এমন রাত আবার কবে আসবে! ২২ বছর নাকি ২ বছর পর? উত্তরটা এখন অনায়াসে দেওয়া যায়। না, আর ২২ বছর অপেক্ষা নয়, ২ বছর পরই হতে পারে আরেকটি জয়। কারণ, এই বাংলাদেশ জিততে শিখে গেছে। এই বাংলাদেশের আছে একজন হামজা চৌধুরীর মতো যোদ্ধা।
মঙ্গলবার যেমন ভারতের বিপক্ষে দারুণ এক ফুটবলযুদ্ধ জিতেছে বাংলাদেশ। যার আনন্দ ছুঁয়ে গেছে গোটা বাংলাদেশে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর দেশের ১৮ কোটি মানুষকে খুশি করতে পেরে উচ্ছ্বসিত হামজাও।
লেস্টার সিটিতে খেলা এই মিডফিল্ডার ভারতকে হারানোর আনন্দে খুঁজে পেয়েছেন এফএ কাপ জয়ের তৃপ্তি। ২০২০-২১ মৌসুমে ইংলিশ ক্লাব লেস্টারের হয়ে এফএ কাপ জিতেছিলেন হামজা। গত ২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জার্সি প্রথম গায়ে জড়ান তিনি। এরপর আজ পর্যন্ত এশিয়ান বাছাইয়ে পঞ্চম ম্যাচ খেলেছেন। আগের চার ম্যাচ জিততে জিততেও হয়নি। শেষমেশ আজ এল সেই কাঙ্ক্ষিত জয়।
ম্যাচের পর হামজাকে প্রশ্ন করা হলো এফএ কাপ জয়ের তুলনায় এগিয়ে রাখবেন কি না। হামজা উত্তর দিতে দেরি করেননি, ‘বিভিন্ন কারণে, নিশ্চিতভাবেই। আজ আমরা ১৮ কোটি মানুষকে খুশি করেছি, তাই এর সঙ্গে অন্য কোথাও কিছুই তুলনা করা যায় না।’
লাল-সবুজ জার্সিতে প্রথম জয় পেয়েছেন হামজা। এটা তাঁর কাছে অনেকগুলো স্বপ্নের মধ্যে একটি স্বপ্নপূরণও, ‘অবশ্যই আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। একজনের একাধিক স্বপ্ন থাকতে পারে। আমারও তা-ই। এটি আমার স্বপ্নগুলোর মধ্যে একটি। ইনশা আল্লাহ আমরা খুব শিগগির একটি টুর্নামেন্টের জন্য যোগ্যতা অর্জন করব।’
১১ মিনিটে শেখ মোরছালিনের গোলে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে চেপে ধরেছিল ভারত। আক্রমণের পর আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করেছে বাংলাদেশের রক্ষণকে। তবে আজ হতাশার সবটুকু বরাদ্দ ছিল তাদের জন্যই, শেষ মিনিট পর্যন্ত আক্রমণ করেও গোল পায়নি সফরকারীরা। এমন কয়েকটি আক্রমণ ছিল, যেগুলোতে গোল হতে হতেও হয়নি।
ভাগ্য সহায় ছিল কি না জানতে চাইলে হামজার সোজাসাপটা উত্তর, ‘ভাগ্য নিজেকেই তৈরি করতে হয়। আল্লাহর ইচ্ছায়, আমরা জিতেছি। ড্রেসিংরুমে কঠিন সময় ছিল। আমরা গতকাল বলেছিলাম যে ফিরে আসতে চাই এবং একসঙ্গে উদ্যাপন করতে চাই। খেলোয়াড়েরা পরিবার থেকে কত সময় দূরে কাটিয়েছেন এমন জয়ের জন্য।’
২০২৭ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের সঙ্গে খেলা এ ম্যাচটিকেই সবচেয়ে বড় ম্যাচ হিসেবে দেখেছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। আগের চার ম্যাচে যা হয়নি, সেটাই করে দেখাতে চেয়েছেন সবাই।
হামজা বলেন, ‘এটি আমাদের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। কোচ বারবার বলছিলেন যে আমরা পারফরম্যান্স করছি, এখন আমাদের ফল দরকার।’
বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ার কাবরেরার জন্যও দিনটি ছিল উদ্যাপনের। তবে জয়টাকে স্রেফ জয় হিসেবেই দেখতে চান তিনি, ‘আমি এ জয়ে অনেক খুশি। বিশেষ করে খেলোয়াড়দের জন্য খুশি। একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হলো, এই দলের জন্য এই জয় স্বাভাবিক হওয়া উচিত। আমাদের যেকোনো সময় ভারতকে হারানোর ক্ষমতা আছে, এটাও মাথায় রাখা দরকার।’
ভারতকে হারানোর আনন্দটা উপভোগ করলেও কাউকে একক কৃতিত্ব দিতে চান না বাংলাদেশ কোচ। বললেন, এই জয় সবার পারফরম্যান্সের ফসল, ‘সত্যি বলতে আজ আমি একজনকে বেছে নিতে পারব না। প্রত্যেকেই দুর্দান্ত খেলেছে। এমনকি আমিও কিছু সময়ের জন্য সংগ্রাম করেছি।কয়েকটি ভুল করার পরে ফিরে আসা সহজ নয়। তাই আজকের দিনের প্রত্যেক খেলোয়াড়ই কৃতিত্ব পাবে।’
এই ম্যাচের আগে ঘরের মাঠে খেলা সর্বশেষ দুই ম্যাচে নেপাল ও হংকংয়ের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে বাংলাদেশ। আজও সেই আশঙ্কা ছিল। তবে শিষ্যদের ওপর আস্থা ছিল কাবরেরার। তিনি জানতেন, এবার আর একই ভুল হবে না, ‘এখানে আসার আগে আমরা একে অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকারের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল। এ কারণেই আমরা শেষ মুহূর্তে ম্যাচ হারাইনি বা আগের গেমগুলোর মতো শেষ মিনিটে পয়েন্ট দিইনি। পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম যে আমরা সবাই মিলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব।’
এমআর/টিএ