৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের শত্রু মিত্র চিহ্নিত করার দিন: তারেক রহমান

বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে গেলে আমার একটি উক্তি মনে আসে উক্তিটি এ রকম 'অতীত নিয়ে সবসময় পড়ে থাকলে এক চোখ অন্ধ, অতীতকে ভুলে গেলে দু'চোখই অন্ধ'।

ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বুধবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সুতরাং, আমাদেরকে যেমন সারাসময় ইতিহাস চর্চায় থাকার দরকার নেই অপরদিকে ভবিষ্যতের পথ চলায় ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করাও কিন্তু আরেকটি ঐতিহাসিক ভুল। তাই ১৯৭৫ সালের ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর সম্পর্কে আপনাদের গুরুত্ত্বপূর্ণ আলোচনার রেশ ধরেই আমি বলতে চাই।

যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে চেয়েছিলো, যারা জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারহরণ করে দেশে একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল, যারা দেশের শৌর্য বীর্য সাহস এবং সম্মানের প্রতীক সেনাবাহিনীর গৌরবকে ভুলুন্ঠিত করতে চেয়েছিলো, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের এই দিনে দেশপ্রেমিক সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের পরাজয় ঘটেছে।

দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের পথ ধরে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত সেই অপশক্তি পরবর্তীতে পুনরায় মহাজোটের নামে একজোট হয়ে দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বিডিআর পিলখানায় পরিকল্পিত সেনা হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে রাখতে চেয়েছিলো, জনগণের ভোটের অধিকার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল।

হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বীর জনতার গণ অভ্যুত্থানে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় পর দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। বিএনপি মনে করে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের। ২০২৪ ছিল দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার।

সুতরাং, ভবিষ্যতে আর কেউ যাতে দেশ এবং জনগণের অধিকার হরণ করতে না পারে দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে এটিই হোক আমাদের এবারের ৭ নভেম্বরের প্রধান অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-ভৌগোলিকরাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখতে চাই তাহলে আমাদেরকে ৭ নভেম্বরের মতো সিপাহী জনতার বিপ্লবের চেতনা মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে।

৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তাবেদার অপশক্তির বিরুদ্ধে সিপাহী জনতার বিপ্লব, ৯০ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন কিংবা ২৪ এর ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থান এভাবে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে প্রতিটি বিপ্লব কিংবা অভ্যুত্থানের একটাই আকাঙ্খা ছিল। কি সেটি? সেটি হলো স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা।

দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী চক্রের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে গিয়েও অসংখ্য অগণিত মানুষ জীবন দিয়েছেন। শুধুমাত্র জুলাই-আগষ্টেই শহীদ হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ। ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলনে ছাত্র-জনতা-নারী-পুরুষ-কৃষক-শ্রমিক সকল শ্রেণী পেশার মানুষ কেন রাজপথে নেমে এসেছিলেন?

আমাদের জানা থাকা দরকার জনগণ কিন্তু রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই রাজপথে নেমে এসেছিলেন। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, অবশ্যই কোনো একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলবা গোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা রাজনৈতিক দরকষাকষি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্যই হাজারো লাখো মানুষ রাজপথে জীবন বিলিয়ে দেয়নি।

জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র যখন প্রস্তুত হচ্ছে তখন কয়েকটি রাজনৈতিক দলঅন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কার্যতঃ গণতন্ত্রকামী জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে/অবস্থান নিয়েছে।

আমি আবারো ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সহযোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বর্তমান দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুমকি ধামকি না দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে জনগণের মুখোমুখী হোন। আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মনে রাখা দরকার নিজ নিজ দলীয় সমর্থক নেতাকর্মীদেরবাইরেও কিন্তু অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় এক বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠি রয়েছেন।

এই লাখো কোটি অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয়জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা বাস্তবায়নের দিকে নজর দেয়া রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের গুরুত্ত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।
মাসের পর মাস ধরে দেশের জনগণ দেখে আসছিলো অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালের একটি উল্লেখযোগ্য সময় পার করে দিয়েছেন। কিন্তু এইসব আলোচনায় অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় সেই বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠির নিত্যদিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কি আলোচিত হয়েছিল?

আমন্ত্রিত রাজনৈতিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কৃষি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা করেছিলেন? নারীর নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থান তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছিলো? দেশের কৃষক শ্রমিক দিনমজুর স্বল্প আয়ের মানুষ কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠির প্রতিটিদিনের জীবন যুদ্ধের কথা কি রাজনীতিবিদদের আলোচনার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছিলো?

