শীতকালীন খাদ্য তালিকায় প্রথমেই আসে অতিপ্রিয় খেজুরের রস। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালটা যেন খেজুরের রস ছাড়া জমেই না। শীত ও খেজুরের রস যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এই রস হচ্ছে- খেজুরের গাছ বা মধুবৃক্ষ থেকে আহুত মুখরোচক পানীয়।
মধুবৃক্ষ থেকে আহৃত রস কাঁচা ও জ্বাল দিয়ে খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এ রস দিয়ে তৈরি গুড় ও পাটালিরও তুলনা নেই। শীতের পিঠা-পায়েসের একটি উপাদেয় উপাদান খেজুরের রস। এই রসে তৈরি দানা, ঝোলা ও নলেন গুড়ের স্বাদ এবং ঘ্রাণই আলাদা।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ, যা আমাদের জন্য বেশ উপকারী। এতে প্রচুর এনার্জি বা শক্তি রয়েছে। এতে জলীয় অংশও বেশি। তাই এই রসকে প্রাকৃতিক ‘এনার্জি ড্রিংক’ বলা যেতে পারে। যারা শারীরিক দুর্বলতায় ভোগেন, কাজকর্মে জোর পান না, খেজুরের রস তাদের জন্য দারুণ উপকারী।
খেজুরের রসে ১৫-২০% দ্রবীভূত শর্করা থাকে, যা থেকে গুড় ও সিরাপ উৎপাদন করা হয়। এ রস কাঁচা খাওয়া যায়, আবার জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেও খাওয়া যায়। খেজুরের গুড় আখের গুড় থেকেও বেশি মিষ্টি, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু এবং বেশি প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেল রয়েছে।
কখন খাবেন, কখন খাবেন না
খেজুরের রস ভোর বেলায় খাওয়া ভালো। সারা রাত ধরে রস জমে থাকার পর সকাল সকাল এ রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। তবে সময় যত গড়াতে থাকে, তত এতে ফারমেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়া হতে থাকে। এতে রসের স্বাদ নষ্ট হয় এবং অম্লতা বাড়ে। অন্ধকারে এই প্রক্রিয়া কম হয়, কিন্তু দিনের আলোতে গাঁজন বেশি হয়। তাই দিনের বেলা রস খাওয়া ঠিক নয়। এতে বমিসহ পেটের নানা সমস্যা হতে পারে।
কতটুকু রস খাবেন
একজন সুস্থ মানুষ সকালে এক থেকে দুই গ্লাস রস খেতে পারেন। সকালে খালি পেটে খেলেও সমস্যা নেই। যেহেতু এটি এনার্জি ড্রিংক, তাই শরীরে শক্তি জোগাতে পরিমাণ মতো রস খাওয়া ভালো।
কীভাবে খাবেন
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ হচ্ছে, রাতে বা সকালে রস খেতে পারেন বা রসের তৈরি বিভিন্ন খাবার খেতে পারেন। তবে রস যেহেতু খোলা অবস্থায় গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়, তাই এতে জীবাণু থাকতে পারে। এটা অস্বাস্থ্যকর। এ জন্য রস হালকা আঁচ দিয়ে বা ফুটিয়ে নিয়ে খাওয়া ভালো। এছাড়া রস জ্বাল দিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করে খেতে পারেন।
সতর্কতা
যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা খেজুরের রস এড়িয়ে যাবেন। এতে চিনির পরিমাণ বেশি। এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে, খেজুরের রসে যেন কোনো পোকামাকড় মুখ না দেয়। বাদুড় বা পাখির মুখ দেয়া রস খেলে রোগ হতে পারে।
টাইমস/জিএস