জবিতে ছাত্রদলের দুই পক্ষের কয়েক দফা সংঘর্ষ, শিক্ষকসহ আহত ১২

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ ঘটেছে। এতে শিক্ষকসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষে ছাত্রদলের বাসেত ও সুমন সরদারের পক্ষের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে তিন দফা সংঘর্ষ হয়।

আহতদের মধ্যে আছেন মার্কেটিং বিভাগের সামিউদ্দিন সাজিদ, আল-আমিন, আশরাফুল, প্রত্যয়, ইব্রাহিম, জনি ও জাহিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদী এবং বাংলা বিভাগের ছাব্বীর। আহত সাজিদ ও জনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেত এবং জাফর আহমেদ গ্রুপের অনুসারী। অপরদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদী সুমন সরদার গ্রুপের অনুসারী।

শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে আস-সুন্নাহ পরিবহনের বাসে মার্কেটিং বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজিদ ও তার বন্ধুরা কথা বলছিলেন। এসময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদী তাদের কথা বলতে নিষেধ করেন এবং হুমকি দেন- ‘তোমাকে দ্বিতীয় গেটে ঝুলিয়ে রাখবো।’ পরে সাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট ও হলে গিয়েও সাজিদের খোঁজ নেন। মঙ্গলবার দুপুরে দ্বিতীয় গেটের সামনে সাজিদ তার বন্ধুদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকলে সাদী, আহ্বায়ক সদস্য মাসফিক রাইন, বাংলা বিভাগের আশরাফুল ইসলাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক আরাফাত সেখানে গিয়ে তাকে ডাকেন। কিছুক্ষণ পর সাদী ও তার সহযোগীরা অতর্কিতভাবে সাজিদের ওপর হামলা করেন। তাকে বাঁচাতে গেলে আল-আমিন, প্রত্যয়, ইব্রাহিম ও জাহিদের ওপরও হামলা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাজিদ দ্বিতীয় গেটের সামনে এক নেতার সঙ্গে কথা বলছিলেন। এসময় পেছন থেকে সাদীর অনুসারীরা এসে তাকে আঘাত করতে শুরু করেন। ছাত্রদলের সিনিয়র নেতাকর্মীরা ঠেকাতে গেলে তাদের সামনেই পিটুনি চলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘সাজিদকে যারা মেরেছে, তাদের মধ্যে আমার সংগঠনের সদস্যও ছিল। আমি থামাতে গিয়েও পারিনি। তারা এমন আচরণ করছিল, যেন আমরাই সন্ত্রাসী, আমাদের যা ইচ্ছা তাই করবে।’

পরে দ্বিতীয় দফায় শান্ত চত্বরে সংঘর্ষ হয়। সেখানে চেয়ার দিয়ে আল-আমিনের মুখে আঘাত করা হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল। তিনি ও অন্য সিনিয়র নেতারা দুই পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিনের কক্ষে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সাদীকে সেখানে আনার সময় তৃতীয় দফায় আবার সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে জনি, রাব্বীসহ আরও কয়েকজন আহত হন। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মো. নঈম আক্তার সিদ্দিকী, ফেরদৌস হোসেন ও মাহাদী হাসান জুয়েলসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন।

শিক্ষার্থী সাজিদ বলেন, ‘গতকাল সকালে আস-সুন্নাহ বাসে কথা বলছিলাম। সাদী এসে ধমক দিয়ে বলে “তোরে সেকেন্ড গেটে ঝুলিয়ে রাখবো”। আজকে ১৫-২০ জন নিয়ে এসে আমার, আল-আমিন, প্রত্যয়, ইব্রাহিমদের ওপর হামলা করে। গতকাল হলে গিয়েও আমার খোঁজ নিয়েছে।’

আহত শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, ‘চেয়ার দিয়ে এমনভাবে মুখে আঘাত করেছে যে মুখ ফুলে গেছে, চেয়ারটা ভেঙে গেছে।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন সরদার বলেন, ‘আস-সুন্নাহ হলের বাসের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। এতে রাজনৈতিক কোনো বিষয় জড়িত না।’

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম। দুই পক্ষকে সামলানোর চেষ্টা করেছি। পরে শিক্ষকদের সঙ্গে বসে সমঝোতা হয়েছে।’

যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুই বিভাগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। পরে তা বড় আকার ধারণ করে। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে, তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


ইউটি/টিএ



Share this news on:

সর্বশেষ

img
ঢাকার পথে সমিত সোম, নেপাল ম্যাচেই নামবেন মাঠে Nov 11, 2025
img
মেহেদী হাসান মিরাজের খেলায় মুগ্ধ আয়ারল্যান্ড কোচ Nov 11, 2025
img
শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বিচার শুরুতে প্রস্তুত Nov 11, 2025
img
দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ শতাংশ হারে আবাদযোগ্য জমি হ্রাস পাচ্ছে : রিজওয়ানা Nov 11, 2025
img
অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কঠোর বার্তা দিলেন সিএমপি কমিশনার Nov 11, 2025
img
ট্রেন থেকে পড়ে চট্টগ্রামে রেল কর্মকর্তা আহত Nov 11, 2025
img
নবাগতদের শ্রেয়া ঘোষালের গান শোনার পরামর্শ নোরা ফাতেহির Nov 11, 2025
img
শিশুর প্রাণরক্ষার অস্ত্রোপচার কখনো থেমে থাকবে না: সুরকার মিথুন Nov 11, 2025
img
ডাল, ভাত ও মাছের ঝোলেই শান্তি খুঁজে পান ঋত্বিক চক্রবর্তী Nov 11, 2025
img
‘নির্বাচন হলে জামায়াতের অস্তিত্ব থাকবে না’- এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন মোস্তফা ফিরোজ Nov 11, 2025
img
শচীন দেববর্মনের সুর নিয়ে শ্রীকান্ত আচার্যের আবেগঘন স্মৃতিচারণ Nov 11, 2025
img
ভোজ্যতেল সরবরাহে ডিও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাইলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা Nov 11, 2025
img
দেশে ফের সোনার দামে বড় লাফ Nov 11, 2025
img
দীর্ঘ বিরতির পর ক্রিসমাসে প্রিয়াঙ্কা ফিরছেন গায়িকা হিসেবে Nov 11, 2025
img
দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩১ দশমিক ১০ বিলিয়ন : কেন্দ্রীয় ব্যাংক Nov 11, 2025
img
রাকসুর সম্মাননা স্মারক পেলেন সাবেক ভিপি রিজভী Nov 11, 2025
img
২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ লাখ দক্ষ ক্যাডেট তৈরির লক্ষ্য নিয়েছে বিএনসিসি Nov 11, 2025
img
ইয়ামালকে নিয়ে বড় দুঃসংবাদ, বার্সেলোনার উপর ক্ষোভে ফুঁসছে স্পেন Nov 11, 2025
img
‘ঢাকা লকডাউনে টাকা দিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী’ Nov 11, 2025
img
আবারও ঢাকায় আসছেন অনুভ জৈন Nov 11, 2025