দেশে কিন্তু শুধু কোটা সংস্কার নয় নিরাপদ সড়কের জন্যও তুমুল আন্দোলন হয়েছিল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গত এক বছরে দেশে সড়ক পথে কমপক্ষে সাত হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে মধ্যে ৪৮ শতাংশই নারী-শিশু ও পথচারী। আহত হয়েছেন ১৩ হাজার মানুষ।

বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি হতাহতদের তালিকায় বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নানা বিষয়ে শত শত দফা নিয়েআলোচনা হলেও সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি কি আলোচনায় জায়গা করে নিতে পেরেছিলো? এইসব প্রশ্নগুলো কাউকে দোষারোপ করার জন্য নয়।

বরং একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমরা কথা দাঁড়িয়ে আছি কিংবা আমার নিজের কাছেই আমার প্ৰশ্ন আমাদের রাজনীতি তাহলে কাদের জন্য? দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার কিছু প্রশ্ন আমার কিছু উপলব্ধির কথা আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। এ জন্য আজ আমি আপনাদের কাছে একটু অতিরিক্ত সময় চেয়ে নিচ্ছি। আশা করি বিরক্ত হবেন না।

আমি মনে করি, প্রচলিত রাজনীতির গুণগত সংস্কারচাইলে পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে জন নিরাপত্তার বিষয়গুলো জনগণের জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো রাজনীতিবিদদের কর্ম পরিকল্পনায় আরো গুরুত্ব পাওয়া দরকার।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার আরো অধিক মনোযোগী হওয়া দরকার।

আমি আজকের এই আলোচনা সভায় আরো কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। যতটুকু জেনেছি, দেশে এবার ১ কোটি ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। আলু উৎপাদন করে কৃষকরা মনে হয় বিপাকে পড়েছেন। কারণ আলুর উৎপাদন খরচ এবং উৎপাদিত আলু হিমঘরে রাখতে প্রতি কেজি আলুর পেছনে খরচ পড়ছে প্রায় ২৫ থেকে ২৭ টাকা। অথচ আলু চাষিরা এখন অর্ধেক দামেও উৎপাদিত আলু বাজারে বিক্রি করতেপারছেন না।

আলুচাষ করে আলুচাষিরা এবার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছেন। অপরদিকে আমরা যদি দেখি দু'একটি রাজনৈতিক দলের আবদার মেটাতে কথিত অকারণ গণভোট করতে হলেও/রাষ্ট্রকে প্রায় সমপরিমান টাকা গচ্চা দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে লোকসানের মুখোমুখি এইসব আলু চাষিদের কাছে এই সময়ে 'গণভোটে'র চেয়ে আলুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া বেশি গুরুত্ত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। দেশবাসীর ভাবনার জন্য প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলাম।

এবার আসি পেঁয়াজ উৎপাদন প্রসঙ্গে। আমি যতটুকু দেখেছি দেশে চাহিদার চেয়েও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনের সক্ষমতা কৃষকদের রয়েছে। তারা যথেষ্ট পরিমান পেঁয়াজ উৎপাদনও করছেন। তবে দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর পেঁয়াজ আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়।

আমার কাছে মনে হয়, জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায় করে কথিত 'গণভোট উৎপাদনের' চেয়ে সেই টাকায় পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপন কৃষকদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ভুক্তভোগী কৃষকদের বলার জায়গা কোথায়?

সম্মানিত উপস্থিতি বর্তমানে দেশে গার্মেন্টস শিল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। এতসংখ্যক নারী যদি আট ঘন্টার পরিবর্তে ৫ ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য হয় তাহলে তাদের বাকি কর্মঘন্টার টাকা কে দেবে? নারীর কর্মঘন্টা কমানোর কথা বলেচাকুরীদাতাদেরকে কৌশলে নারীদেরচাকুরী না দেয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে কিনা? দেশের নারী সমাজের মধ্যে এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে পড়ছে আমার মনে হয় এমন পরিস্থিতিতে কর্মজীবী নারীদের মনে ছড়িয়ে পড়া চাকুরী সংকোচনের আতঙ্ক কাটানো এই মুহূর্তে কথিত 'গণ ভোটে'র চেয়ে বেশি দরকার।

দেশে বেকারত্বের হার বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে বলা হয়েছে দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৮ শতাংশ। আরো ১৮ শতাংশ মানুষ যেকোনো সময় গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। দেশে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছে। দেশে উচ্চমাধ্যমিক এবং গ্রাজুয়েট ডিগ্রিধারী প্রতি ৫ জনের ১ জন বেকার।

সম্প্রতি বি-জি-এম-ই জানিয়েছে, গত ১৪ মাসে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে কমপক্ষে ৩৫৩টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এক লাখ ২০ হাজার মতো শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।কর্মহীন এইসব মানুষগুলোর কাছে রাষ্ট্রের হাজার টাকা ব্যায় করে কথিত 'গণভোটে'র চাইতে একটি চাকুরী কি বেশি জরুরি নয়? আপনারা কি বলেন?

