ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়কদের মধ্যে এখনো তাকে সহজে আলাদা করা যায়। যার অভিনয় ও স্টাইলে এখনও মুগ্ধ বর্তমান প্রজন্মের দর্শকেরা। ক্যারিয়ারের সময়সীমা মাত্র চার বছর, আর তাতেই হয়েছিলেন খ্যাতিমান। বলছি ঢাকাই সিনেমার ক্ষনজন্মা নক্ষত্র সালমান শাহের কথা।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সবাইকে বিস্মিত করে না ফেরার দেশে চলে যান নায়ক সালমান শাহ। মৃত্যুর এত বছর পরও দর্শক হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন ঢালিউডের হার্টথ্রব নায়ক সালমান শাহ।
সালমানের পরিবার শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, এটা হত্যাকাণ্ড। ২১ বছর হতে চলেছে। কিন্তু এখনো এটা স্পষ্ট হয়নি যে তাকে হত্যা করা হয়েছে, না তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
বিজ্ঞাপন
সালমানকে হত্যার দায় স্বীকার করে রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ নামের এক তরুণ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই জবানবন্দির ভিত্তিতে সালমানের মা হত্যার অভিযোগে ১১ জনকে আসামি করে আদালতে নালিশি মামলা করেন। ওই ১১ আসামি হলেন সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুসি, ধনাঢ্য আজিজ মোহাম্মদ ভাই, রেজভী আহমেদ ফরহাদ, চলচ্চিত্রের খল অভিনেতা আশরাফুল হক ডন, নজরুল শেখ, ডেভিড, রাবেয়া সুলতানা রুবি, মোস্তাক ওয়াইদ এবং সালমানের বাসার গৃহকর্মী আবুল হোসেন খান।
সালমানকে হত্যার অভিযোগ স্বীকার করে রেজভী আহমেদ যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ওই রাতে ডনের নেতৃত্বে সালমানের বাসায় গেলে নিচতলার একটি দরজা খুলে দিয়েছিলেন রুবি। তাঁর ঘর থেকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই বের হয়ে হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। রুবি ইস্কাটনে যে ভবনে সালমান থাকতেন, তাঁর সামনে মে ফেয়ার বলে একটি বিউটি পারলার চালাতেন। তাঁর চীনা স্বামী রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতেন।
এদিকে ২০১৭ সালে ইউটিউবে ছাড়া ভিডিওতে রুবি বলেছেন, সালমানকে খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই খুনের বিষয়ে আমি সব জানি। যেভাবেই হোক আবার যেন মামলা তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। আমি যেমন করেই হোক আদালতে সাক্ষ্য দেব। ভিডিওতে সালমানের মাকে উদ্দেশ করে তিনি বারবার বলেছেন, ইমন আত্মহত্যা করে নাই, তাকে খুন করা হইছে। নীলা ভাবি, প্লিজ, কিছু একটা করেন, কিছু একটা করেন।...আমার হাজব্যান্ড এইটা করাইছে আমার ভাইরে দিয়ে।...সামিরার ফ্যামিলি করাইছে...। আমার ছোট ভাই রুমিরে দিয়া খুন করানো হইছে। রুমিরেও খুন করা হইছে। আমি জানি না রুমির কবর কোথায় আছে। রুমির লাশ যদি কবর থেকে তুলে ঠিকমতো আবার পোস্টমর্টেম করে, তাহলে দেখা যাবে যে ওরা গলা টিপে মাইরা ফেলছে।...ওরা আমারেও খুন করার চেষ্টা করছে। এই কেস যেন না শেষ হয়।
সেসময়ে মামলাটির তদন্ত সংস্থা পিবিআইর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, সালমান শাহের বিউটিশিয়ান হিসেবে ছিলেন রুবি। সালমানের বাসায় প্রায়ই যেতেন। ঘটনার আগে-পরে ওই বাসাতেই তার অবস্থান ছিল। সালমান মারা যাওয়ার পরে রুবি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। আমরা তাকে খোঁজার ব্যাপক চেষ্টা করেছি। অনেক দিন পরে তাকে পেলাম ইউটিউবে। তবে তার কথাগুলো যাচাই করে দেখতে হবে তা কতটা সত্য আর কতটা মিথ্যা। আবার এমনও হতে পারে কেউ তাকে দিয়ে বলাচ্ছে। এসবই তদন্তের বিষয়।
যোগাযোগ করা হলে লন্ডনে অবস্থানরত সালমান শাহর মা নিলুফার চৌধুরী বলেছিলেন, তার এ বক্তব্যের পরে বলার আর কোনো অপেক্ষা রাখে না যে আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছিল। আমি জানতাম এই দিনটা আমার আসবে। রুবি এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় আছে। তাকে নিরাপত্তা দিয়ে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হোক। আর রুবি যাদের নাম বলেছে, তাদের এখনই গ্রেপ্তার করা হোক।
তিনি বলেন, আমি বিচার চাই। এত বছর আমি হতাশায় ভুগছি। দেশে আমারও নিরাপত্তা নেই। যার কারণে আমি লন্ডনে আছি।
মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্রজীবনে সালমান শাহ ২৭টি ছবিতে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। দর্শক ও সমালোচকদের কাছে তিনি ছিলেন একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। মৃত্যুর ২৯ বছর পরও তার নাম চিরস্মরণীয় থেকে গেছে।
এসএন