আসন্ন নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে না : শিশির মনির

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের ওপর ২০ নভেম্বর রায় ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ। সেদিন আপিল বিভাগের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা। তবে তারা বলছেন, আপিল বিভাগের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরলেও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হবে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) জামায়াতে ইসলামীর পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সম্ভব নয়। কারণ সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কথা বলা আছে। এখনতো কোনো সংসদ নেই। সংসদ ভেঙে গেছে এক বছরের বেশি সময় আগে। আমরা আশা করছি, চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। আমরা সব আবেদনকারী আপিল বিভাগে এর পরের নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে চেয়েছি।

এর আগে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের শুনানি শেষ হয়। এ বিষয়ে আগামী ২০ নভেম্বর রায় ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। টানা ১০ দিন শুনানি শেষে দেশের সর্ব্বোচ আদালত ঐতিহাসিক এ মামলার রায়ের দিন ঠিক করলেন।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের অন্য ৬ সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহামদ শিশির মনির। ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ, ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবির।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।

এর আগে মঙ্গলবার, গত ২, ৪, ৫, ৬ নভেম্বর ও ২৯, ২৮, ২৩, ২২ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের টানা শুনানি হয়েছে।

গত ২১ অক্টোবর নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের শুনানি শুরু হয়।

গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।

এরপর ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আপিল করেন।

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।

এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।

ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন- তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।

আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৬ অক্টোবর একটি আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এছাড়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

পরে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর একটি আবেদন করেন।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দিনাজপুরে বাস-ট্রাক্টরের সংঘর্ষে নিহত ২ Dec 27, 2025
img
গণমাধ্যমের ওপর হামলা বাংলাদেশের মর্মমূলে আঘাত: কাদের গনি চৌধুরী Dec 27, 2025
img
‘আমি ক্ষমাপ্রার্থী’, দল বদলের বিষয়ে রাশেদ খাঁন Dec 27, 2025
img
স্মার্ট এনআইডি কার্ড বিতরণ শুরু Dec 27, 2025
img
গত ১৫ বছরে দেশে প্রকৃত অর্থে কোনো নির্বাচন হয়নি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 27, 2025
পরামর্শ বরকতময় করার উপায় | ইসলামিক টিপস Dec 27, 2025
img
আগামীকাল বঙ্গভবনে শপথ নেবেন দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি Dec 27, 2025
নবীজি অন্যদের সাথে যেমন আচরণ করতেন | ইসলামিক জ্ঞান Dec 27, 2025
হাদির কবর জিয়ারত করতে আসছেন তারেক রহমান Dec 27, 2025
উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বে না ইনকিলাব মঞ্চ, অচল শাহবাগ Dec 27, 2025
img
সফলতা আসে সততার পথ ধরে: ইমরান হাশমি Dec 27, 2025
img
নতুন বাংলাদেশ গঠনে তারেক রহমানের নেতৃত্ব অত্যন্ত প্রয়োজন: রাশেদ খান Dec 27, 2025
img
আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন গ্রেপ্তার Dec 27, 2025
img
নির্বাচিত সরকারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবে অন্তর্বর্তী সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 27, 2025
img
চিংড়ি রপ্তানিতে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুসরণের আহ্বান মৎস্য উপদেষ্টার Dec 27, 2025
img
উইকেটের কারণে দ্রুত এগিয়েছে ম্যাচ: রুট Dec 27, 2025
পরামর্শ বরকতময় করার উপায় Dec 27, 2025
img
মাত্র ১৩২ রানে থেমে গেল রাজশাহী ওয়ারিয়র্স Dec 27, 2025
img
'খুদে মেসি' সেই সোহান চান তারেক রহমানের সাক্ষাৎ Dec 27, 2025
img
ঢাকা-১৭ আসনে ভোটার হচ্ছেন তারেক রহমান: ইসি সচিব Dec 27, 2025