আনফর্চুনেটলি, আমরা মাসের পর মাস রাষ্ট্র মেরামতের নানা উপাদান নিয়ে আলোচনা করলেও এই রাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ বেকারদের কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনার জন্য একটি দফাও উত্থাপন করিনি বলেই মনে হয়। দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে/সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এতো সংস্কার কমিটি হলো অথচ একটি শিক্ষা সংস্কার কমিটি করা হলোনা। শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যয়ের একটি দিক সম্পর্কে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ২০২৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার ছিল সর্বনিম্ন। অপরদিকে পরীক্ষায় দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। একটি দুঃশ্চিন্তার বিষয় হলো, সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজি বিষয়ে পাস করতে পারেনি। ইংরেজির পর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থীতথ্য প্রযুক্তি অর্থাৎ আইসিটি-তে অকৃতকার্য হয়েছেন।

ইংরেজি এবং আইসিটি'র মতো এমন গুরুত্ত্বপূর্ণ দু'টি বিষয়ে এভাবে অকৃতকার্য হতে থাকলে বর্তমানে 'এ আই' যুগের এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সম্মান এবং মর্যাদার সঙ্গে টিকে থাকা সম্ভব কিনা এই প্রশ্নটিও রাখলাম। তবে আমি মনে করি বর্তমান গ্লোবাল ভিলেজে শিক্ষা দীক্ষায় টিকে থাকতে হলে আমাদেরকে 'তথাকথিত গণভোট' নিয়ে গবেষণার পরিবর্তে শিক্ষা সংস্কার নিয়ে গবেষণা সবচেয়ে বেশি জরুরি।

পলাতক লুটেরা বাহিনীর বেপরোয়া লুটপাটের পর দেশের ব্যাংকিং সেক্টর এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দেশের কমপক্ষে ২৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। জনগণকে ভয় দেখতে চাইনা...তবে আমাদেরকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে নাজুক হয়ে উঠছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ নয়।

২০০৬ সালে বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করার সময় দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৬ পার্সেন্ট। এরপর আর কোনো সরকারের পক্ষেই সেই রেকর্ড অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশেরও কম।

রপ্তানি আয় এবং রেমিটেন্স দেশে এই মুহূর্তে এই দুটি' খাত-ই দেশের অর্থিনীতির প্রধান ভরসার খাত। গত কয়েক মাসে রপ্তানি খাতেও নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ব্যাবসায়ী সমাজ এবং বিদেশে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরাও বলছেন, দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে প্রয়োজন জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি স্থিতিশীল সরকার।

অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি কোনো কোনো রাজনৈতিক দলনানা শর্ত দিয়ে জাতীয় নির্বাচনঅনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ একদিকে নির্বাচন না করেই রাষ্ট্রযন্ত্রে খবরদারির সুযোগ গ্রহণ করা অপরদিকে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথ সুগম করা। পলাতক স্বৈরাচারীর সহযোগীরা গত কয়েকদিন খোদ রাজধানীতে যেভাবে আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির করণীয় সম্পর্কে এটি একটি সতর্ক বার্তা হতে পারে বলে আমি মনে করি।

এটি এখন সবার কাছেই স্পষ্ট ফাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের একটি দল ফ্যাসিবাদের নিষ্ঠুরতা থেকে নিজেদের বাঁচাতে ফ্যাসিবাদীদের ছাতার নীচে আশ্রয় নেয়ার কৌশল অবলম্বন করেছিল। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার একইভাবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে থাকা দলটির ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছে কিনা এ ব্যাপারে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।

গণভোটের আড়ালে পতিত পরাজিত পলাতক অপশক্তিকে রাষ্ট্র রাজনীতিতে পূণর্বাসনের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে কিনা আমি এ ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহবান জানাই। স্বল্প মেয়াদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণ সকল ক্ষেত্রে সার্বিক সফলতা আশা করেনা। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্বও নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করেছে।

এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে/তারা কি একটি রাজনৈতিক দলের আকাঙ্খা বাস্তবায়ন করবে? নাকি দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে ফেব্রুয়ারীর জাতীয়ও নির্বাচনকেই অগ্রাধিকার দেবে।

