অতীতে ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে কাজ করা কুম্বলে সতর্ক করে দেন, ব্যাটিং অর্ডারে ক্রমাগত পরিবর্তন খেলোয়াড়দের মানসিকতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং বিপর্যয় দেখে ভারতের কিংবদন্তি স্পিনার অনিল কুম্বলে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার অবসরের পর থেকে ক্রমাগতটিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে, আর সেই অস্থিরতা এখন ভারতের টেস্ট ক্রিকেটে বড় সঙ্কট তৈরি করেছে। প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর কিন্তু এতে বেশ চাপেই পড়েছে। কারণ এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয় বার ঘরের মাঠে সিরিজ় হারের মুখে দাঁড়িয়ে ভারত। সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁর আক্রমণাত্মক মানসিকতা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও এশিয়া কাপে সাফল্য এনে দিলেও, লালবলের ফরম্যাটে গল্পটা সম্পূর্ণ ভিন্ন- তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পারফরম্যান্স একেবারেই নিম্নমুখী।
কোহলি সরে দাঁড়ানোর পর শুবমান গিল নতুন অধিনায়ক হিসেবে চার নম্বরে চলে যান, ফলে তিন নম্বর জায়গায় শূন্যতা তৈরি হয়। সেই শূন্যতা পূরণে ভারত বারবার পরীক্ষা চালিয়েছে- কখনও করুণ নায়ার, কখনও সাই সুদর্শন, এমন কী ওয়াশিংটন সুন্দরকেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে তিনে নামানো হয়। কিন্তু এখনও স্থায়ী সমাধান মেলেনি।
গুয়াহাটিতে সুদর্শন একাদশে ফিরলে, সুন্দরকে নামানো হয় আট নম্বরে। সেখানে তিনি চাপের মুখে ৪৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন, কিন্তু ভারত মাত্র ২০১ রানে গুটিয়ে যায়। আপার এবং মিডল অর্ডারে চূড়ান্ত হতাশ করে।
কুম্বলে প্রথম ইনিংসে সুন্দরের সাহসী ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করে বলেন, চাপের মধ্যে তাঁর লড়াকু মানসিকতা দারুণ প্রভাব ফেলেছে। কিংবদন্তি স্পিনারের মতে, সুন্দরের আদর্শ জায়গা নিচের দিকেই- সাত বা আট নম্বরে, যেখানে তিনি প্রতিপক্ষকে সর্বাধিক আঘাত করতে পারেন। তিনি কুলদীপ যাদবের সঙ্গে সুন্দরের জুটির বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন, যা সম্ভাব্য ফলো-অনকে বিলম্বিত করেছিল।
কুম্বলে বলেন, ‘সুন্দরকে আগের ম্যাচে উপরে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমার মতে ওর সঠিক অবস্থান সাত বা আট নম্বর। এখানেই ও প্রতিপক্ষকে সবচেয়ে ভালো ভাবে আঘাত করতে পারবে। টপ অর্ডারকে অবশ্যই ভালো খেলতে হবে। তবে আমি মনে করি, সুন্দর অনেক সাহস দেখিয়েছে, উইকেটে থেকে কুলদীপের সঙ্গে ভালো পার্টনারশিপ গড়েছে। না হলে তেম্বা বাভুমা হয়তো ফলো-অন করিয়ে দিতেন।’
কুম্বলে আরও স্পষ্ট করে বলেন, ভারত শুভমান গিলকে মিস করছে, শুধু অধিনায়ক হিসেবে নয়, বরং আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে একজন ব্যাটার হিসেবে। তিনি ভারতের টেস্ট ব্যাটিং অর্ডারের অস্থিরতা তুলে ধরে বলেন, গত কয়েক বছরে শীর্ষ পাঁচে বড় পরিবর্তন হয়েছে। কোহলি, রোহিত, চেতেশ্বর পূজারা অবসর নিয়েছেন, অজিঙ্কা রাহানে আর দলে নেই, আর শুবমানও অনুপস্থিত।
কুম্বলের দাবি, ‘গত তিন-চার বছরে শীর্ষ পাঁচে চার জন ব্যাটার হয় অবসর নিয়েছেন, নয়তো বাদ পড়েছেন। কোহলি, রোহিত, পূজারা, রাহানে— চার জনই নেই। তার উপর শুবমানও নেই। তাই একটি ঠিকঠাক লাইন-আপ দরকার। নির্বাচিতদের ধারাবাহিক সুযোগ দিতে হবে।’
অতীতে ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে কাজ করা কুম্বলে সতর্ক করে দেন, ব্যাটিং অর্ডারে ক্রমাগত পরিবর্তন খেলোয়াড়দের মানসিকতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেওছেন, ‘হ্যাঁ, ওরা ভালো খেলবে, খারাপ দিনও আসবে। ছয়-সাত-আট টেস্ট ধরে ওদের সমর্থন করতে হবে। কিন্তু শেষ ১০-১২ টেস্টে টপ অর্ডারে অনেক ওঠানামা হয়েছে। এত পরিবর্তন খেলোয়াড়দের জন্যও অস্বস্তিকর। প্রচেষ্টা আরও ভালো হওয়া উচিত ছিল।’
টিজে/টিয়ে