বলিউডের ‘হি-ম্যান’ খ্যাত কিংবদন্তী অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণে শোক জানাচ্ছেন সাধারণ ভক্ত অনুরাগী থেকে বলিউডের সহকর্মীরাও! তাঁকে নিয়ে বলিউডের বর্ষীয়ান চিত্রনাট্যকার, গীতিকার ও কবি জাভেদ আখতার বললেন “একটি যুগের অবসান।”
তিনি বলেন, “আমরা সবাই স্তব্ধ, পুরো চলচ্চিত্রশিল্পই শোকাহত। দুর্ভাগ্যবশত, ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর দিনে আমি এখন মুম্বাইয়ে নেই। ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুতে সত্যিই একটি যুগের অবসান হলো। তিনি ছিলেন সেই মহীরূহদের একজন।”
জাভেদ আখতার জানান, ক্যারিয়ারের শুরুতেই তিনি প্রথম ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, “আমি নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করি, কারণ যখন আমি মুম্বাইতে এসেছিলাম, তখন আমি ছিলাম ক্ল্যাপার বয়। আমার বয়স ছিল ২০–২১, আর তিনি তখন তাঁর ক্যারিয়ারের শীর্ষে।
সহকারী পরিচালক হিসেবে আমার দ্বিতীয় ছবি ছিল ‘ইয়াকিন’, যেখানে তিনি ছিলেন সুপারস্টার, আর আমার বেতন ছিল মাত্র ১৭৫ টাকা। তাঁর আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার কোনো কারণই ছিল না।”
এরপর তিনি এমন একটি ঘটনার কথা বলেন, যা কয়েক দশক ধরে তাঁর মনে রয়ে গেছে। জাভেদ আখতার বলেন,“একবার তিনি আমার ওপর রাগ করে চিৎকার করেছিলেন। এরপর নিজে ফোন করে ক্ষমা চান। আমি এতটাই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম, কারণ তাঁর দুঃখ প্রকাশ করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। যখন আপনি কেউ নন এবং মানুষ আপনাকে চেনে না, তখন সাধারণত কেউ ই আপনার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না। কিন্তু ধর্মেন্দ্র অসাধারণ ভদ্র ও আন্তরিক ছিলেন! তিনি অন্যদের থেকে একেবারেই আলাদা ছিলেন।”
“তিনি ছিলেন এক অত্যন্ত ব্যতিক্রমী অভিনেতা” বলেন জাভেদ আখতার। ধর্মেন্দ্রর ব্যক্তিত্ব স্মরণ করে এদিন জাভেদ আখতার বলেন, “তিনি ছিলেন অদ্ভুতরকম ব্যতিক্রমী অভিনেতা ও মানুষ। তাঁর মধ্যে জন্মগত এক আত্মমর্যাদা ছিল, যেটাকে কেউ স্পর্শ করার সাহস পেত না। তিনি ছিলেন বিনয়ী ও ভদ্র।”
তিনি আরও বলেন,“একদিকে তিনি ছিলেন ‘হি-ম্যান’, শক্তিশালী নায়কের প্রতীক। কিন্তু বাস্তবে তিনি ছিলেন ঠিক উল্টো- নরম, শান্ত, বিনয়ী, ভদ্র।
একজন অভিনেতার ব্যক্তিত্বে এমন বিস্তৃত পরিসর খুবই বিরল। তিনি সত্যিই ছিলেন একজন ভালো মানুষ। তাঁর ছিল একেবারে দেশি রসিকতা।
আজ সত্যিই মনে হয়, একটি যুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।”
৯০ বছর পূর্ণ হওয়ার মাত্র ১৫ দিন আগে সোমবার (২৪ নভেম্বর) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ধর্মেন্দ্র। কিছুদিন আগে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল। সুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলে তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্বাসকষ্টের কারণে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। তিনি সম্প্রতি মুম্বাইয়ের দূষণের কারণে শহর ছেড়ে প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌরকে নিয়ে খানডালার ফার্মহাউসে বসবাস করছিলেন।
মুম্বাইয়ের পাওয়ান হ্যান্স শ্মশানে ধর্মেন্দ্রর শেষকৃত্যে শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার দুপুরে সেখানে হাজির হন অমিতাভ বচ্চন, আমির খান ও সালমান খানসহ বহু তারকা। নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনীর মাঝেই তাঁদের গাড়ি নিয়ে আসতে দেখা যায়। শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমার, সঞ্জয় দত্ত, অভিষেক বচ্চন, দীপিকা, রণবীর সিং, জায়েদ খান এবং প্রযোজক সিদ্ধার্থ রায় কাপুরসহ বলিউডের বহু তারকাদের উপস্থিত থাকতে দেখা যায়, সঙ্গে ছিলেন ধর্মেন্দ্রর পরিবারের সদস্যরাও।
প্রসঙ্গত, ১৯৩৫ সালে পাঞ্জাবে জন্ম নেওয়া ধর্মেন্দ্র ১৯৫৮ সালে ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিন ও বিমল রায় প্রোডাকশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত একটি সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতা জেতেন। তাঁর পর্দার উপস্থিতি দেখে সেদিনই তাঁকে বেছে নেওয়া হয়, আর সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর বলিউড-যাত্রা। পরবর্তীতে একই উদ্যোগের মাধ্যমেই রাজেশ খান্নাকেও পরিচিত করা হয় শিল্পে।
ধর্মেন্দ্র ধীরে ধীরে বলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়কদের একজন হয়ে ওঠেন। রোমান্টিক, অ্যাকশন ও কমেডি সব ধরনের ভূমিকায় তাকে সাবলীল অভিনয় করতে দেখা গেছে। ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী’র পর তিনি লাভ করেন পদ্মভূষণ, যা ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার।
এমকে/এসএন