সবশেষে, রাজপথের আন্দোলনের সকল সঙ্গীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, এ কথাটি আমি এর আগেও একবার বলেছিলাম, উত্তর কোরিয়ার সংবিধানে লেখা রয়েছে 'ডেমোক্রেটিক পিপল'স রিপাবলিক অফ কোরিয়া'।সংবিধানে লেখা থাকলেই সব কিছু নিশ্চিত হয়ে যায়না। আসলে সবার আগে প্রয়োজন রাষ্ট্র রাজনীতি সম্পর্কে মোনাফেকী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতার। প্রয়োজন গণতান্ত্রিক মানসিকতা। সর্বোপরি প্রয়োজন দেশপ্রেম এবং জাতীয় ঐক্য।

দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং জনসমর্থিত/দল হওয়া সত্ত্বেও ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার ব্যাপারে বিএনপি সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে। এটি কথার কথা নয় এটি প্রমাণিত সত্য। রাজনৈতিক ঐক্যমত কমিশনের প্রতিটি দফা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বিএনপি অধিকাংশ পয়েন্টেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছে।

অতএব, আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার।জুলাই সনদে যা অঙ্গীকার করা হয়েছে বিএনপি এইসব অঙ্গীকার রক্ষা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তবে কোন রাজনৈতিক দল যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দুর্বল পেয়ে যা ইচ্ছে তাই আদায় করে নিতে চায় কিংবা বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে সেটি শেষ পর্যন্ত তাদের নিজেদের জন্যই রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কিনা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সঙ্গীদের প্রতি আহবান, অযথা পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিরোধী চক্রান্ত নস্যাৎ এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে সংঘটিত সিপাহী জনতার বিপ্লব উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এই আলোচনা সভায় আমি স্বাধীনতার ঘোষকের একটি কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, .তিনি বলেছিলেন, জাতীয় ঐক্য আমাদের শক্তি-বিভাজন আমাদের দুর্বলতা'
পরিশেষে আমি পুনরায় একটি স্লোগান উচ্চারণ করে আমি আমার আজকের বক্তব্য এখানেই শেষ করছি 'দিল্লি নয় পিন্ডি নয় নয় অন্য কোনো দেশ সবার আগে বাংলাদেশ'।

কেএন/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সারা দেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা Dec 29, 2025
img
মোটরসাইকেলে হেলমেট পরে এসে গুলি, প্রাণ গেল যুবদল নেতার Dec 29, 2025
img
খালেদা জিয়া এখনো সংকটময় পরিস্থিতিতে Dec 29, 2025
img
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ২৭৮০ জন, আজ জমা দেওয়ার শেষ দিন Dec 29, 2025
img
এনসিপি ছাড়ার ঘোষণা মওলানা ভাসানীর নাতির Dec 29, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়া -৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন কবির আহমেদ ভুঁইয়া Dec 29, 2025
img
মাহফুজ নির্বাচন করবেন না, মনোনয়নপত্র নেওয়ায় বিব্রত : এনসিপি নেতা মাহবুব Dec 29, 2025
img
সাবেক এমপির বিএনপি থেকে পদত্যাগ Dec 29, 2025
img
গাইবান্ধায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সাজু প্রধান গ্রেপ্তার Dec 29, 2025
img
ছাত্রদলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা Dec 29, 2025
img
দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ৪ জন নিহতের ঘটনায় মামলা Dec 29, 2025
img
যুদ্ধবিরতিতে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়াকে শুভেচ্ছা জানালেন ট্রাম্প Dec 29, 2025
img
জাতীয় পার্টির (জাফর) নতুন মহাসচিব নওয়াব আলী আব্বাস Dec 29, 2025
img
সিরাজগঞ্জে বঞ্চিত হয়েও বিএনপির নামেই মনোনয়ন কিনলেন ৫ নেতা Dec 29, 2025
img
শিক্ষার্থীদের হাতে নির্ভুল বই তুলে দিতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে : শিক্ষা উপদেষ্টা Dec 29, 2025
img
আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন এনসিপির আখতার হোসেন Dec 29, 2025
img
জামায়াতের সঙ্গে কোনো আদর্শিক ঐক্য হয়নি, এনসিপি তার আগের অবস্থানেই আছে : নাহিদ Dec 29, 2025
img
৪০ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটল মোজাম্বিকের Dec 29, 2025
img
নির্বাচন না হওয়ার আর কোনো সংশয় নেই : মো. আসাদুজ্জামান Dec 29, 2025
img
চার দফা দাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা Dec 29, 2025