তিনি বলেন, ‘‘যদি সরকার বিএনপি বা জামায়াতের পক্ষে গিয়ে ঐকমত্য কমিশনের ভাষ্য থেকে বের হয়ে নোট অফ ডিসেন্ট যোগ করার চেষ্টা করে, তাহলে আমরা, শহীদ পরিবার থেকে শুরু করে আহত মুক্তিযোদ্ধারা, আবার রাজপথে নামব। দুই দলকে কীভাবে বাধ্য করতে হয়, তা আমরা ভালো করেই জানি।’’
শেখ হাসিনা তো ভারত পালিয়ে গিয়েছিলেন, তারেক রহমান পালাবেন কোথায় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
তিনি বলেন, ''আপনাদের তো পালানোর জায়গাই নেই। কারণ আওয়ামী লীগ ছিল ভারতের বন্ধু। বিএনপির কোনো বন্ধু রাষ্ট্র নেই। এ কারণেই জিয়াউর রহমান গানের মধ্যে আগেই বলেছিলেন, 'প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ'। যদি দেশকে সত্যিকার অর্থে রক্ষা করতে হয়, তাহলে অবশ্যই সংস্কারের পথে আসতে হবে।"
সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকালে জাতীয় শ্রমিক শক্তির উদ্যোগে আয়োজিত "জুলাই সনদে শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক অবমূল্যায়ন" শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ''এই দল দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেছে, কিন্তু ব্যবসার মধ্য দিয়েই রাজনীতিতে এসেছে। এমপি হতে গিয়ে কেউ গার্মেন্টস ব্যবসা পেয়েছে, কেউ বিদেশ পাঠানোর ব্যবসা পেয়েছে। এই ব্যবসা করে ভোট কেনার সংস্কৃতি চালু করেছে।''
তিনি বলেন, ''একসময় বিএনপি প্রার্থী খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু যখন আপোষহীন নেত্রী এক জনকে রাজনৈতিক ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানালেন, তখন মাঠে সাকিব আল হাসান বা মাশরাফির মতো ব্র্যান্ড দিয়ে নৌকার ভোট চাওয়ার সংস্কৃতি এলো। এখন নতুন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডররা ধানের শীষে ভোট চান।''
তিনি আরও বলেন, ''তবে আগে তাদের বলতে হবে সংস্কার প্রক্রিয়া কীভাবে বাস্তবায়ন হবে।''
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ''আমরা শুরু থেকেই বলেছি, শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমরা নমনীয়। কিন্তু কেউ যদি ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বৈরাচার হতে চায়, কিংবা ২৪-এর শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নব্য ফ্যাসিস্ট হতে চায় আমরা কখনো আপস করব না।''
তিনি বলেন, ''১৯৭১-এর পরে যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তারা ন্যায়বিচার ও সাম্যের সমাজ চেয়েছিলেন। কিন্তু কিছু মানুষ 'মুজিব ভাই, মুজিব ভাই' বলে মুখে ফেনা তুলে ফ্যাসিবাদের দিকে দেশটিকে নিয়ে গিয়েছিল।''
তিনি আরও বলেন, ''এখন আবার ২৪-এর শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে 'তারেক ভাই, তারেক ভাই' স্লোগান দিয়ে নতুন ফ্যাসিজম আনার আয়োজন চলছে। আমরা তাদের সতর্ক করছি ভুলেও এই পথে যাবেন না। ইতিহাসে যারা এমন পদক্ষেপ নিয়েছিল, তারা এখন কলকাতার গলিতে না খেয়ে ঘুরছে।''
এই এনসিপি নেতা আহ্বান করেন, 'দুই দলকেই দ্রুত জুলাই সনদের আইনি বাস্তবায়নের একটি পদ্ধতি বের করে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।''
তিনি বলেন, ''যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে মনে রাখবেন সমাজতান্ত্রিক যে সময়সীমা ছিল, তা ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। দুই দলের মধ্যে আমরা শুধু মারামারি, তর্ক-বিতর্ক দেখছি; কোনো সমাধান দেখছি না।''
তিনি আরও বলেন, ''যদি সরকার বিএনপি বা জামায়াতের পক্ষে গিয়ে ঐকমত্য কমিশনের ভাষ্য থেকে বের হয়ে নোট অফ ডিসেন্ট যোগ করার চেষ্টা করে, তাহলে আমরা, শহীদ পরিবার থেকে শুরু করে আহত মুক্তিযোদ্ধারা, আবার রাজপথে নামব। দুই দলকে কীভাবে বাধ্য করতে হয়, তা আমরা ভালো করেই জানি।''
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ''যারা ভোট ব্যাংক বাড়ানোর জন্য সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বা শহীদ পরিবারের নাম ব্যবহার করছেন, তাদের ভোট ব্যাংক আবার নিচের দিকে নেমে যাবে। তখন ভোট পাবে কারা? ভোট পাবে তারাই, যারা সংস্কার বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে।''
তিনি বলেন, ''আগামী পাঁচ বছরে এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের আগে একটি রিফর্ম ব্যালান্স বা সংস্কার জোট গঠিত হবে। আমরা দেশবাসীকে আহ্বান জানাব সংস্কার জোটে ভোট দিন।''
তিনি আরও বলেন, ''ধানের শীষ বা পাল্লা, যে প্রতীকই থাকুক, সংস্কার বাস্তবায়নই হবে মূল লক্ষ্য। কারণ যদি ধানের শীষে ভোট দেন, সংস্কার হবে না; যদি পাল্লায় ভোট দেন, তবুও হবে না।''
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ''আমরা আগামী পার্লামেন্টে কোনো একক নেতৃত্ব চাই না। কারণ, যিনি সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধা দিয়েছেন, তিনি নিজেকে রাজা ভাবতে শুরু করেছেন, ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠছেন। তাহলে এক ফ্যাসিস্টকে বিদায় দিয়ে আরেক ফ্যাসিস্টকে আনা কি যুক্তিযুক্ত?''
পাটোয়ারী সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ''জুলাই সনদের আলোকে আইন ও রীতিনীতির পরিবর্তনের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। ইনফরমাল শ্রমিকদের ফরমাল কাঠামোয় আনুন।''
তিনি বলেন, ''জাতীয় নাগরিক পার্টি বিশ্বাস করে জনগণই বড়, ভোট নয়। জনগণ যখন জাগবে, তখন হবে ব্যালট রেভোলিউশন। আর যদি বাধা দেওয়া হয়, তবে বুলেট রেভোলিউশনও আসবে।''
এসময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি শ্রমিক ফেডারেশনে সাধরণ সম্পাদক বাবুল আক্তার, শ্রমিক সংহতি আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা আক্তার, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আতিকুর রহমান, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিবসহ জাতীয় শ্রমশক্তির নেতৃবৃন্দ।
কেএন/টিকে