আবু সাঈদ হত্যা মামলা

হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে ১৭তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ২৭ নভেম্বর

জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে ১৭তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ছিল আজ। তবে বিশেষ কারণে না হওয়ায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-২ এর অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন।

অপর সদস্য হলেন- জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এদিন এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি দেওয়ার কথা ছিল। তবে বিশেষ কারণে প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।

এদিকে, আজ সকালেও কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে গ্রেপ্তার ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন- এএসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ।

গতকাল রোববার ১৬তম দিনের মতো জবানবন্দি দেন সাজু রায়। আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। এছাড়া মৃত ঘোষণার পর পথ থেকে তার লাশটি পুলিশ কেড়ে নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন। পরে তাকে জেরা করেন পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স ও গ্রেপ্তারদের আইনজীবীরা।

এর আগে, ১৮ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন শিক্ষার্থী শান-এ রওনক বসুনিয়া। তিনিও বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। গত ১৬ নভেম্বর জবানবন্দি দিয়েছেন মিঠাপুকুর থানার ওসি মো. নূরে আলম সিদ্দিক। ১৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তিনি গত বছরের ১৬ জুলাইয়ের পুরো বর্ণনা তুলে ধরেন। ১৩ নভেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জবানবন্দি দেন পুলিশের নায়েক আবু বকর সিদ্দিক।

১২ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য দেন এসআই (সশস্ত্র) মো. আশরাফুল ইসলাম। রংপুর কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন এসি মো. আরিফুজ্জামান ও তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলামের নির্দেশে চালানো গুলিতে আবু সাঈদ শহীদ হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ১১ নভেম্বর জবানবন্দি দেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ। তিনি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারীদেরও একজন ছিলেন। ১০ নভেম্বর সাক্ষ্য দিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকিব রেজা খান। তিনিও হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। এ মামলায় যথাক্রমে ৪ নভেম্বর, ২১ ও ১৩ অক্টোবর সাক্ষী না আনতে পারায় পরপর তিনবার সময় পেছানো হয়।

গত ৬ অক্টোবর নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন জবানবন্দি দেন পুলিশের দুই উপপরিদর্শক। তারা হলেন- এসআই রফিক ও এসআই রায়হানুল রাজ দুলাল। গত ২৮ আগস্ট জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। একই দিন সাংবাদিক মঈনুল হকও সাক্ষ্য দেন।

গত ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে এ মামলায় বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ জন এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে গত ২২ জুলাই সরকারি খরচে চারজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।

চলতি বছরের ৩০ জুলাই পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত চার আইনজীবী। এর মধ্যে পাঁচজনের হয়ে লড়েন আইনজীবী সুজাত মিয়া। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুনুর রশীদ। এছাড়া শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত জাহান ও শহিদুল ইসলাম। ২৯ জুলাই তিন আসামির পক্ষে শুনানি হয়। এর মধ্যে শরিফুলের হয়ে লড়েন আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো। কনস্টেবল সুজনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু ও ইমরানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সালাহউদ্দিন রিগ্যান।

২৮ জুলাই এ মামলার ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। ৩০ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। আর ২৪ জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এ মামলায় মোট সাক্ষী ৬২ জন।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী গড়তে চায় জার্মানি Nov 24, 2025
img
রাষ্ট্রের মানসিকতা পরিবর্তন না হলে সাংবাদিক হয়রানি বন্ধ হবে না: অ‍্যাটর্নি জেনারেল Nov 24, 2025
img
লে. কর্নেল রেদোয়ানুলসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ৪ ডিসেম্বর Nov 24, 2025
img

নীলা ইসরাফিল

বাউল শিল্পীর গলা ধরা মানে বাংলার মাটির আত্মাকে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলা Nov 24, 2025
img
পে স্কেল নিয়ে বিকেলে বৈঠক, আসতে পারে সুপারিশ Nov 24, 2025
img
সেলিনা হায়াৎ আইভীর জামিন শুনানি পিছিয়েছে Nov 24, 2025
img
সংস্কার রাতারাতি সম্ভব না, সিঙ্গাপুরেরও ১০ বছর লেগেছে: আইন উপদেষ্টা Nov 24, 2025
img
তাজরীন ফ্যাশনস'এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ১৩ বছর আজ Nov 24, 2025
img
ভূমিকম্প নিয়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তর Nov 24, 2025
img
বড় উত্থানে পুঁজিবাজার, লেনদেনেও বেড়েছে গতি Nov 24, 2025
img
বিয়েতে ‘এক্সপায়ারি ডেট’ থাকা উচিত, মত কাজল দেবগণের Nov 24, 2025
img
ভাঙ্গা উপজেলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ. লীগ নেতা গ্রেপ্তার Nov 24, 2025
img
জোতাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গিয়ে ‘মানবিক ভুল’, ক্ষমা চাইল রিয়াল Nov 24, 2025
img
৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্ভব পে কমিশনের সুপারিশ জমা Nov 24, 2025
img
মানিয়ে নেওয়াই জীবনের বড় শিক্ষা: কোয়েল মল্লিক Nov 24, 2025
img
৪৪৪ দিন ধরে আরব আমিরাতে আটক ভাই, আবেগী বার্তা সেলিনার Nov 24, 2025
img
প্রভাসের 'দ্য রাজা সাব' কমেডি সিনেমা নিয়ে ভক্তদের উন্মাদনা Nov 24, 2025
img
৫ বছরের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মামলার জট কমবে: আইন উপদেষ্টা Nov 24, 2025
img
বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হবে দক্ষিণ এশিয়া: বিশ্বব্যাংক Nov 24, 2025
img
হ্যাজেলউড এবং খাজার ছিটকে পড়ার শঙ্কা Nov 24, 2025