌশলগত কারণেই ভারত আওয়ামী লীগকে তাদের এক নম্বর বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভারত বুঝতে পেরেছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের সম্পর্কটা হরিহর আত্মার মতো।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন নির্বাচন খুব কাছাকাছি চলে আসছে। কোনোভাবে যদি নির্বাচন হয়, এখানে বিএনপি শক্তিশালী দল হিসেবে সরকার গঠনের সম্ভাবনা খুব প্রবল। আর জামায়াত এই গত ১৪ মাসে এতটা শক্তি অর্জন করে ফেলেছে যে, বিএনপি যদি জয়লাভ করে, সেই সরকার কতদিন টিকবে এটা বলা যাচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের প্রভাব একেবারে জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকবে এবং ছয় মাস-এক বছর পরে যদি আবার বিএনপি সরকারের পতন হয় এবং জামায়াত যদি একটা ইসলামী বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলে এবং তারা যদি আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে এটা ভারতের জন্য অনেকটা দ্বিতীয় আফগানিস্তান হয়ে যাবে। ভারতের জন্য এটা এতটা বিব্রতকর যে, ভারতের বড় বড় নেতাদেরকে এসে জামায়াতের আমিরের পায়ের কাছে এসে বসে থাকতে হবে।’
‘তো সেই দিক থেকে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, সেটা ভারতের জন্য একটা বিরাট সমস্যা। কারণ, বিএনপির সঙ্গে এখনো পর্যন্ত ভারতের কূটনৈতিক লেভেলে কোনো সমঝোতা হয়নি। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর হয়তো একটা সমঝোতার চেষ্টা হবে। কিন্তু সেটা যে কতটা ফলপ্রসূ হবে, সেটা অনিশ্চিত। অন্যদিকে জামায়াত বা অন্যান্য যে সকল ইসলামপন্থী তাদের সঙ্গে হয়তো ভারতের সম্পর্ক আছে, কিন্তু এই সম্পর্কটি দিল্লি আসলে হজম করতে পারবে না।’
রনি বলেন, ‘এসব কারণে দিল্লি এবং ভারতের যে সব ডিপ স্টেট ক্রীড়নক রয়েছে, তারা বাংলাদেশের ওপর তাদের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করছে যাতে ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে বিষয়গুলো, সেগুলো যেন প্রাধান্য পায়। তার জন্য ভারত এখন কোমরে গামছা বেঁধে বা উঠে পড়ে লেগে আছে। আর এতে করে কার কপাল পুড়বে, আর কার কপালে রাজটিকা দেখা দিবে এটা বোধ হয় আমার বলার দরকার নেই।’
টিএম/টিকে